রাসায়নিক সারের ব্যবহার ৯০-১০০% কমিয়ে এনে, পেস্টিসাইড এবং ফান্জিসাইডের ব্যবহার ছাড়াই এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে টমেটো চাষে গবেষণা করছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজিজুল হক। প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থায় যে পরিমাণ কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে কীটনাশকের ব্যবহার অর্ধেকে কমিয়েও প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
গবেষক ড. আজিজুল হকের গবেষণা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগে চাষ করা টমেটোর গাছগুলো সাধারণভাবে কীটনাশক প্রয়োগে টমেটোর গাছগুলোর থেকে আকার আয়তনে অনেক বড় এবং অধিক সবুজ। সেই সাথে শাখা প্রশাখার আধিক্যের কারণে সাধারণ গাছের থেকে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করা গাছে টমেটোর ফলন প্রায় তিনগুণ এবং টমেটোর আকারও বড়। টমেটো চাষের উদ্দেশ্যে তিনি আইসোলেশনের মাধ্যমে এন্ডোফাইটিক ব্যাকটেরিয়া সংগ্রহ করে তা টমেটো গাছে স্প্রে করেন।
তার গবেষণা মতে, টমেটো চারা রোপণের পর যদি আর কোন রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে ব্যাকটেরিয়াগুলি গ্রুপ বা এককভাবে স্প্রে করা যায় তাহলে তা ইউরিয়া সারের ব্যবহার ৮০% পর্যন্ত কমিয়ে এনে ফলন বৃদ্ধি করে প্রায় দুই থেকে তিনগুণ। প্রয়োগ করা এসব ব্যাকটেরিয়া কীটনাশক খেয়ে বংশবৃদ্ধি করে এবং কীটনাশকের উচ্চ ঘনমাত্রা ৯০% পর্যন্ত কমিয়ে ফেলতে সক্ষম বলে তিনি মনে করেন।
গবেষণার বিষয়ে ড. আজিজুলের অধীনে এম.এস পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সুকুমার রায় বলেন, শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে টমেটো চাষ নিয়ে কাজ করছি। খুবই অল্প পরিমাণ রাসায়নিক সার ব্যবহার করলেও পেস্টিসাইড বা ফান্জিসাইড প্রয়োগ করা হয়নি। ফলে আমাদের এখানে যে টমেটো উৎপাদন হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অর্গানিক এবং মানুষের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
আরেক শিক্ষার্থী জহর কান্তি বলেন, আমরা যে ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করছি তা ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি গাছকে রোগ প্রতিরোধেও যথেষ্ট শক্তিশালী করে তুলছে। ফলে গাছ রোগাক্রান্ত কম হচ্ছে। এ কারণে রাসায়নিক সারের প্রয়োগও কমে আসছে। বর্তমান বিশ্ব কৃষির ক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লবের দিকে ঝুঁকছে অর্থাৎ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। এই গবেষণা সবুজ বিপ্লবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি।
ব্যাকটেরিয়া প্রয়োগ করে টমেটোর বীজ অঙ্কুরোদগম, চারা উৎপাদন, চারা রোপণ থেকে শুরু করে টমেটো ফলন পর্যন্ত সন্তোষজনক ফলাফল পেয়েছেন বলে জানান গবেষক ড. আজিজুল।
তিনি বলেন, এই গবেষণায় বাহুবলী ও বিপুল প্লাস জাতের উৎপাদন সাধারণ কৃষকের মাঠের তুলনায় দুই তিনগুণ বেশি বলে পর্যবেক্ষণ করেছি। বিগত বছরের গবেষণায় আমরা এটাও দেখেছি বাজারের টমেটোর স্বাদ এবং রঙের তুলনায় এই গবেষণায় উৎপাদিত টমেটোর স্বাদ এবং রং দুটোই তূলনামূলক ভালো। এবারের গবেষণায় হাইব্রিড সিডগুলো থেকে জেনারেশন লাইন তৈরি করেছি এবং যা কোন সেগরিগেশন ছাড়াই উত্তরোত্তর যে ফলন বৃদ্ধি তা এখনও অব্যাহত আছে। এই গবেষণার মাধ্যমে রাসায়নিকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি বীজের যে নিরাপত্তা তাও নিশ্চিত করতে পারবো এবং দেশেই উন্নতমানের বীজ তৈরি করতে সক্ষম হবো।
এই গবেষণা বিগত কয়েকবছর ধরে ইতিবাচক ফলাফল দেয়ায় কৃষকের মাঝেও ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আছে তার। তিনি বলেন, এরমধ্যেই আশপাশের গ্রামের দুইটি জায়গায় ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। সেখানেও দেখেছি এই পদ্ধতিতে দুই/তিন গুণ বেশি ফলন হয়েছে। এই পদ্ধতি মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে ফান্ডিংয়ের প্রয়োজন আছে। সেজন্য যথেষ্ট সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে পেরেছি। এখন আগ্রহী উদ্যোক্তা পেলেই কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো।