ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

টঙ্গির তামিরুল মিল্লাতের শিবির নেতাকে কোপালো ছাত্রদলের কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ১১:৩২ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার জেরে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী ক্যাম্পাস ছাত্রশিবিরের এক নেতাকে হাত ও মাথায় কুপিয়েছে সংগঠনটির একদল কর্মী। আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর মাদ্রাসাটির পার্শ্ববর্তী বাঁশতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনাস্থল থেকে মামুন নামে শাখা ছাত্রদলের এক কর্মীকে আটক করেছে উপস্থিত ছাত্র-জনতা। তিনি মাদ্রাসাটির আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বর্তমানে তিনি টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন থানাটির তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কানদার হাবিব।

অন্যদিকে, ভুক্তভোগী ফজলে রাব্বীও আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও মাদ্রাসাটির একটি ওয়ার্ডের ছাত্রশিবিরের সভাপতি। তারা দুইজন সহপাঠী বলে জানা গেছে।

জানা যায়, কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের সন্ত্রাসীদের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি পোস্ট দেন ফজলে রাব্বী। এ ঘটনায় আজ সন্ধ্যার পর তাকে মাদ্রাসাটির পাশে বাঁশতলা এলাকায় একটি ভবনে নিয়ে যান মামুনের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্রদল কর্মী। এসময় তার সঙ্গে ছিল মাহফুজ, বাদশা ফাহাদ, রাহাত, মাসুদ ও নাহিয়ান। এসময় পোস্টটি দেয়ার বিষয়ে তাকে জেরা করতে থাকেন তারা। জেরার সময় পরিবারকে ১০ হাজার টাকাও পাঠাতে বলেন তারা।

এক পর্যায়ে তারা মারধর শুরু করলে ফজলে রাব্বী চিৎকার দিলে কয়েকজন পথচারী ঘটনাস্থলে আসতে আসতে ফজলে রাব্বীকে ছুরি দিয়ে হাত ও মাথায় আঘাত করেন। এতে ফজলে রাব্বীর মাথায় আঘাত ছুরির কোপ লেগে রক্তাক্ত হলে পথচারী এসে তাকে উদ্ধার করেন। এসময় মামুন বাদে বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় এবং মামুনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর ফজলে রাব্বী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

আহত ফজলে রাব্বী জানান, অভিযুক্তরা ঝামেলা হয়েছে বলে আমাকে বাঁশতলা এলাকায় ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে একটি রুমে আগে থেকে কয়েকজন অবস্থান করছিলেন। তখন তারা আমাকে বলেন, আমি কেন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে পোস্ট করেছি, এ কথা বলতে বলতে তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাকে কোপায় তারা। আমি জীবন বাঁচাতে দৌড়ে পালিয়ে যাই।

এদিকে, ঘটনাস্থল থেকে মামুনকে আটক করার পর জেরা করেন উপস্থিতিরা। এসময় মামুন তাদেরকে বলেন, তার সঙ্গে রাব্বীর আগে কোনো ঝামেলা ছিল না। এসময় তাকে ছাত্রদল করে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ‘হ্যাঁ’ বলে উত্তর দেন। এসময় তিনি বলেন, আমরা তিনজন বিকেলে হাঁটতে বের হয়েছি। তারা সবাই ছাত্রদল করি।

জানতে চাইলে মাদ্রাসাটির সাবেক ছাত্র ও টঙ্গী পূর্ব থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ফজলে রাব্বী রাফসান জানান, আমি ঘটনার বিস্তারিত জানি না। তবে মাদ্রাসাটির সাবেক ছাত্র হওয়ায় আমাকে অনেকে ঘটনাটি জানতে ফোন করেছেন।


‘‘তবে আমি যতটুকু শুনেছি, তারা একই ব্যাচের। মারামারি করছে মেয়েঘটিত কারণ নিয়ে। তবে মাদ্রাসা থেকে অনেকেই ঘটনাটি ছাত্রদল-শিবির বলে এখন চালিয়ে দিচ্ছেন।’’

ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে অভিযুক্তের ছবি রয়েছে, এমন প্রশ্নে তিনি জানান, অনুষ্ঠানে তো অনেকেই যায়, তবে দেখতে হবে সে নেতা নাকি কর্মী। বিস্তারিত না জানলে তো আমি আর জানি না। এসময় তিনি মামুনকে চেনেন না বলে জানান তিনি। তবে মাদ্রাসাটির একটি সূত্রে জানায়, মামুনকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেন ফজলে রাব্বী রাফসান।


তবে টঙ্গী পশ্চিম থানা থানাটির তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কানদার হাবিব জানান, উত্তেজিত জনতা তাকে আটক করলে থানা পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। যেহেতু ঘটনাটি টঙ্গী পূর্ব থানায়, সেহেতু তাকে সেখানে হস্তান্তর করা হবে।

তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা টঙ্গী ক্যাম্পাস ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি সাইদুল ইসলাম জানান, তাকে ডেকে নিয়ে কোপানোর পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে অভিযুক্তরা। পরে স্থানীয়রা অভিযুক্ত একজনকে আটক করে। আহত শিক্ষার্থী রাব্বি শিবিরের দায়িত্বশীল। ঘটনায় জড়িতরা সবাই ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় মামলা করবে বলে তিনি জানান।