ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ইবিতে শিক্ষার্থীদের সেবা দিচ্ছে কর্মকর্তাদের বাস

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০১:৪৫ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরদের সেবা দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবা দেয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের নিজস্ব বাসগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে ৫২ আসনের ১৩ টি বাস এবং ৫ টি মিনিবাস আছে, যার অধিকাংশ বরাদ্দ আছে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আনা নেওয়ার কাজে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বাসের তীব্র সংকট। পাশাপাশি রয়েছে ভাড়ায় চালিত ফিটনেসবিহীন বাসে ছাত্রছাত্রী পরিবহনের গুরুতর অভিযোগ। সম্প্রতি ভাড়া বাস উল্টে ২০ শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় এসব প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে বর্তমানে পরিবহন রয়েছে মোট ৪৬টি। এর মধ্যে এসি বাস ১টি, ৩০ সিটের কোস্টার ৭টি, ১টি নিজস্ব ডাবল ডেকার, ১৩ টি ৫২ সিটের নন এসি বাস, ৫টি করে মিনিবাস ও মাইক্রো এবং ২টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।

এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য ভাড়াকৃত ৯টি ডাবল ডেকার বাস এবং ১৯ টি বাস রয়েছে, যার মধ্যে কুষ্টিয়া রুটে ১০টি, ঝিনাইদহ রুটে ৯টি এবং শৈলকূপা রুটে চারটি বাস চলাচল করে। ভাড়ায়চালিত এসব বাসের ফিটনেস নিয়ে যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের। 
বাসের বডি ভাঙা, সিট কাভার না থাকা, গ্লাস ভাঙা, ফ্যান না থাকা, সিট ভাঙা ছাড়াও রয়েছে অদক্ষ চালক দিয়ে ট্রিপ দেওয়ানোর অভিযোগ। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে লোকাল যাত্রী তোলা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

শিক্ষার্থীদের পরিবহনের যেখানে এত দূরবস্থা সেখানে বেশ রমরমা অবস্থা কর্মকর্তা কর্মচারীদের। ৫২ সিটের ১৩ টি বাসের ২টি নষ্ট থাকলেও বাকি ১১টি এবং মিনিবাসগুলো নিয়মিত চলছে। এরমধ্যে বাতায়ন, বিলাস, অমর একুশে ও প্রান্তিক কুষ্টিয়া রুটে ছাত্রীদের বহন করে। এর বাইরে অত্যাধুনিক বাস দুর্বার, বিজয় ৭১, আবাহন, স্পন্দন কুষ্টিয়ার নিশান মোড়, জেলখানা মোড় রুটে এবং মুক্ত বাংলা ঝিনাইদহ রুটে নিয়োজিত আছে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বহনের কাজে। এ ছাড়া নিজস্ব পুরাতন বাসের মধ্যেও যোগাযোগ, কুহেলিকা, আরণ্যক, ধরনী, বলাকা নামক বাস গুলোও মূলত কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও শৈলকূপা রুটে কর্মকর্তা কর্মচারীদের পরিবহন করে থাকে।

জানা যায়, এসব বাস সকাল ৮ টার দিকে আসার সময় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বহন করে নিয়ে আসে। এরপর দুপুর ২টার ট্রিপে ভাড়ায় চালিত বাসে জায়গা না হলে শিক্ষার্থীদের সেবা দেয়। এরপর আবার বিকেল ৪টায় অফিস শেষে আবারো কর্মকর্তা কর্মচারীদের বহন করে নিয়ে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। ২০১৯ এবং ২০২২ সালে কেনা অত্যাধুনিক বাসগুলো ৫২ সিটের হলেও হরহামেশাই প্রায় অর্ধেক সিট ফাঁকা রেখেই ক্যাম্পাস ছাড়তে দেখা যায় বাসগুলোকে। সিট ফাঁকা থাকলেও উঠতে দেওয়া হয় না শিক্ষার্থীদের।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বাস না থাকায় বাসে সিট পাওয়া ত দূরের কথা, পা ফেলার মতোও জায়গা থাকে না বেশিরভাগ দিন। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গেটে ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করতে হয় তাদের। বারংবার বাসের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানানোর পরেও সমাধান না হওয়ায় সমাধানের আশাই ছেড়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলেও বাসগুলো আসলে শিক্ষার্থীদের জন্য না। আপনার জন্য রয়েছে সুহাইল, শানেখোদা, সানজানি, আরএম, বিবিএস সহ বিভিন্ন বাস কোম্পানির আয়ুষ্কাল কাল শেষ করা মেয়াদোত্তীর্ণ বাস। ইউজিসি থেকে বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষার্থী জন্য ক্রয় করা বাসগুলো ব্যাবহার করছেন কর্মকর্তারা। যদি কোন কারণে শিক্ষার্থীরা মুড়ির টিন বাস মিস করে নিজস্ব বাসে ওঠার চেষ্টা করে তখন সংবিধান হাজির করা হয় যে এই বাস তো শিক্ষার্থীদের না। কোনভাবে যদি বাসে ওঠেও কেউ, তাকে রীতিমতো ট্রলের শিকার হয়ে ২৪ কিলোমিটার রাস্তা পারি দিতে হয়। কর্মকর্তা কর্মচারীদের সেবা দেওয়ার পরে সান্ত্বনা ট্রিপ হিসেবে মাঝে মধ্যে দুপুরে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়।

অপর শিক্ষার্থী শেখ মামুন বলেন, দুপুর ২টার বাসে সিংহভাগ শিক্ষার্থীর ক্লাস শেষে শহরে যায়৷ এতো পরিমাণ শিক্ষার্থীর চাপ হয় যে ডাবল ডেকারের দরজা ধরে ঝুলে ঝুলে আমরা বাড়ি যাই৷ এই সময় দেখা যায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাস মোট সিটের অর্ধেক বা ৬০% যাত্রী নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। দরজায় ঝুলতে থাকা কেও যদি দৌড়ে যেয়ে ওই বাসে ওঠার চেষ্টা করে তার দিকে এমন চোখে তাকানো হয় যেন অবৈধ কোন জিনিস সে চেয়ে ফেলেছে৷ কোন শিক্ষক কর্মকর্তা আমাদের বাসে যেতে চাইলে আমরা ঠিকি তাদের সম্মান দেখিয়ে সিট ছেড়ে দেই কিন্তু আমাদের জন্য স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা আমাদের নুন্যতম সম্মান দেয় না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি এবং পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, আমরা সংস্কারে উদ্যোগী৷ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন স্টেকহোল্ডার, ভালো বাসগুলো ছাত্রদের জন্য থাকবে আমরা এই নীতিতে আছি। তবে পরিবহন ফি ছাত্ররা যেমন দেয়, শিক্ষক কর্মকর্তারাও ফি দেয়৷ সবাই সমান ফি দিলে শিক্ষার্থীদের কপালেই কেন সবসময় ভাড়ায়চালিত বাস জোটে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা শিক্ষার্থীদের দাবি থাকতে পারে যে নিজস্ব ও ভাড়ায় চালিত বাসের সুষ্ঠু বণ্টন। আমরা বিষয়টা পরিচালনা কমিটিতে উঠাবো যে একই ভাড়া দিয়ে কেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিজস্ব বাসে যায় আর শিক্ষার্থীরা সবসময়ই ভাড়া বাসে যায়। ফ্যাসিস্ট আমলের সিস্টেমগুলোও ছিল ফ্যাসিস্ট কায়দায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত কাজ করবো।