ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

কোন কোটায় নিয়োগ পেলেন রাবির তথ্য অফিসার : প্রশ্ন শিক্ষার্থীর

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৪:১৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে অনুসন্ধান কাম-তথ্য অফিসার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ রাশেদুল ইসলাম ওরফে রাশেদ রাজন।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে এ নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা করতে থাকেন বিভিন্ন জন। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাকে কোনো কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।আদেশে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ দপ্তরে টাকা ২২,০০০-৫৩০৬০/- বেতন স্কেলে মাসিক টাকা ২৩,১০০/- (তেইশ হাজার একশত) টাকা মাত্র বেতনে অনুসন্ধান কাম-তথ্য অফিসার পদে অ্যাডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য নিয়োগ করা হলো।

এ নিয়োগ যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। নিয়োগপ্রাপ্ত রাশেদুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষায় ২.৭৭৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। একই বিভাগ থেকে তিনি ২০২০ সালে ৩.০৭ পেয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাসা রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায়।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত ২৯ জুলাই রাজশাহী নগরের কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন রাশেদুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যায়। পরে ৩১ জুলাই তাকে বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগাওে পাঠানো হয়। 

গত ৫ আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে তিনি মুক্তি পান। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক সমন্বয়ক।

তবে প্রশাসন তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে এ নিয়োগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি রাকিব হোসেন বলেন, এটি একটি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন- রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সোবহান নিয়োগ দিত ছাত্রলীগের ছেলেদের। বর্তমান উপাচার্য নিয়োগ দিলেন জুলাই অভ্যুত্থানে রাবি থেকে অংশগ্রহণকারী আলোচনায় থাকা সাবেক এক শিক্ষার্থীকে। 

‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপে আহসান হাবিব নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন- সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দুই হাজারের বেশি মানুষের জীবন দিয়ে লাভ কী হলো? মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিলোপ করে আবার সমন্বয়ক কোটা চালু করা হলো।

কোনো বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়াই কিভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পায় তাহলে তার বিষয়টি বিশেষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। তাকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা সেটি দেখতে হবে। আর এত তড়িঘড়ি করে নিয়োগই দিতে হবে কেন?

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব তার নিয়োগ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আমি বিশ্বাস করি, মিডিয়ার ব্যাপারে তার যে জানা ও অভিজ্ঞতা রয়েছে সেই জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। আমি আমার বিবেচনায় রাশেদ রাজনকে নিয়োগ দিয়েছি। আমার ধারণা তিনি তার যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবেন।