বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ চায় পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা বলে জানান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর দপ্তর সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন রুদ্র।
তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। দেশে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। তবে, প্রায় ১০-১৫ শতাংশ (শিক্ষার্থী) ডিপ্লোমা বা সমমানের কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে। যাদের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।
যাদের মধ্যে অনেক সম্ভাবনাময় ও মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছে। ডিপ্লোমা প্রকৌশল শিক্ষা সমাপ্ত করার পর তাদের উচ্চতর শিক্ষার প্রয়োজন হয়। তবে, দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় প্রায়শই তারা বঞ্চিত হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, শিক্ষা লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা। জীবনব্যাপী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকা উচিত। আমাদের দেশেও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন খুবই সীমিত।
বর্তমানে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং অন্যান্য বেসরকারি ইনস্টিটিউটসহ বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর লক্ষাধিক শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির যোগ্যতা হচ্ছে এইচএসসি অথবা সমমান। এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে এইচএসসি দুই বছর পেরিয়ে গেলে কোনও শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়না। ফলে, পলিটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারে না। একমাত্র ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)-এ ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ দেয়া হয় এবং সেখানে মাত্র ৬৭০টি আসন রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমাধারীদের ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেয়া হলেও সেখানেও নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতেই ভর্তি হতে হয়, যেটি একজন ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর পছন্দসই নাও হতে পারে। ফলে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে, বলে জানান তিনি।
রুদ্র বলেন, এই পরিস্থিতিতে, পলিটেকনিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ টিউশন ফি বহন করা অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় না, কারণ তাদের অধিকাংশই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
তিনি দাবি করেন, ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীরা উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণদের তুলনায় বেশি ক্রেডিট সম্পন্ন করে এবং তাদের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানও সাধারণত বেশি থাকে। তাদের প্রকৌশল, কৃষি বা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাওয়া ন্যায্য। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর ৯ নং অনুচ্ছেদেও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষার সুযোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই নীতির বাস্তবায়ন এখনো করা হয়নি।
তিনি জানান, ২০২১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অর্থাৎ জিএসটি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হয়। অভিজ্ঞ মহল আশা করেছিল এখানে ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হবে। কিন্তু সেখানে ডিপ্লোমা উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি, যা হতাশাজনক।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত আসন সৃষ্টি করা ও অন্যান্য প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ করে দেয়া সময়ের দাবি। এটি কেবল তাদের অধিকার নয়, দেশের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার জন্যও অপরিহার্য। সরকারের উচিত এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা, বলে দাবি করেন শাখাওয়াত হোসেন রুদ্র।
আপনার মতামত লিখুন :