অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গণ-অভ্যুত্থানের ফসল, কিন্তু নেতা নন বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, ‘ড. ইউনূস মহাভুল করেছেন। তিনি আমাদের জুলাই আন্দোলনের ঘোষণাপত্র দিতে দেননি। আমাদের হাতে কোনো ‘বিপ্লবী দলিল’ নেই। আগামী দিনে এর ফলাফল জনতাকে ভোগ করতে হবে।’
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘গণ-অভ্যুত্থান : বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সেন্টার ফর হেরিটেজ স্টাডিজ এ সভা আয়োজন করে।
গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র না থাকায় আমরা দুর্বল হয়েছি উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এ অভ্যুত্থানের গণ-অভিপ্রায় হচ্ছে গণ-সার্বভৌমত্ব। এর প্রথম ধাপ হবে সংবিধানে গণ-সার্বভৌমত্ব উল্লেখ করা। কিন্তু হাসিনার সংবিধানটাই ছুড়ে ফেলতে পারিনি।’
‘এর বদলে কয়েকটি সংস্কার কমিশন করেছি। নেতৃত্বে যারা ছিলেন, তারা অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। কমিশনগুলো জনগণের কাছ থেকে কথা শোনেনি। ক্রমশ দুর্বল হয়েছি। ফলে যারা আপনাদের অশান্তিতে রেখেছে, তাদের বিচার করতে পারবেন না। গণ-সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে নতুন স্বাধীন গঠনতন্ত্র লাগবে।’
রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বকে বাতিল করে জনগণের সার্বভৌমত্বকে মূল্যায়ন করার দাবি জানিয়ে এ রাষ্ট্রচিন্তক বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধান বাংলাদেশের জনগণ প্রণয়ন করেনি। যারা পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ণের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল, তারাই আমাদের ওপর তাদের সেই সংবিধান চাপিয়ে দিয়েছিল।’
‘একাত্তরের ১০ এপ্রিলের ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার বাদ দিয়ে তারা ‘সমাজতন্ত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-সহ ৪টি মূলনীতি করেছিল। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের অধিকার আছে, কী চাই সেটা পরিষ্কার করে বলা। এ সংবিধানকে বাতিল করে জনতার অভিপ্রায়ের নতুন গঠনতন্ত্র চাই।’
গণ-সার্বভৌমত্বের নতুন সংবিধানে ৩টি বিষয় উল্লেখ করার দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘প্রথমত, রাষ্ট্র এমন আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না, যাতে জনগণের ব্যক্তিস্বার্থ ও মর্যাদা নষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করবে- এমন আইন বা নীতি রাষ্ট্র গ্রহণ করতে পারবে না। তৃতীয়ত, রাষ্ট্র এমন কোনো আইন বা নীতি গ্রহণ করতে পারবে না, যেন জীবন ও জীবিকা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সেখানে ধর্মের প্রসঙ্গে কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা আধুনিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে ইসলামের খোঁজ করি। আধুনিক রাষ্ট্র ক্যাপিটাল দিয়ে চলে। সারাক্ষণ ক্যাপিটালের অধীনে থাকি।’
‘পুঁজিবাদের অধীনে থেকে ধর্ম প্রতিষ্ঠা হবে না। আগামী দিনের লড়াই হবে এ পুঁজির বিরুদ্ধে। লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদে বিভক্ত করে আলাদা হওয়া যাবে না। কারণ দুনিয়াতে জাতীয়তাবাদের যুগ শেষ হয়ে গেছে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসঊদ।
প্রধান অতিথি ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী।
আপনার মতামত লিখুন :