বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর মিরপুরে বিএনপি কর্মী মাহফুজ আলম শ্রাবণ (২১) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জনপ্রিয় অভিনেতা ইরেশ যাকেরসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়।
এদিকে, ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলার খবরে উত্তাল সাংস্কৃতিক অঙ্গন। যাঁরা জুলাই আন্দোলনের সময় ইরেশের পাশে ছিলেন, তাঁরা অভিযোগটিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেন।
নির্মাতা আশফাক নিপুন বলেন, ‘১ আগস্ট ফার্মগেটে আমি, ইরেশ ও মীম পুরোদিন ছিলাম। ওরা তখন সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। হত্যা মামলায় তার নাম আসাটা অবিশ্বাস্য।’
অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘৪ আগস্ট কারফিউর রাতে ইরেশ আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন। তিনি ছাত্রদের পাশেই ছিলেন, গণভবনে যাননি।’
চরকির সিইও রেদওয়ান রনি ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘আন্দোলনের কর্মীকে হত্যা মামলায় আসামি করা উদ্দেশ্যমূলক।’
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা মন্তব্য করেন, ‘প্রথমে দুর্নীতির অভিযোগ, এখন হত্যা মামলা! এটি যে সাজানো নাটক, তা স্পষ্ট।’
সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সতর্ক করে বলেন, ‘রাষ্ট্র নয়, ব্যক্তিগত কেউ মামলা করেছেন। সঠিক তদন্ত হলে সত্য প্রকাশ পাবে।’
প্রসঙ্গত, মামলার পাশাপাশি ইরেশ যাকেরের প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক ৩৬০-এর ব্যাংক হিসাব কর ফাঁকির অভিযোগে জব্দ করা হয়।
দেশজুড়ে চলছে এ মামলা নিয়ে সমালোচনার ঝড়। অনেকের মতে, ‘ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে।’ ন্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থা হারানোর আশঙ্কাও অনেকের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ২০ এপ্রিল নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পী মামলার আবেদন করেন। ওই দিন আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে মিরপুর মডেল থানার ওসিকে নিয়মিত মামলা হিসেবে নিতে নির্দেশ দেন।
মামলায় সাবেক এমপি-মন্ত্রী, ঢাকার দুই সাবেক মেয়র, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, নির্বাচন কমিশনার, আইনজীবী ও অভিনেতাদের নাম উল্লেখ করা হয়ে। ইরেশ যাকের রয়েছেন ১৫৭ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি হিসেবে।
মামলার অভিযোগে বাদী উল্লেখ করেন, তার ছোট ভাই শ্রাবণ রেনেটা কোম্পানিতে ক্যাজুয়াল কর্মী হিসেবে কাজ করতেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন।
৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে ছাত্র-জনতার একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল মিরপুর শপিং কমপ্লেক্স ও মডেল থানার মাঝখানের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় আসামিদের নির্দেশে পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী হামলা চালান।
সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট, রাইফেল, শটগান, পিস্তল দিয়ে গুলি বর্ষণ এবং ককটেল-হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় বলে অভিযোগে বলা হয়।
এ সময় গুলিতে শ্রাবণের বুকের বাম পাশে আঘাত লাগে, যা কোমর ছিদ্র করে বের হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। পরে রিকশাযোগে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বাদীর ভাষ্য, ঘটনাস্থলে আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হন।