‘সব সখিরে পার করিতে নেব আনা আনা, তোমার বেলায় নেব সখি তোমার কানের সোনা’—বাংলা চলচ্চিত্রের এই কালজয়ী গানের চিত্র যখন মনে পড়ে, তখন অবলীলায় চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক সুদর্শন যুবকের কথা। তিনি নায়ক ফারুক। বাংলা চলচ্চিত্রের সাদাকালো যুগের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় নায়ক তিনি। চলচ্চিত্রের মানুষজনের কাছে ফারুক ‘মিয়া ভাই’ নামেও পরিচিত। চার দশকের বেশি সময় ধরে তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আজ বরেণ্য এই অভিনেতার জন্মদিন।
নায়ক ফারুকের পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান দুলু। তিনি শুধু একজন অভিনেতাই নন, প্রযোজক ও ব্যবসায়ী হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক। তার বাবা আজগার হোসেন পাঠান। এ নায়কের শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
স্কুল জীবন থেকেই ফারুক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ সিনেমার মাধ্যমে। এতে তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন কবরী। ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ নামের দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক।
নায়ক হিসেবে ফারুক আলোচনায় আসেন ১৯৭৫ সালে গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত ‘সুজন সখী’ ও ‘লাঠিয়াল’ সিনেমা দুটির মাধ্যমে। এই দুটি সিনেমাই ব্যবসাসফল ও দর্শকনন্দিত হয়েছিল। এমনকি সেই বছর ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ফারুক।
মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ছিলেন ফারুক। দীর্ঘদিন কিডনি ও মস্তিষ্কজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন বরেণ্য এই অভিনেতা। এছাড়া তার রক্তে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও ধরা পড়ে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার। মৃত্যুর কাছে হার মেনে ২০২৩ সালের ১৫ মে মারা গেছেন তিনি। দীর্ঘ আট বছর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন এই অভিনেতা। ফারুকবিহীন দ্বিতীয় জন্মদিন আজ।
দেশের চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ২০১৬ সালে ফারুককে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। ব্যক্তিগত জীবনে ফারুক বিয়ে করেন ফারজানা পাঠানকে। ফারিহা তাবাসসুম পাঠান ও রওশন হোসেন নামে তাদের দুই সন্তান রয়েছে। চলচ্চিত্র জীবনের বাইরে নায়ক ফারুকের আরও দুটি পরিচয় রয়েছে। তিনি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। গাজীপুরে ফারুকের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া তিনি ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ফারুক অভিনীত অন্যান্য সিনেমাগুলোর মধ্যে—‘সূর্যগ্রহণ’, ‘মাটির মায়া’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘নাগরদোলা’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘কথা দিলাম’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব’, ‘ছোট মা’, ‘এতিম’, ‘ঘরজামাই’, ‘সখী তুমি কার’, ‘মিয়া ভাই’, ‘দাঙ্গা ফ্যাসাদ’, ‘পালকি’, ‘ভাই ভাই’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘জীবন সংসার’, ‘এখনো অনেক রাত’, ‘কোটি টাকার কাবিন’ ও ‘দাদি মা’ উল্লেখযোগ্য।
আপনার মতামত লিখুন :