ঘটনাটি ২৭ বছর আগের। ১৯৯৫ সালের ২৩ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে রাতে ঠাকুরগাঁওগামী বাসে দিনাজপুরের উদ্দেশে আসে ইয়াসমিন নামে এক কিশোরী। বাসের স্টাফরা ভোররাতে তাকে দিনাজপুর-দশমাইল মোড়ে এক চায়ের দোকানদারের জিম্মায় দিয়ে সকাল হলে দিনাজপুরগামী বাসে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর কোতোয়ালি পুলিশের টহল পিকআপ আসে।
বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জোর করে মেয়েটিকে পিকআপে তুলে নেয়। পথে কিশোরীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয় মহাসড়কে। এ ঘটনা কেন্দ্র করে সৃষ্ট দিনাজপুরবাসীর প্রতিবাদ আন্দোলনে ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট দিনাজপুর ছিল উত্তাল। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সাত আন্দোলনকারী। আহত হন দুই শতাধিক। দিনাজপুরসহ সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
সেই ইয়াসমিনের চরিত্রে অভিনয় করবেন চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম। সিনেমার নাম রাখা হয়েছে ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’। গত বছর এসেছিল খবরটি। শিগগিরই শুটিং করার কথা জানিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। এবার জানা গেলসিনেমাটির কাজ আটকে দিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ওরফে ডিবি হারুন। সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানিয়েছেন পরিচালক সুমন ধর নিজেই।
সুমন জানান, একদিন অচেনা এক ফোন নাম্বার থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডিবি হারুন। তবে তা জায়েদ খানের মাধ্যমে। জায়েদই সুমনকে নিয়ে গিয়েছিলেন হারুনের অফিসে।
সুমনের কথায়, কণ্ঠ শুনে বুঝলাম, জায়েদ (খান) ভাই। আগের দিনও তিনি ফোন করেছিলেন। ফোন করে জায়েদ ভাই আমাকে বললেন, আপনাকে আমার সঙ্গে একটু হারুন (ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন প্রধান হারুন অর রশীদ) ভাইয়ের ওখানে যেতে হবে। কেন যেন আপনাকে ডাকছেন। আমি যেহেতু চলচ্চিত্রের মানুষ, তাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। পরদিন আমি গেলাম, কয়েক মিনিটের ব্যবধানে জায়েদ ভাইও ঢুকলেন। দেখলাম, হারুন সাহেব তার রুমে বসা। তার টিমও আছে। সালাম দেওয়ার পর আমাকে প্রশ্ন করলেন, কী অবস্থা? শুনলাম, আপনি একটা সিনেমা করছেন, আমি ইয়াসমিন বলছি? বললাম, হ্যাঁ করছি। তিনি বললেন, এটা নিয়ে অনেক কথাবার্তা আছে। এই সিনেমা আসলে করা যাবে না। আমাদের এখানে বড় বড় আরও শক্তিশালী গল্প আছে। ওগুলো আপনাকে দিই, সেখান থেকে করেন।
সুমন বলেন, বললাম—এই সিনেমার পেছনে আমি অনেক পরিশ্রম করেছি। সেই ২০১৭ সাল থেকে লেগে আছি। যেহেতু সত্যি গল্প, সিনেমার মধ্যে যেন সবটুকু সঠিকভাবে উঠে আসে, তার জন্য অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। নিজেরও টাকা বিনিয়োগ আছে, প্রযোজকেরও আছে। সবচেয়ে বড় কথা, সিনেমাটা বানাব বলেই ওই সময় নাটক বানানো কমিয়ে দিই। টুকটাক যে বিজ্ঞাপনচিত্র বানাতাম, তা–ও বন্ধ করে দিই। সিনেমাটা না হলে অর্থনৈতিকভাবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। নাছোড়বান্দা হারুন ভাই এটুকু বললেন, এই সিনেমা করা যাবে না। তিনি যে আমার সঙ্গে খুব রাগী গলায় কথা বলেছেন, তা নয়। এরপর তার সহকারীকে ডেকে বললেন, আমাদের কাছে ভালো ভালো গল্প আছে, সেগুলো সুমনের সঙ্গে শেয়ার করেন। সুমন যেটা পছন্দ করবেন, সেটা করবেন। আর সুমনের যদি স্পনসর প্রয়োজন হয়, আমরা জোগাড় করে দেব।
শুধু সুমনকে না, মিমকেও সিনেমাটি থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন হারুন। মিমের কথায়, হোয়াটসঅ্যাপে কল দেখে একটু ঘাবড়ে যাই। তিনি (হারুন অর রশীদ) কেন আমাকে ফোন করবেন? ভাবতেও পারিনি যে আমার কাছে এমন একটি ফোনকল সেদিন আসবে আর বলা হবে যে সিনেমাটিতে অভিনয় করতে পারব না। যখন তিনি বললেন, তোমার পরিচালক আমার সামনে বসা, তখন বুঝতে বাকি থাকেনি যে সিনেমাটা বোধ হয় আর হবে না। পরিচালক বের হওয়ার পর ফোন করে তা নিশ্চিত হই। সব মিলিয়ে মনটা খুব খারাপ হয়। শিল্পীর জীবনে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ সবসময় আসে না। আসার পর যখন আবার তা থেকে বঞ্চিত হতে হয়, তখন মন খারাপ হয়।
এদিকে, নতুন খবর হচ্ছে হারুনের কারণে আটকে থাকা ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ নামের সিনেমাটির কাজ ফের শুরু হচ্ছে। পরিবেশ অনুকূলে এলেই জ্বালাবেন লাইট, ক্যামেরা।
আপনার মতামত লিখুন :