ঘরোয়া বিনোদনের জগতে এখন ওটিটির দুর্দান্ত দাপট চলছে। আগের মতো মানুষ সিনেমা হলে গিয়ে তাদের পছন্দের সিনেমাটি দেখতে আর অস্থির হচ্ছে না। করোনা মহামারির পর থেকে সিনেমা হলগুলোতে আর দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মানুষ এখন এমনিতেই ভীষণ ব্যস্ত সময় কাটায় তার কর্মক্ষেত্রে, ব্যবসা বাণিজ্যে। টিকিট কেটে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার মতো সময় বের করা এখন অনেক কঠিন তাদের জন্য। বিনোদনপ্রেমীরা এখন অবসর সময়ে ঘরে বসে ওটিটিতে মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন নতুন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখতে বেশি পছন্দ করছেন। নিত্য নতুন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ আসছে বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।
নির্মাতারাও আজকাল সিনেমা হল থেকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তাদের নতুন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, ফিল্ম মুক্তি দিতে বেশি উৎসাহী। এ সপ্তাহে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে বলিউডের সুন্দরী তন্বী অভিনেত্রী অনন্যা পান্ডে অভিনীত বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের থ্রিলার ধাঁচের সিনেমা ‘সিটিআরএল’। এই সিনেমাটি প্রথমেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে। অনন্যার সিনেমা এর আগে সিনেমা হলে মুক্তি পেলেও এবার সরাসরি এলো ওটিটিতে। এর আগে অনন্যার আরও অনেক সিনেমা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রথমে মুক্তি পেয়েছে।
অনন্যা এবার ওয়েব সিরিজের দুনিয়ায়ও পা রেখেছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আমাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে তার কমেডি ড্রামা সিরিজ ‘কল মি বে’। যেখানে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ৮ পর্বের এই কমেডি ওয়েব সিরিজটিতে অনন্যার সঙ্গে আরও অভিনয় করেছেন বলিউডের বেশ কিছু নামিদামি অভিনয় শিল্পী।
কমেডি সিরিজ ‘কল মি বে’তে নয়াদিল্লির মেয়ে ‘বে’ চরিত্রে দেখা গেছে অনন্যাকে। সেখানে দেখানো হয়েছে ‘বে’ বিলাসবহুল জীবনযাপন করে। কিন্তু কিছু কারণে তার এই জগতটি হঠাৎ ভেঙে পড়ে, পরিবার তাকে অস্বীকার করে। তারপর মুম্বাইয়ের ব্যস্ত রাস্তায় ‘বে’ কে দেখা যায়। সেখান থেকেই শুরু হয় তার নতুন জীবন। আসতে থাকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। ‘কল মি বে’ সিরিজে অনন্যা দিল্লির এক অভিজাত পরিবারের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যাকে ভাগ্যচক্রে মেয়েটি মুম্বাইয়ে এসে এক সাধারণ মধ্যবিত্তের মতো জীবন অতিবাহিত করতে হয়।
সিরিজটি নিয়ে অনন্যা বলেন, ‘একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে বে’র মতো বহু স্তরের চরিত্রে অভিনয় করা সত্যি রোমাঞ্চকর।’ সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী কথা বলেন তার সংগ্রাম নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘আমি ক্যারিয়ারে সুযোগ পেতে কোনো সংগ্রাম করিনি। শুধু ভালো কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই, মাথা নিচু করে নিজের মতো কাজ করে যেতে। দর্শক যাতে আমার কাজ পছন্দ করেন।’
একের পর এক ফ্লপ আর দুর্বল অভিনয়ের কারণে বারবার সমালোচিত হয়েছেন অনন্যা। তবে গত বছর থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। হালে পরপর প্রশংসিত দুই ওয়েব সিরিজ ও সিনেমা ‘কল মি বে’ এবং ‘সিটিআরএল’ এ দেখা গেছে তাকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অবশেষে অনন্যা পথ খুঁজে পেয়েছেন। ‘গেহরাইয়া’, ‘খো গায়ে হাম কাঁহা’র পর সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানের সিনেমা ‘সিটিআরএল’ দিয়ে আলোচিত হয়েছেন তিনি।
এর আগে মুক্তি পেয়েছে তার প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘কল মি বে’। করণ জোহর প্রযোজিত সিরিজটি মুক্তির আগে অভিনেত্রী জানিয়েছিলেন, আপাতত মাথা নিচু করে কাজ করে যেতে চান তিনি। ‘খো গায়ে হাম কাঁহা’ সিনেমার গল্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আর তিন বন্ধুকে ঘিরে বোনা হয়েছে। এ সিনেমাতে ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে থাকা মুম্বাইয়ের কিছু যুবক-যুবতীর গল্প উঠে এসেছে। যেখানে মিশে রয়েছে রোম্যান্স, প্রত্যাশা, উচ্চ আকাঙ্ক্ষা, ব্রেকআপ, বিচ্ছেদ, প্রতারণা এবং সোশ্যাল মিডিয়া। যার সঙ্গে এই যুগের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের ভীষণভাবে মেলাতে পেরেছেন।
সিনেমাটিতে অনন্যা ছাড়া অন্য দুই মূল চরিত্রে আছেন সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী আর আদর্শ গৌরব। সিনেমাতে অনন্যাকে ‘অহনা’ নামের এক তরুণীর চরিত্রে দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বলেন, ‘খো গায়ে হাম কাঁহা’র এমন এক গল্প, যা বলা প্রয়োজন। এটা ‘কামিং-অফ-ডিজিটাল-এজ’ ফিল্ম। আর এই সিনেমার গল্পের সঙ্গে আমাদের প্রজন্ম পুরোপুরি সংযোগ করতে পারবে। দুটি ছেলে আর একটি মেয়ের বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে এতে। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আজকের ছেলে-মেয়েরা সম্পর্ককে কেমনভাবে ‘ডিল’ করে, তা দেখানো হয়েছে এই গল্পে। এই সিনেমার অংশ হতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত।’
অনন্যাকে শেষ দেখা গিয়েছিল আয়ুষ্মান খুরানার সিনেমা ‘ড্রিম গার্ল ২’-এ। এই সিনেমাতে তার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। এছাড়া ‘রকি অর রানি কি প্রেম কাহানি’ সিনেমাতে ক্যামিও করেছিলেন তিনি। আজকাল ফ্লপস্টারের তকমা অনন্যার গায়ে। গত কয়েক বছরে পর পর কিছু বড় সিনেমা মুক্তি পেয়েছে তার। দীপিকা পাড়ুকোনের সঙ্গে অনন্যার ‘গেহরাইয়া’ সিনেমা ঝড় তুলেছিল। তবে সিনেমার রিভিউ তেমন একটা ভালো ছিল না। তারপরই দক্ষিণী সুপারস্টার কবীর সিং খ্যাত অভিনেতা বিজয় দেবেরাকোন্ডার সঙ্গে ‘লাইগার’ সিনেমা করেন তিনি। বক্স অফিসে যা মুখ থুবরে পড়ে। ফলে অনন্যার হাতে কাজ থাকলেও বক্স অফিসে তিনি ভালো ফল করতে পারেননি।
এই স্টারকিড নাকি কমিয়ে দিয়েছেন তার পারিশ্রমিক। সিনেমা পিছু হাঁকছেন প্রায় অর্ধেক। এই খবর সামনে আসা মাত্র সবার প্রশ্ন, তবে কি অনন্যা পাণ্ডের হাত থেকে চলে যাচ্ছে ভালো সিনেমার প্রস্তাব? বক্স অফিসে এখনও পর্যন্ত সেভাবে হিট সিনেমা দিতে পারেননি তিনি। তবে এর দায় কার? তাই প্রতিযোগিতার বাজারে ভালো কাজ পেতে নিজের পারিশ্রমিক কমিয়ে সিনেমা ডাক পাওয়ার আশায় কি এই সিদ্ধান্ত নিলেন?
শোনা যাচ্ছে, ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক নাকি কমিয়ে ফেলেছেন তিনি। বলিউড তারকা চাঙ্কি পাণ্ডের কন্যা অনন্যা পাণ্ডে বাবার পথ ধরে রূপালি জগতে নাম লেখিয়েছেন। কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি আলোচিত সিনেমায়। তবে এখনও সেভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি। ২০১৯ সালে ‘স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার’ দিয়ে অভিষেক হয় অনন্যার। এরপর তাকে ‘পতি পত্নী অউর ওহ’, ‘খালি পিলি’, ‘লাইগার’ ইত্যাদি সিনেমাতে দেখা গেছে।
কিন্তু তার অভিনয় কিংবা পুরো সিনেমা, কোনোটাই সাফল্য পায়নি। তবে অনন্যার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে চলতি বছর। আয়ুষ্মান খুরানার সঙ্গে তার ‘ড্রিম গার্ল ২’ সিনেমাটি ব্যবসাসফল হয়েছে। ফলে অনন্যা নিজেও পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেয়েছেন। আর এই সময়ে এসে তার চিন্তা ধারায়ও অনেক পরিবর্তন এসেছে।
আপনার মতামত লিখুন :