ঢাকা শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

ধাক্কা খেলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শর্বরী

রেজাউল করিম খোকন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৪, ০১:৫৯ পিএম

ধাক্কা খেলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শর্বরী

শর্বরী ওয়াঘ। ছবি: সংগৃহীত

বলিউডে একজন আউটসাইডার হিসেবে পা রেখেছিলেন শর্বরী। ‘বান্টি অউর বাবলি টু’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনেত্রীকে চিনতে শুরু করেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু সেই সিনেমা বক্স অফিসে ততটা নাম কামাতে পারেনি। এটি একটি বিশাল বড় ধাক্কা ছিল শর্বরীর ক্যারিয়ারে। তারপরে ভেঙে না পড়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন অভিনেত্রী। তাকে দেখা গেছে ‘মুঞ্জ্যা’ সিনেমাতে। ইতোমধ্যেই বক্স অফিস কাঁপিয়েছে এই সিনেমা। ‘বান্টি অউর বাবলি টু’ বক্স অফিসে ভালো করতে না পারলেও হরর সিনেমা ‘মুঞ্জ্যা’ শর্বরীর জন্য ভালো ফল বয়ে এনেছে।

দীর্ঘ সময় ধরে শর্বরী ওয়াঘ বলিউডে কাজ করছেন। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি আউটসাইডার। বলিউডে কাজ পেতে শর্বরীকে খুব একটা বেশি স্ট্রাগল করতে হয়নি। প্রথম থেকেই নামি প্রযোজনা সংস্থার হাত ধরে পথ চলা শুরু করেছেন। কিন্তু ধাক্কা লাগে যখন ‘বান্টি অউর বাবলি টু’ বক্স অফিসে থুবড়ে পড়লে। অনেক নায়িকা আছেন, যারা সুপারহিট সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তবে শর্বরীর ক্ষেত্রে এমন হয়নি। তারপরও এই প্রযোজনা সংস্থা ভরসা হারাননি অভিনেত্রীর উপর। হঠাৎ হরর ফিল্ম ‘মুঞ্জ্যা’র হাত ধরে শর্বরী হিট পেলেন।

এই সিনেমার মুখ অভয় বর্মা আর শর্বরী। দুজনেই প্রতিভাবান এমন মনে করা হলেও সিনেমাটি বক্স অফিস কাঁপানোর মতো ব্যবসা করে ফেলার ক্ষমতা রাখে, তেমন ধারণা করেননি বলিউডের সিনেমা ব্যবসা বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কিন্তু সিনেমাপ্রেমীদের তাক লাগিয়ে দিয়ে এই সিনেমা ব্যবসা করে। এটা শর্বরীর জন্য কতটা ভালো হয়েছে সেটা তিনি বুঝতে পারছেন।

১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে জন্ম শর্বরীর। বাবা-মা এবং দুই ভাই-বোনের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। শর্বরীর বাবা পেশায় বিল্ডার এবং মা স্থপতি। শর্বরীর দাদু মনোহর গজানন জোশী ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত লোকসভার স্পিকারও ছিলেন তিনি। দাদু রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও ছোট থেকে শর্বরীর আগ্রহ ছিল অভিনয়ের প্রতি। ২০১৩ সালে মুম্বাইয়ের একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন শর্বরী। বড় পর্দায় অভিনয় করার ইচ্ছা ছিল তার।

শর্বরী ওয়াঘ। ছবি: সংগৃহীত

২০১৪ সাল পর্যন্ত বড় পর্দায় মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের আশায় বিভিন্ন জায়গায় অডিশন দিতে গিয়েছিলেন তিনি। অভিনয় শিখবেন বলে মুম্বাইয়ের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছিলেন শর্বরী। টানা নয় মাস ধরে অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। এমনকি সপ্তাহান্তে থিয়েটারের ওয়ার্কশপও করতে যেতেন তিনি। বড় পর্দায় ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের স্বপ্ন থাকলেও শর্বরী বলিপাড়ায় কাজ শুরু করেন ক্যামেরার পেছনে।

২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্যায়ার কা পঞ্চনামা ২’ সিনেমাতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি। ২০২০ সালে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় ‘দ্য ফরগটেন আর্মি-আজাদি কে লিয়ে’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ। এই সিরিজের মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন বলি অভিনেতা ভিকি কৌশলের ভাই সানি কৌশল। সানির সঙ্গে জুটি বেঁধে সিরিজে অভিনয় করতে দেখা যায় শর্বরীকে।

২০১৫ সালে সঞ্জয় লীলা বানসালীর পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘বাজিরাও মস্তানি’। এই সিনেমাতেও সহকারী পরিচালনার কাজ করেছেন শর্বরী। ২০১৫ সালের পর তিন বছর বলিপাড়ায় আর কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি তাকে। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সোনু কে টিটু কি সুইটি’ সিনেমাতে আবার সহকারী পরিচালকের আসনে দেখা যায় তাকে। চলতি বছরে ‘মুঞ্জ্যা’ এবং ‘মহারাজা’ নামের দুটি সিনেমাতে অভিনয় করতে দেখা গেছে শর্বরীকে। আমিরপুত্র জুনেইদের প্রথম সিনেমা ‘মহারাজ’-এ বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

জন আব্রাহমের বিপরীতে ‘বেদা’ নামের একটি অ্যাকশন ঘরানার সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন তিনি। ‘মুঞ্জ্যা’র সাফল্যের পর তার হাতে কী-কী কাজ আছে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বলিউডের নামি প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মসের স্পাই ইউনিভার্সে আলিয়া ভাটের পাশাপাশি রেখেছে শর্বরীকে। এতদিন মনে করা হচ্ছিল, প্রযোজনা সংস্থার ট্যালেন্ট লিস্টে শর্বরী আছেন বলেই এমন সুযোগ তার কাছে এসেছে। কিন্তু এবার নেটিজেনরা শর্বরীর অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। তাই স্পাই ইউনিভার্সে নজর কাড়তে পারেন অভিনেত্রী, তা আঁচ করা যায়।

দীপিকা পাড়ুকোন বা আলিয়া ভাট তার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে অনেকটা। কিয়ারা আদভানি, তৃপ্তি দিমরি, শ্রদ্ধা কাপুর, জাহ্নবী কাপুর, অনন্যা পাণ্ডে বা সারা আলি খানের মতো নায়িকাদের যদি টেক্কা দিতে পারেন শর্বরী, তাহলে বলিউডের টপ ফাইভ নায়িকাদের মধ্যে তার নাম চলে আসবে। তেমনটা হবে কিনা জানতে দু’-তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই প্রতিযোগিতায় ‘মুঞ্জ্যা’ যে শর্বরীর প্রথম বাজি, সংশয় নেই।

শর্বরী ওয়াঘ। ছবি: সংগৃহীত

শর্বরী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি দারুণ খুশি। একটি সিনেমার সাফল্য, আমার জন্য বিরাট বড় কনফিডেন্স বুস্টার।’ যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারেই নায়িকা হিসেবে সফর শুরু করেন মহারাষ্ট্রের এই কন্যা। ‘বান্টি অউর বাবলি ২’ সিনেমায় রানি-সাইফের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করেন অভিনয়। প্রথম সিনেমার সৌজন্যেই ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছিলেন শর্বরী। সেরা নবাগতা অভিনেত্রী হয়েছিলেন তিনি। তবে এরপর আর সেভাবে তাকে কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি।

একসময় ভিকি কৌশলের ভাই সানির সঙ্গে শর্বরীর প্রেমের গুঞ্জন শোনা যায়। ‘দ্য ফরগটেন আর্মি- আজাদি কে লিয়ে’ সিরিজে একসঙ্গে কাজ করেছিলেন দুজন। প্রথম সিনেমাতেই মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন। তার ক্যারিয়ারের ঝুলিতে রয়েছে একটি ওয়েব সিরিজ। সেই সিরিজে যে সহ-অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছেন, তার সঙ্গে বাস্তবেও নাকি জুটি বেঁধে ফেলেছেন নায়িকা।

কানাঘুষা শোনা যায়, সানির সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছেন শর্বরী। রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে নানা জায়গায় জুটি হিসাবেই হাজির থাকেন সানি এবং শর্বরী। দুজনের কেউই এখনো পর্যন্ত তাদের সম্পর্কের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেননি। কিন্তু তাদের একসঙ্গে সর্বত্র দেখা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত জীবন আড়ালে রাখতে ছবি শিকারিদের কাছ থেকে কোনো রকম লুকোচুরিও খেলছেন না তারা। চলতি বছরে পরপর তিনটি সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় অভিনেত্রী শর্বরীর ক্যারিয়ার বেশ গতি লাভ করেছে। ইতোমধ্যেই নিজস্ব অনুরাগী মহল তৈরি করেছেন শর্বরী। ইনস্টাগ্রামের পাতায় তার অনুগামীর সংখ্যা ১০ লাখের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।

রূপালী বাংলাদেশ/রুআ

Link copied!