প্রায় সাত বছর পর নতুন সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় ফিরছেন ছোট পর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ। আগামী ২৯ নভেম্বর মুক্তি পাচ্ছে তার অভিনীত সিনেমা ‘ভয়াল’, পরিচালনা করেছেন বিপ্লব হায়দার। চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড গঠন হওয়ার পর ‘এ’ গ্রেডে (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য) ছাড়পত্র পাওয়া প্রথম সিনেমা এটি।
কেন প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমা বলা হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইরফান সাজ্জাদ দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের বলতে চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড মনে করেছে এই সিনেমাটি ১৮ প্লাস এর নিচে যাদের বয়স তাদের জন্য না। ১৮ প্লাস বলার নানান কারণ হতে পারে। যেমন; ন্যুড, ভায়োলেন্স ইত্যাদি। ‘ভয়াল’ দেখার পর সার্টিফিকেশন বোর্ড মনে করেছে এটা প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমা। এ কারণেই এ গ্রেড তকমা দিয়েছেন।’
ইরফান সাজ্জাদ মনে করেন এটি একটি সামাজিক সিনেমা। এই সিনেমাটি সবার দেখা উচিত। বললেন, ‘আমরা যদি সে অর্থে বলি এখন কিন্তু ১৮ বছরের আগেই ছেলে-মেয়েরা ম্যাচিউর হয়ে যায়। সিনেমাটি যে বিষয়ের ওপর বানানো সেটি চিন্তা করলে প্রত্যেক পরিবারের উচিত তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সিনেমাটি দেখা। সমাজে চলাফের করতে গিয়ে কি ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় এই সিনেমায় সে বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।’
ঈদ ছাড়া সিনেমা মুক্তি দিতে চান না দেশের পরিচালক এবং প্রযোজকরা। কারণ হিসেবে বলা যায় অন্য সময়ে সিনেমা মুক্তি পেলে আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনও হয়েছে অনেক পরিচালক সিনেমার খরচও তুলতে পারেনি। ঈদ ছাড়া চলতি মাসে বড় বাজেটের সিনেমা ‘দরদ’ মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি দর্শক টানতে ব্যর্থ হয়েছে। মাসের শেষের দিকে এসে ‘ভয়াল’ মুক্তি পাচ্ছে।
ঈদ ছাড়া সিনেমা মুক্তি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সিনেমার জায়গাটা একটু ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। উৎসব এলে চাঙ্গা থাকে আর বাকি সময় জিমিয়ে যায়। একজন শিল্পী কিংবা দর্শক হিসেবে আমি স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের সিনেমা নিয়মিত ব্যবসা করুক এবং লাভজনক জায়গায় পৌঁছাক। আমি মনে করি এটা সম্ভব। এখন হয়তো রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে গেছি। এদিকে আমাদের মনোযোগ দেওয়া জরুরি। ঈদ ছাড়া সিনেমা মুক্তি এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। সারা বছর সিনেমা মুক্তি না দিয়ে যদি উৎসবে মুক্তির হিড়িক পড়ে যায় তাহলে বাকি সময়টা তো হল মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে দর্শকদের আগ্রহ কমে যাবে। আমি মনে করি প্রতি মাসে অন্তত দুটি সিনেমা মুক্তি দেওয়া উচিত। তাহলে মানুষ হলমুখী হবে। উৎসব ছাড়া মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে বাজেট ফিক্সড করে কাজ করা। যাতে করে ব্যবসাটা হয়। আমরা সব সময় বলি সিনেমা হল নেই। সিনেমা না থাকলে সিনেমা হল কীভাবে টিকে থাকবে। সারা বছর সিনেমা রানিং থাকলে হল মালিকরাও হলের দিকে নজর দিবে। তারাও চাইবে কীভাবে সিনেমা হলকে আরও সুন্দর করা যায়।’

প্রায় তিন বছর কাজ থেকে দূরে ছিলেন ইরফান। পারিবারিক কারণেই এই বিরতি। বেশিরভাগ সময়ই দেশের বাইরে ছিলেন ওই সময়টা। ফিরে এসে কাজ করেছেন বেশ কিছু নাটক এবং সিনেমায়। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার কয়েকটি সিনেমা। সিনেমা নিয়ে তার ভাবনা কি জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেক বছর হলো অভিনয় করছি। নাটক তো অনেক করলাম। ওটিটিতেও কাজ করা হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে সিনেমায় নিয়মিত হওয়া উচিত। যে দেশে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াবে না সে দেশে কালচারাল দাঁড়াবে না। সিনেমার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশেরও উন্নয়নও ঘটবে। আমাদের সিনেমার অবস্থা ভালো হলে সারা বিশ্ব সেটিকে ছড়িয়ে দিতে পারব। আমাদের নিজেদেরকে বিশ্বের কাছে জানান দিতে পারব। আমি চাই বাংলা সিনেমার কখনো যদি উন্নতি হয় সে উন্নতির সঙ্গে আমার অংশগ্রহণও থাকুক। আপাতত সিনেমায় মনোযোগ দিতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা দর্শক চাইলে তা সম্ভব। তারা যদি চান তাহলে সিনেমায় নিয়মিত কাজ করতে চাই।’
দেশের বিরাট একটা পরিবর্তন হয়েছে। সে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে প্রায় সব সেক্টরেই। নিয়মিত বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম চলছে। বিনোদন অঙ্গনে কি কি সংস্কার চান, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় অভিনেতার কাছে। জবাবে ইরফান সাজ্জাদ বলেন, ‘এখনো অনেক শিল্পী কেন্দ্রীয় চরিত্রে কাজ করছেন কিন্তু একটা হিট সিনেমা নেই। বাংলাদেশে সিনেমা হিট হওয়া খুব কঠিন। এই কারণে কঠিন বাংলাদেশে তো আসলে সিনেমা হল কম। সিনেমা হল কম মানে দর্শকও কম। দর্শক না থাকলে সিনেমা বানানোর আগ্রহ থাকবে না। দেশে সিনেপ্লেক্সে ছাড়া অনন্যা সিনেমা হলের রিপোর্ট পাওয়া যায় না। রিপোর্ট না থাকলে কোন সিনেমা কত টাকা আয় করল এটা কীভাবে জানবে। কোনটা হিট হলো আর কোনটা ফ্লপ হলো এটা অনুমান নির্ভর। অনেক কিছু সংস্কার দরকার। যারা প্রযোজক-পরিচালক আছেন কিংবা সরকারে আছেন তারা হয়তো একটা সমাধান বের করবেন। একজন শিল্পী হিসেবে আমার কাজ হলো ভালো কন্টেন্ট দেওয়া। এই ভালো কন্টেন্ট দিতে থাকলে দর্শকরাও হলে আসা শুরু করবে। একটা সময় হয়তো রেভিনিউ কালেকশনের ব্যাপারটা একটা সিস্টেমে চলে আসবে। আমার কাছে মনে হয়, এফডিসিতে বিশাল একটা সংস্কার দরকার। এখানে দক্ষ টেকনেশিয়ানের অভাব। আমরা যেন দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করতে না হয় এই বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত। অনেক দামি ক্যামেরা এবং জিনিস থাকলেই হবে না সেগুলো চালানোর জন্য দক্ষ লোক লাগবে। সবকিছু মিলিয়ে একটা সমন্বয়ে আসতে হবে। এফডিসিতে এমন জিনিস আছে সেটি ইন্ডিয়াতেও আছে। আমাদের এখানে দক্ষ লোক নাই বলে ওখানে গিয়ে কাজ করতে হয়। শুধু কন্টেন্ট বানালেই হবে না। আমাদের সিনেমা ম্যাকিং-এ যারা কাজ করেন তাদেরকে দক্ষ করে তুলতে হবে। তাহলে আমরা ঘুরে দাঁড়াব।’
নাটকে অশ্লীলতার অভিযোগ বহুদিন ধরে। সিনেমার পাশাপাশি নাটকেও পরিবর্তন হওয়া উচিত বলে মনে করেন ইরফান সাজ্জাদ। অভিনেতার ভাষায়, ‘নাটকে আসলে পরিবর্তনের কিছু নেই। নাটকটা কারও হাতে নাই। নাটক চলে গেছে ইউটিউব মালিকদের হাতে। এটা এখন একটা বিজনেস প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে। ইউটিউব মালিক বা পরিচালক ওই নাটকটাই বানাবে যেটা ইউটিউব চ্যানেলের জন্য লাভজনক হয়। এখন আর নাটক টিভিতে কেউ দেখে না। যারা স্পন্সর তারা এখন জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে স্পনসর করছে। টিভি নাটক এখন ব্যবসা করে তাদের ইউটিউব চ্যানেল দিয়ে, সেই চ্যানেল থেকে কতটুকু ইনকাম হয় সেটার উপর। এখন নাটক পুরোপুরি ভিউনির্ভর। এটা এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে গেছে। দেশে ইউটিউব চ্যানেলের অভাব নেই। যার ইচ্ছে সেই নাটক বানাচ্ছে। কয়েকটা বড় চ্যানেল ছাড়া বেশিরভাগ নাটক একটা ছকের মধ্যে বাঁধা পড়ে আছে।’

অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ জুটি বেঁধে অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছেন। জুটি হিসেবে কাকে তিনি এগিয়ে রাখবেন জানতে চাইলে বলেন, ‘এটা আমার জন্য খুবই কঠিন প্রশ্ন। আমি আসলে সেভাবে পুরোপুরি জুটি মেইনটেইন করে কাজ করি না। একটা সময় মেহজাবীন ও তানজিন তিশার সঙ্গে নিয়মিত কাজ হতো। এরপর আবার তাসনুভা তিশার সঙ্গে ভালো কাজ হয়েছে। এখন নতুনদের সঙ্গে কাজ হচ্ছে। সবার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। কাউকে আমি আলাদা করে ভাবিনি। একটা সময় আমার আর তানজিন তিশার কাজ সবাই পছন্দ করত।’
বর্তমানে ইরফান সাজ্জাদ ‘ভয়াল’ সিনেমার প্রচারণায় সময় দিচ্ছেন। তার অভিনীত ‘আলী’ সিনেমা সামনেই মুক্তি পাবে। এর মাঝখানে ওটিটির কাজ করছেন। নতুন একটা সিনেমা নিয়েও কথা চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নতুন বছরের শুরুতে নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করবেন তিনি। আপাতত নাটকের শুটিং করছেন না ইরফান সাজ্জাদ। নতুন বছর থেকে পুরোদমে সিনেমায় মনোযোগী হওয়ার ইচ্ছে অভিনেতার।