ঢাকা বুধবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫

অর্ণব: গানের সমুদ্র

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ০৫:২০ পিএম

অর্ণব: গানের সমুদ্র

কণ্ঠশিল্পী শায়ান চৌধুরী অর্ণব

অর্ণব শব্দের অর্থ সমুদ্র। বাবা-মা হয়ত ভেবেছিলেন, ছেলে বড় হয়ে সমুদ্রের মতো বিশালতা অর্জন করবে। তাই হয়ত সমুদ্রের অপর নামটিই জুড়ে দিলেন ছেলের নামের শেষে।

পুরো নাম শায়ান চৌধুরী অর্ণব। বাংলা গানে গেল শূন্য দশকে এক যাদুকরি ইনিংস খেলেছেন তিনি। সুরের স্রোতে শ্রোতাদের ভাসিয়েছেন, আবার ভেসে গেছেন নিজেও। সৃষ্টিশীল মানুষেরা উদাসীন হন; এই কথার পূর্ণাঙ্গ উদাহরণ হিসেবেও অর্ণব নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তুমুল ব্যস্ততায় গান করছেন, আবার আচমকা হাওয়া! অর্ণব যেন নিজেও জানেন না, কখন তিনি কী করছেন!

খামখেয়ালি স্বভাবের অর্ণব গানের আস্ত এক ফ্যাক্টরি। তার সৃষ্টিকর্ম অন্তত সেটাই বলে। লম্বা পথচলায় তিনি সৃষ্টি করেছেন অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় ও অনুকরণীয় গান। যেসব গান দেশের বাইরেও পেয়েছে সাফল্য। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ দেশের গান ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম কাণ্ডারি অর্ণব। তার কথা সমৃদ্ধ গান পৌঁছে যায় সাধারণ মানুষের কাছেও।

‘হোক কলরব’-এর মতো সহজ-সরল ভাষায় অসামান্য গভীর দৃশ্যপট বর্ণনা করেছেন অর্ণব। সেই অর্থবহ গান ছড়িয়ে গেছে সব বয়সী সব ধরণের মানুষের মাঝে। এমনকি ২০১৪ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় আন্দোলনের মূল স্লোগান হয়ে ওঠে ‘হোক কলরব’। সে সময় হ্যাশট্যাগে এই শব্দটি ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল।

অর্ণবের জন্ম ১৯৭৯ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকায়। আজ তার জন্মদিন। বিশেষ এই দিনে তার সম্পর্কে খানিক আলোচনা হতেই পারে।

শৈল্পিক পরিবারে জন্ম অর্ণবের। বাবা-মা দু’জনই ছিলেন চিত্রশিল্পী। চাচা তপন চৌধুরী বাংলাদেশের অন্যতম কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী। তাই ছোট বেলা থেকেই সংস্কৃতির মায়াজালে বেড়ে উঠেছেন অর্ণব। নিজের মধ্যেও তাই স্থায়ী করে নেন সৃষ্টির আনন্দ।

খুব ছোট বেলায় ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় অর্ণবের। তবে কিছু দিন পরই তাকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাকে ভর্তি করানো হয় সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। অর্ণবের মা তখন শান্তি নিকেতনের কলা ভবনের ছাত্রী। একদিন মায়ের সঙ্গে ঘুরতে যান শান্তি নিকেতনে। ব্যাস, প্রেমে পড়ে যান ওই প্রতিষ্ঠানের। শান্তি নিকেতনের সমুজ-শ্যামল আঙিনা অর্ণবকে আঁকড়ে ফেলে। বায়না ধরেন, সেখানেই তিনি পড়াশোনা করবেন।

সেই বায়না থেকে শান্তি নিকেতনের চিত্রকলা বিভাগে পড়ালেখা শুরু করেন অর্নব। কিন্তু ধীরে ধীরে তার মধ্যে গানের দখল চলে আসে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই তিনি ক্লাসিক্যাল এস্রাজ লিখতে শুরু করেন। ছুটিতে দেশে ফিরে মাত্র সাত দিনেই বন্ধুদের কাছ থেকে গিটার বাজানো শিখে ফেললেন!

সঙ্গীতে অর্ণবের পূর্ণাঙ্গ পথচলা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। মাত্র ১৮ বছর বয়সে কয়েকজন ভারতীয় বন্ধু নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন ‘বাংলা’ নামে একটি ব্যান্ড। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, বাংলার পল্লী গান তারা তুলে ধরবেন। কিছু দিনের মধ্যে ব্যান্ডটিতে যোগ দেন আনুশেহ আনাদিল।

এরই মধ্যে অর্ণবের শান্তি নিকেতনে পড়াশোনা শেষ হয়ে যায়। তিনি দেশে ফিরে আসেন। আর ‘বাংলা’ ব্যান্ড নিয়ে চর্চা রাখেন অব্যাহত। বাংলাদেশি ব্যান্ড হিসেবেই এটি গান করতে থাকে। এই ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘কিংকর্তব্যবিমুড়’ প্রকাশিত হয় ২০০২ সালে। এখানকার ‘মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে’ ও ‘তুই গান গা’ গান দুটি দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এরপর অর্ণব নিজের একক অ্যালবামের দিকে নজর দিলেন। ২০০৫ সালে প্রকাশ করলেন ‘চাই না ভাবিস’ নামে একটি অ্যালবাম। এখান থেকে ‘সে যে বসে আছে একা একা’ গানটি আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পায়।

তারপরের বছর নিজেকেই ছাড়িয়ে যান অর্ণব। ‘হোক কলরব’ শীর্ষক অ্যালবাম দিয়ে নিজের অবস্থানকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালে ‘ডুব’, ২০১০ সালে ‘রোদ বলেছে হবে’, ২০১২ সালে ‘আধেক ঘুমে’, ২০১৫ সালে ‘খুব ডুব’ এবং ২০১৭ সালে ‘অন্ধ শহর’ অ্যালবামগুলো প্রকাশ করেন তিনি।

চলচ্চিত্রের গানেও অর্ণব নিজের যাদুকরি অস্তিত্বের জানান দিয়েছেন। কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গান গেয়েছেন ‘আহা!’ সিনেমায়। এছাড়া ‘জাগো’, ‘মনপুরা’ ও ‘আয়নাবাজি’ সিনেমায় কাজ করেছেন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে। যেগুলো তাকে আরও বেশি সফল করে তোলে।

ব্যক্তিগত জীবনে অর্ণব বিয়ে করেছিলেন, আবার সেই বিয়ে ভেঙেও গেছে। তিনি যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন, তখনই শান্তি নিকেতনের এক সহপাঠীকে তার ভালো লাগে। যার নাম সাহানা বাজপেয়ী। অষ্টম-নবম শ্রেণির দিকে তারা একে অপরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। পরবর্তীতে ২০০১ সালে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাত বছর পর ২০০৮ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর ভারতের কণ্ঠশিল্পী সুনিধি নায়েককে বিয়ে করেন অর্ণব।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!