করোনার পর থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। বর্তমানে পুরোপুরি নিজেকে আড়ালে রেখেছেন তিনি।
পরিবার থেকে সহকর্মী সবার সঙ্গেই এখন পপির দূরত্ব। সম্প্রতি এই অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে বাবার (আমির হোসেন) জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন নায়িকার বোন ফিরোজা পারভীন। গত সোমবার খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন তিনি। জিডি নং-২১০।
পপি পারিবারিক জমি এককভাবে নিজের দখলে নিতে চান। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বাধা পেলে তিনি ভাই-বোনদের হুমকি দিচ্ছেন, এমনকি তাদের মেরে ফেলার ভয়ও দেখিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, পপির মা মরিয়ম বেগম মেরির দিকেও নানা হুমকি আসছে বলে জানা গেছে।
পারিবারিক বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে খুলনার শিববাড়ি এলাকায় পপির বাবার ১১ কাঠা জমি।
অভিযোগ অনুযায়ী, এর মধ্যে ৫ কাঠা জমি আগে থেকেই নিজের নামে লেখিয়ে নিয়েছেন পপি। এখন বাকি ৬ কাঠার মালিকানা পেতে তিনি মা, ভাই ও বোনদের চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আরও জানা যায়, পপির মা যে বাড়িতে থাকেন, সেটির বিদ্যুতের লাইনও নিজের নামে করিয়ে নিয়েছেন এই চিত্রনায়িকা।
সন্তানের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ জানিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে পপির মা মরিয়ম বেগম দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘করোনার পর থেকে আমাদের সঙ্গে পপির যোগাযোগ নেই। করোনা শেষ হলে খুলনা থেকে ঢাকা যায়। তার পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। মাঝে ওর বাবার অসুস্থতার সময় কিছু খরচ দিয়েছিল।’
২০২১ সালে বিশ্ব মা দিবসে ‘গরবিনী মা সম্মাননা’ পান পপির মা। সে সময় মায়ের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে পপি বলেছিলেন, ‘আমি আজকের যা কিছু তার পুরো কৃতিত্বই আমার মায়ের।
আমার আজকের গড়ে উঠাতে মাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছেন আমার বাবা। নেপথ্যে মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমই আমার আজকের পপি হয়ে ওঠা।
আমার মায়ের সংগ্রামী জীবনকে মূল্যায়িত করে, আমার সফলতাকে বিবেচনা করে আমার মাকে গরবিনী মা সম্মাননা দেওয়ার উদ্যোগকে আমি শ্রদ্ধা জানাই, ভালোবাসা জানাই।’
সেই পপির সঙ্গেই এখন মায়ের দূরত্ব।
তা ছাড়া মেয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে পাহাড়সম অভিযোগ। জমির বিরোধ সহসা সমাধান না হলে পপির বিরুদ্ধে মামলা করতেও দ্বিতীয়বার ভাববেন না বলে জানিয়েছেন মা, ভাই ও বোনেরা।
মেয়ের সঙ্গে কেন দূরত্ব জানতে চাইলে পপির মা বলেন, ‘আমি দূরত্ব রাখিনি কিন্তু পপি তৈরি করেছে। আমার জমি পপি দখল নিতে মরিয়া।
আমার ৬ সন্তান। তার মধ্য প্রথম সন্তান পপি। সব সম্পত্তি সমান ভাগ পাবে ছয়জন। কিন্তু আমার সম্পত্তি সব কিছু পপি একাই দখলে নিতে চাচ্ছে।
সর্বশেষ আমার বাসার বিদ্যুৎলাইন কেটে অন্ধকারের মধ্যে রেখেছে। ওর কেয়ারটেকার থাকে সেই ঘরে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দিয়েছে।’
পপি প্রেম করে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন জানিয়ে মরিয়ম বেগম বলেন, ‘পপি খারাপ তা বলছি না। কিন্তু স্বামীর প্ররোচনায় এসব করছে।
ওর খুলনায় চারটি জায়গা, একটি বাড়ি। তারপর ভাই-বোনের সম্পদ একাই ভোগের চেষ্টা করছে। সব সম্পত্তি থেকে ভাই-বোনদের বঞ্চিত করার চেষ্টা দীর্ঘদিনের। স্বামীকে নিয়ে আমাদের ভিটামাটিছাড়া করতে চাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘পপির সঙ্গে আদনানের সম্পর্ক চলাকালীন থেকেই আমাদের পিছু পড়ে আছে। পপির স্বামীর আগের ঘরে তিন সন্তান ও স্ত্রী আছে। সেখানেও দিব্যি সংসার চলছে। পপিরটাও চলছে।
পপির সন্তানকে স্বীকৃতি দেয় না। কোথাও বিয়ে ও সন্তানের কথা স্বীকার করে না। স্কুলে ভর্তি করতে তো বাবার পরিচয় লাগবে। বাচ্চা তো অবৈধ না। আমি স্বীকৃতি চাই মেয়ে ও নাতির।
সন্তান জন্ম নেওয়ার পর বলেছিলাম সাংবাদিকদের জানাতে, কিন্তু আমি বলতে গিয়ে উল্টো দোষী হয়েছি। এ কারণে মনঃক্ষুণ্ন তার স্বামী। বিয়ে করেছে, তা-ও জানানো হয়নি।’
কোনো কিছুই তোয়াক্কা করছে না পপি, সে কথা জানিয়ে নায়িকার মা বলেন, ‘পপি কিছুই মানছে না, আইনের ঊর্ধ্বে। দুজনের এত টাকা যে, কোনো অন্যায় করতেও দ্বিধা করছে না।
বিদ্যুৎ আমার স্বামীর নামে, কিন্তু পপি জোর করে লাইন নিয়ে গেছে। আমরা কিছু করতে পারব না বলে এ রকম অত্যাচার করতেছে।’
আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওরে ফটোসুন্দরী বানিয়েছি। নায়িকা হয়েছে। সে সময় পরিবারের কেউ সহযোগিতা করেনি, কিন্তু আমি সাথে ছিলাম। আজ টাকা হয়েছে, বড় নায়িকা হয়ে আমাদের ভুলে গেছে।
বিদ্যুৎ দরকার হলে ওর বাবা থাকতেই নিত। এখন আমাদের সঙ্গে অন্যায় করছে। বিদ্যুৎ অফিসও আমাদের সহযোগিতা করেনি।
সর্বশেষ কী চান, জানতে চাইলে প্রশ্ন রেখে পপির মা বলেন, ‘এখন পপি যদি বসে সমাধান না করে তাহলে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব। আমার তো আর উপায় থাকবে না। আমার মেয়েটা আগে ভালোই ছিল।
কিন্তু বিয়ের পর ৫-৬ বছর ধরে স্বামীর প্ররোচনায় আমাদের নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। তার বাবার জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমাদের প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে রেখেছে। এই বয়সে আমরা কোথায় যাব।’
জিডির সূত্র ধরে জানা যায়, পৈতৃক জমি দখলে নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার, শিপনসহ সোমবার বেলা ১২টা ৩০ মিনিটের দিকে সোনাডাঙ্গা থানাধীন শিববাড়ি ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে হাজির হন। বাধা দিলে একপর্যায়ে ফিরোজা পারভীনসহ সবাইকে হুমকি দেন পপি ও তার স্বামী।
পপির মেজো বোন ফিরোজা পারভীন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা ৪ বোন, ২ ভাই। পপি সবার বড়। সে আমাদের বাবার জমি দখলের চেষ্টা করছে অনেক বছর ধরেই।
বাবার মৃত্যুর পর থেকেই আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি পপির মাধ্যমে। পপি ছাড়া আমরা সবাই এক আছি। আগেও আমাদের পেশিশক্তির ভয় দেখানো হয়েছে। বিষয়টি নায়ক আলমগীর, জায়েদ খানসহ আরও দু-একজন জানেন।
সব জানার পর আলমগীর সাহেব পপিকে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু পপি কোনো কিছুতেই মানছে না।
সবার জমি সে একাই দখল করতে চায়। এই মুহূর্তে স্বামীসহ পপি খুলনায় অবস্থান করছেন। আমাদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
পপির বিরুদ্ধে মা-বোনের অভিযোগ জানতে নায়িকার মুঠোফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
স্বামী আদনান কামালকে একাধিকবার কল দিলেও তার সাড়া মেলেনি। তবে জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘জিডিতে পপির বিরুদ্ধে পৈতৃক সম্পত্তি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, পপির সন্তানের নাম আয়াত। প্রথম সন্তানের বয়স প্রায় চার বছর। আর পপির স্বামীর নাম আদনান উদ্দিন কামাল। তিনি জান্নাত গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর। রয়েছে জাহাজের ব্যবসা। তিনি লালবাগ কাজী রিয়াজ উদ্দিন রোডের বাসিন্দা।
রাজধানীর ধানমন্ডি ১৩ নম্বর রোডে তার একটি বাসাও রয়েছে। এর আগে দুইবার বাসা বদল করেছেন।