পৈতৃক জমি জবরদখলের ইস্যুতে আলোচনায় নন্দিত চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। এরই মধ্যে তার বোন থানায় জিডি করেছেন নায়িকার নামে। পাল্টা মা, ভাইবোনদের নামে জিডি করেছেন পপিও। অনেক দিন ধরে আড়ালবাস করছেন তিনি। করোনার পর থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই চিত্রনায়িকা। করছেন দিব্যি সংসার। নিজের মা, ভাইবোনকে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস ও নানা প্রসঙ্গে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন পপি।
কেমন আছেন?
ভালো থাকার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ভালো থাকতে দিচ্ছে না। আমার মা, ভাইবোনদের অত্যাচারে জীবনটা অতিষ্ঠ। আমার সব সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করার জন্য আমাকে নোংরাভাবে পরিবার, সমাজের কাছে উপস্থাপন করছে। যার কোনো সত্যতা নেই। এর বিন্দু পরিমাণ সত্যতা থাকলে আমি কিছু বলতাম না। পুরোটাই বানোয়াট। এর আগে এরা আমার টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করেছিল, এখন বাকিটা হজম করার জন্য আমাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
কেন এমন হচ্ছে?
পরিবারে যখন একজন উপার্জন করে তখন তিনি বাকিদের শত্রু হয়ে যায়। ’৯৫ সাল থেকে নিজের দিকে না তাকিয়ে পরিবারকে দেখেছি। কখনো নিজের ভালোলাগা, মন্দালাগা কোনো কিছুই দেখিনি। শুধু অন্ধভাবে পরিবারকে সাপোর্ট করেছি। বাবা-মা ভাইবোনদের জন্ম দিয়েছে ঠিক কিন্তু আমি মানুষ করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হচ্ছে তারা মানুষ হয়নি। বাধ্য হয়ে বলতে হচ্ছে, সবাই অর্থলোভী ও ক্রিমিনাল।
কবে থেকে দ্বন্দ্ব?
২০০৮ সাল থেকে পরিবারের সঙ্গে আমার ঝামেলা চলছে। আমি মরিনি কিন্তু শারীরিকভাবে অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছি। আমার আপন মা-বোন ও পালিত ভাই অনেকবার আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। ২০১৮ সালে রমনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম বাসা থেকে ২২ লাখ টাকা চুরি হওয়ার কারণে। জিডির পর জানতে পারি, আসামি আমার ভাই দীপু, পালিত ভাই সামির ও সেজো বোন ফিরোজা পারভীন। যার নামে বাবা আমার সব টাকা ট্রান্সফার করেছিল।
আপনার বিরুদ্ধে বোনের মারধরের অভিযোগ
না এমন কিছু হয়নি। মারধর করলে তো শরীরে চিহ্ন থাকত। মুখ দিয়ে বললেই হবে নাÑ প্রমাণ লাগবে। এ রকম তো বানিয়ে আমিও বলতে পারি। যদিও এমন ঘটনা আমার সঙ্গে বহুবার ঘটেছে কিন্তু মানসম্মানের ভয়ে এতদিন কিছু বলিনি। কিছুই করিনি কিন্তু উল্টো দোষ হচ্ছে। আমি খুলনা গিয়েছিলাম ওয়াসার একটি নোটিশের ব্যাপারে। বিদ্যুৎ লাইন বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবার দখল করে আছে। যেখানে আমি যাই না এবং যাওয়ার আগ্রহ নেই। বাড়ির পেছনের জায়গাটি আমার। এত বছরেও জায়গাটি ভোগ করতে পারছি না। দীর্ঘদিন ধরে ভাইবোনেরা ভোগ করছে। তারপরও উল্টো আমার সম্মানহানি করছে। সব জমির দলিল আমার কাছে আছে। আমি জমিগুলো কিনেছি। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো দিন বাবা-মায়ের কাছ থেকে কিছুই ফ্রিতে নেইনি। ’৯৫ সালের পর থেকে বাবার থেকে একটা সালোয়ার-কামিজও নেইনি। ভাইবোনেরাও বসে বসে খেয়েছে, এখন বদনাম করছে। সব জমি কিনে নিয়েছি।
কত একর জমি
আমার বাবার অংশের জমি ১১ কাঠা। ৬ কাঠা আমি কিনেছি। পেছনের জায়গায় যেতে রাস্তা দরকার। কিন্তু সেই রাস্তা যতবার চেয়েছি ততবারই হয়রানির শিকার হয়েছি। জমি দখলে আমি যাইনি। মাত্র চারজন মানুষ নিয়ে গেছি। লোক নিয়ে দখলে গেলে আগেই করতে পারতাম। ২০০৮ সালে কিনে এখনো ভোগ করতে পারছি না। আমি খুলনায় কাজে গিয়েছিলাম। ওয়াশার লাইন চাচির কাছ থেকে নিয়ম মেনে কিনেছি। সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর করার জন্য ফিরোজা পারভীনের নামে মামলা হয়েছে। বোন হওয়ার কারণে আমি মাফ করেছি কিন্তু বাইরের লোক তো মাফ করবে না। সামিরকে দিয়ে বারবার আমাকে খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৫ মাস আগে প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে ডাকাতি করতে গিয়ে সামির গ্রেপ্তার হয়েছে।
বোনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
আমার পরিবারের কেউ উপার্জন করে না কিন্তু এক লাখ টাকা বাসা ভাড়া দিয়ে থাকে। তাদের আয়ের উৎস কী? ফিরোজা মাদকের ব্যবসা করে। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে বোনকে বাবা একবার বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল এবং খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছিল। মাদক ছাড়তে বলায় বাবাকে মারধর করেছিল। মায়ের প্ররোচনায় এসব করেছে। এদের হাতে আমি নিজেও মার খেয়েছি। সামির আমাকে অনেকবার হত্যার চেষ্টা করেছে, এখনো করছে। সামির মাদক ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। ভাই ও বোন তিনজনের রক্ত পরীক্ষা করলে মাদকে যে আক্রান্ত তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। ওদের হাতে মার খেয়েও এসব কথা হজম করেছি এবং মানসম্মানের ভয়ে এতদিন চুপ ছিলাম। এ ঘটনা ইন্ডাস্ট্রির সবাই অবগত। আমি ভূমিদস্যু না। যাদের জন্য এতকিছু করেছি তাদের থেকে কি নেওয়ার আছে। নায়ক আলমগীর ও পরিচালক বাদল খন্দকার ভাই অনেক ঘটনাই জানেন। এ যাবৎকাল যত অর্থ উপার্জন করেছি তা পরিবার আত্মসাৎ করেছে। আমার মা প্রধান ক্রিমিনাল। তার নির্দেশনায় এসব হয়েছে। আমার টাকা, সম্পত্তি ও স্বর্ণালংকার অধিকাংশ আত্মসাৎ করেছে।
কোনো আক্ষেপ
পৃথিবীতে সব মা-ই মা না। খারাপ মা-ও আছে। দুর্ভাগ্যবশত আমার মা হয়তো আমাকে সেই পরিমাণ ভালোবাসতে পারেনি। আমার পরিবারের কাছে সবসময় সোনার ডিম পাড়া একটা হাঁস ছিলাম। দুধ দেওয়া একটি গরু ছিলাম। টাকা ছাপানোর মেশিন ছিলাম। সন্তান হিসেবে কখনোই ভালোবাসাটা পাইনি। তারপরও কোনো অভিযোগ নেই। এখনো নেই। অনেক মা-ই মেয়েকে দিয়ে খারাপ কাজ করায় আবার সম্পত্তির জন্য খুন করায়। আমার বেলায় তাই হয়েছে।
বোনদের মামলা
মামলা করলেই হবে না, তার সত্যতা থাকতে হবে। আমি নিজেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব। আমার সম্মানহানি করছে, চুপ করে বসে থাকব না। টাকা আত্মসাৎ ও হত্যাচেষ্টা করেছে, তখনো মাফ করেছি কিন্তু এখন আর মাফ করব না। অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। আমার প্রাপ্য ফেরত চাই। আমার টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম কিন্তু সেই টাকা মেরে খেয়েছে। আমার বাবার উপার্জন ছিল না। পরিবারের লোভের কারণে আজ আমি নিঃস্ব। আমার একটা গাড়ি ছিল সেটা দীপু চুরি করে নিয়েছে।
সন্তান আয়াত কেমন আছে?
সবাই ভালো আছে। স্বামী ও সন্তান নিয়ে ভালো আছি। কিন্তু মা, ভাইবোনেরা ভালো থাকতে দিচ্ছে না। মা আমার মর্যাদা দেয় না। আমি আমার জায়গায় ভালো আছি। পরিবার নিয়ে এখনো ঘোষণা দেইনি, যে কারণে এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না। মায়ের পরিবার যেভাবে নোংরা উপস্থাপন করছে সেই জায়গা থেকে আমার স্বামী ও সন্তানকে সামনে আনতে চাই না। পরিবার সামনে এলে অসম্মানিত করবে। আমি আমার জায়গায় যেখানে যেমন আছি আলহামদুলিল্লাহ ভালো থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু ভালো থাকতে দিচ্ছে না। আমার জানটুকু শুধু বাকি, তা ছাড়া সব নিয়ে গেছে। বাকি জীবনে একটু ভালো থাকতে চাই।
কাজে ফিরবেন?
আর ইচ্ছে নেই। দীর্ঘ ৩০ বছর সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু এই মুহূর্তে ক্যামেরার সামনে কথা বলছি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে। ব্যর্থ মানুষ বলছি এই কারণেÑ সবার মন জয় করতে পারলেও ৩০ বছর যাদের জন্য কাজ করেছি, এই হাতে যাদের লালন-পালন করেছি তাদের কাছে আমি অযোগ্য একজন মানুষ। তাদের মনমতো চলতে পারিনি। সেজন্যই বলেছি আমি একজন ব্যর্থ মানুষ। মানুষ তো সবসময় সবার কাছে ভালো হতে পারে না। আমি যখন ইনকাম করেছি দুহাতে দিতে পেরেছি তখন আমার পরিবারের কাছে অনেক প্রিয় একজন মানুষ ছিলাম। এখন তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে পারি না। তাই তাদের কাছে গলার কাঁটা, শত্রু এবং অপছন্দের মানুষ। দুইদিন যাবত দেখলাম আমার পরিবার কতটা নিচে নামতে পারে। কত হিংস্র ব্যবহার করতে পারে। কত নোংরা শব্দ ব্যবহার করতে পারে। এসবের কারণে আর কাজে ফিরতে মন চায় না।
অকৃতজ্ঞ পরিবার
আজ যে অভিযোগগুলো আমার মা-বোন করছে। শক্তভাবে আমি প্রতিবাদ করছি। এর পুরোটাই বানোয়াট। তাদের স্বার্থ উদ্ধার হয়নি বলে সত্য একটা জিনিসকে অসত্য বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছে। আমি একজন শিল্পী। আমি কি ভূমিদস্যু? যাদেরকে এই দুই হাতে ছোটবেলা থেকে লালন-পালন করেছি, জীবনের যে সময়টা উপভোগ করার সেই সময়টা তাদের জন্য ব্যয় করেছি। এটা আমার দায়িত্ব না। তারপরও ভাইবোনকে নিজের সন্তান হিসেবে লালন-পালন করেছি। নিজের ভবিষ্যৎ, ভালোলাগা, মন্দলাগা অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি। শুধু আমার ভাইবোনকে মানুষ করার জন্য। কিন্তু এখন এসে দেখলাম মানুষ তো হয়ইনি, হিংস্র পশুরও কৃতজ্ঞতা থাকে। এদের মধ্যে সেই কৃতজ্ঞতা নেই। অথচ আমার বিরুদ্ধে আত্মসাতের অভিযোগ করছে।
তাদের আত্মসাৎ করার মতো কী আছে?
অবহেলা বাবা (আমির হোসেন) সাড়ে চার বছর আমার কাছে ছিলেন। আমার থেকে যাওয়ার পর স্লো পয়জন দিয়ে বাবাকে হত্যা করেছে মা ও বোন। তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। সুচিকিৎসার অভাবে বাবা মারা গেছে। তাদের অনেক অপকর্মের প্রমাণ আমার কাছে আছে।
বিরতি
আমার একটা জীবন আছে। আমার মতো থাকতে চাই। মনে হয়েছে কাজ বন্ধ করা দরকার, করেছি। প্রতিটি মানুষের একটা বিরতির সময় আছে। আমিও ক্রেজ থাকাকালীন অবসর নিয়েছি। যে সিনেমাগুলো অসমাপ্ত তার দায়ভার আমি নেব না। কারণ, তাদের সময় দিয়েছি কিন্তু সেই সময়মতো কাজ শেষ করতে পারেনি। এর জন্য আমি দায়ী না।
প্রযোজনা
নতুন করে কাজ না করলেও প্রয়োজনায় ফেরার ইচ্ছে আছে। সময়-সুযোগ মতো জানাব। এত বছর পরিবারের জন্য সংগ্রাম করেছি। সিনেমা প্রযোজনা করলে নাম দেব ‘ভাইবোন শত্রু’ বা ‘মা কেন শত্রু’। আমার জীবন কাহিনি নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করব। সেটা দর্শক দেখুক বা না দেখুক। আমার গল্পটা সবাইকে জানাতে চাই। ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে পরিবার ও মিডিয়ার কাছে আমার প্রাপ্তি শূন্য। এ রকম অকৃতজ্ঞ মা ও ভাইবোন কাউকে আল্লাহ যেন না দেয়। স্বার্থ ফুরিয়ে গেলে যারা ভুলে যায়।
জিডি
খুলনার ইব্রাহীম মিয়া রোডে এস এ নং-১৬৭৯ ও ১৬৮০, খতিয়ান নং-১০৫৬, জমির পরিমাণ ০.০৯৯০ আছে। যার ৬ কাঠা জমির মালিক আমি। জমিতে যেতে ১০ ফিট জায়গা আমার। কিন্তু বোন ফিরোজা পারভীন খেয়ালী, মিয়া মুরাদ হোসেন, মিয়া আরাফাত হোসেন সামির (শুটার সামির) ও মা মরিয়ম বেগম জোর করে দখল করে আছে। যে কারণে তাদের নামে সাধারণ ডায়েরি করেছি। জিডি নং-৪৪৩।
আপনার মতামত লিখুন :