বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, খ্যাতিমান স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমি আর নেই।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে কিডনির রোগে ভুগছিলেন।
চলচ্চিত্রকর্মী ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন, ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি, গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্বেমি গত চার দিন আগে নিজের বাসায় ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান এবং পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় এবং সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। তবে, চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন লাইলুন নাহার স্বেমি। তিনি তৎকালীন পাকিস্তান ফিল্ম সোসাইটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ২০১৪ সাল থেকে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা সম্পাদনা করেছেন, যার মধ্যে ‘ধ্রুপদী’ ও ‘চলচ্চিত্রপত্র’ অন্যতম। এসব প্রকাশনার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র সংসদ কর্মীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন। তরুণ চলচ্চিত্র সংসদ কর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রিয় ‘স্বেমি আপা’।
লাইলুন নাহার স্বেমি স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা করেছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে। পেশাগত জীবনে তিনি স্থপতি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন এবং বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নকশায় কাজ করেছেন, যার মধ্যে রাজধানীর নগরভবনও রয়েছে। তাকে তার স্থাপত্যশিল্পে অবদানের জন্য আগা খান পুরস্কারসহ বেশ কিছু সম্মাননা দেওয়া হয়।
স্বেমি আপার জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৪ এপ্রিল। তার সহধর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি কামাল উদ্দিন ইকরাম। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং পরে গাজীপুরের জয়দেবপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।