ঢাকাই সিনেমার দাপুটে নায়ক ছিলেন মান্না। তিনি শুধু নায়কই না ছিলেন আপাদমস্তক একজন সিনেমাপ্রেমী। যার ভাবনায় শুধুই ছিল চলচ্চিত্র। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি এই শিল্প নিয়ে ভেবেছেন। তিনি পর্দায় যেমন ছিলেন প্রতিবাদী এমনকি বাস্তব জীবনেও তাই ছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাই ছিল তার স্বভাব। আর এ কারণেই তিনি দর্শকের মনে সহজে জায়গায় করে নিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের সিনেমা জগতে হয়ে উঠেন অদ্বিতীয়।
মান্নার জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে ঠিক সেই সময়ই ২০০৮ সালের আজকের দিনে (১৭ ফেব্রুয়ারি) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মান্না। যদিও পরিবারের দাবি- রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলার তার মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করা হয়।
এদিকে, প্রয়াত এই নায় জীবনী নিয়ে তৈরি হতে পারে অনেক সিনেমা- এমনটা নির্মাতারা অকপটেই স্বীকার করেন। সেই ভাবনা থেকেই মান্নার জীবন কাহিনি নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করেছেন তার স্ত্রী শেলী মান্না।
মান্নার স্ত্রী বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই মান্নাকে নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছি। ইতিমধ্যে একটা রাফ চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা অপেক্ষা করছি আদালতের রায়ের জন্য। যেহেতু তার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে, তাই শেষটা জানার অপেক্ষায় আছি। শেষটা জানা গেলেই সম্পূর্ণ হবে চিত্রনাট্য, তৈরি করতে পারব একটা কমপ্লিট সিনেমা।’
প্রতিবছরের মতো এবারও নায়কের মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিবার আর ভক্তদের পক্ষ থেকে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়েছে। শেলী মান্না বলেন, ‘মৃত্যুবার্ষিকী তো বেদনাদায়ক ব্যাপার। এখানে উৎসবের কোনো বিষয় নেই। প্রতিবছরের মতো এবারও পারিবারিকভাবে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে তার ভক্তরাও মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করে থাকে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্ম নেন মান্না। তার আসল নাম এসএম আসলাম তালুকদার। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পরই ১৯৮৪ সালে তিনি ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর আজহারুল ইসলাম খানের ‘তওবা’ ছবিতে অভিনয় করেন। পরে কাজী হায়াতের সঙ্গে থেকে একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজেকে সেরা নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন মান্না। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে, ‘সিপাহী’, ‘যন্ত্রণা’, ‘অমর’, ‘পাগলী’, ‘দাঙ্গা’, ‘ত্রাস’, ‘আম্মাজান’, ‘দেশ দরদী’, ‘অন্ধ আইন’, ‘স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘অবুঝ শিশু’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘জনতার বাদশা’, ‘লাল বাদশা’, ‘মা বাবার স্বপ্ন’, ‘হৃদয় থেকে পাওয়া’ ইত্যাদি।
আপনার মতামত লিখুন :