সম্পর্ক এবং অনুভূতির নানা দিক নিয়ে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে ‘৩৬-২৪-৩৬’ নামের একটি ওয়েব ফিল্ম। শুরুতে এটি ওয়েব ফিল্ম হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও এখন সিনেমা হিসেবে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। এরই মধ্যে সিনেমাটি সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে মুক্তির অনুমতি পেয়েছে।
রেজাউর রহমান, কারিনা কায়সার ও মোনতাসির মান্নানের রচনায় এবং রেজাউর রহমানের পরিচালনায় সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রার্থনা ফারদীন দীঘি, সৈয়দ জামান শাওন, কারিনা কায়সার। তবে মুক্তির দ্বারপ্রান্তে এসে সিনেমাটি থেকে পারিশ্রমিক না পাওয়ার গুরুতর অভিযোগ এনেছেন তরুণ সম্পাদনকারী ফয়সাল মাহমুদ। ক্যারিয়ারের প্রথম এডিট করা সিনেমা নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তিনি।
দীর্ঘ স্ট্যাটাসে ফয়সাল লেখেন, আগামী ৮ নভেম্বর ‘৩৬-২৪-৩৬’ নামের ফিল্ম রিলিজ হচ্ছে। আমার প্রথম এডিট করা ফিল্ম যেটা সিনেমা হলে যাচ্ছে সেটা নিয়ে আমার অনেক এক্সাইটেড থাকার কথা ছিল, কিন্তু আমি সেটা হতে পারছি না। এই ফিল্ম নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে কম বেশি কাজ করে যাচ্ছি। এই ফিল্মের পেছনে সবচেয়ে বেশি সময় দেওয়া দ্বিতীয় মানুষ সম্ভবত আমি। কিন্তু ফিল্ম রিলিজ ডেট হয়ে গেলেও আমার টাকা পাওয়ার ডেট পাই নাই এখনও।
তিনি আরও লেখেন, গত ৩-৪ মাস ধরে শুধু পাবো পাবো শুনছি কিন্তু অ্যাকাউন্টে টাকা আর আসে না। এর মধ্যে ধার-দেনা করে চলতে হচ্ছে। চাকরি আমার পোষায় না, জ্যাম ঠেলে অফিসে গিয়ে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না বিধায় আপ ওয়ার্ক মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করি। এবং বেশ অল্প সময়ে বেশ কয়েকটা ভালো ক্লায়েন্টও পেয়ে যাই। ফ্রিল্যান্স করে লাখ টাকা ইনকাম করা যেই ব্যাপারটা কথিত আছে সেটা আসলেও আমার সাথে হচ্ছিল।
ভয়ের কথা জানিয়ে বললেন, কিন্তু স্বপ্ন যেহেতু ফিল্মের দিকেই ছিল সবসময় এবং ফিল্মের পরিচালক আমাদের ভাই-ব্রাদার হওয়ায় উনি বলাতে কাজটা শুরু করি। স্ক্রিপ্টেও হাল্কা পাতলা কাজ করা হয়। কিন্তু এডিট করার ব্যাপারে আমার বড় একটা ভয় ছিল যে টাকা হয়ত ঠিকমত পাবো কিনা। বাংলাদেশের মিডিয়ায় কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার ভালো না। কাজের সময় হলিউড মানের আউটপুট চাইলেও টাকা দেওয়ার সময় কেউ কল ধরে না। যে কারণে দেশি মিডিয়ার কাজ করা বাদ দেই অনেক আগেই। কিন্তু এই ফিল্ম করতে গিয়ে প্রথমে ভয়ে থাকলেও পরে ভাবলাম যে চরকির কাজ যেহেতু তাই টাকা পাওয়া মনে হয় সমস্যা হবে না। তাই ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ বাদ দিয়ে ফিল্মটার কাজ করা শুরু করি।
কাজটা শেষ হওয়ার কথা ছিল অনেক আগেই। কিন্তু নানান কারণে ফিল্ম রিলিজ দিতে দেরি হতে হতে এই নভেম্বরে এসে ঠেকলো। এতে কাজ বাড়লেও টাকার পরিমাণ কিন্তু বাড়ে নাই। সেটাও মানতে কোন সমস্যা ছিল না, কিন্তু যেইটুকু টাকা পাই সেটুকু তো দিতেই পারত। কিন্তু না, তারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে প্রমোশন করবে, নিউজ করবে কিন্তু যারা ফিল্মের জন্য কাজ করল তাদের পাওনা টাকা দিতেই যত সমস্যা।
কাজটি করতে গিয়ে অনেক পিছিয়ে গিয়েছেন জানিয়ে ফয়সাল বলেন, অনেক কষ্টে কিছু টাকা পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ টাকা পাই নাই এখনও। এই ফিল্ম করতে গিয়ে মার্কেটপ্লেসে যেইটুকু আগাইছিলাম তা অনেকদিনের গ্যাপের কারণে আবার পিছিয়ে গেছি। পুরাতন ক্লায়েন্ট স্বাভাবিকভাবেই চলে গেছে। ফিল্ম কিন্তু ঠিকই রিলিজ পাবে। আশা করি, মানুষ পছন্দও করবে। কিন্তু আমি স্বাভাবিকভাবেই এই আনন্দের অংশীদার হতে পারব না। পকেটে টাকা না থাকলে কি ফুর্তি করা সম্ভব? আমি আসলে কথাগুলা না বললেও পারতাম। হয়ত এখন টাকা আরো বেশি দেরিতে পাবো অথবা পাবোই না, কিন্তু আসলে কাওকে না কাওকে কথাগুলা বলাই উচিত। কথা না বললে নতুন কথা আসে না। নতুন সমাধান আসে না।
সবশেষে তিনি লেখেন, প্রিয় চরকি টিম, ফিল্মের প্রমোশনের পেছনে লাখ লাখ টাকা খরচের আগে যারা খাটাখাটনি করে ফিল্মটা দাঁড় করালো তাদেরকে ঠিকমত পাওনা পরিশোধ করা উচিত ছিল। না হলে আপনাদের এই ফিল্ম নিয়ে লাফালাফি খুব বিশ্রী দেখায়।
এ ব্যাপারে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে ফয়সাল বলেন, ‘স্ট্যাটাস দেওয়ার পর পরিচালক যোগাযোগ করেছেন। তিনি জানালেন ২-১ দিনের মধ্যে বাকি টাকা দেবেন। এখন টাকার অপেক্ষায়। নিজের সেরাটা দিয়ে কাজটি করেছিলাম। কিন্তু কাজ শেষে ঠিক মতো পারিশ্রামিক না পেলে আমরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’
এ ব্যাপারে পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মন্তব্য করতে অনাগ্রহ জানান।
বলে রাখা ভালো, ‘৩৬–২৪–৩৬’ ওয়েব ফিল্ম হিসেবে গত জুলাইতে মুক্তির কথা ছিল। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তখন আর কনটেন্টটি মুক্তি দেয়া সম্ভব হয়নি। এখন এটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে।
আপনার মতামত লিখুন :