রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫, ০২:৫০ পিএম

অভিমানী তুমি কোথায় হারিয়ে গেছ

ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৫, ০২:৫০ পিএম

অভিমানী তুমি কোথায় হারিয়ে গেছ

গীতিকার, সুরকার ও গায়ক আজম খান

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত। চারদিকে শুরু হয় খুনোখুনি, বয়ে যায় রক্তবন্যা আর ধ্বংসস্তূপ। পাড়ায় পাড়ায় হামলে পড়ছে হানাদাররা। কমলাপুরের বাড়িতেও একদিন অস্ত্র উঁচিয়ে হাজির হয় পাক হানাদার বাহিনী। ওই বাড়িতে ছিল ২১ বছরের এক টগবগে তরুণ। বাড়িতে ঢুকে সেই তরুণের খোঁজ করে হানাদাররা।  না পেয়ে ছেলেটির  মা, বাবা ও বোনকে তিরস্কার করে চলে যায়।

সেই ছেলেটির নাম আজম খান। রাজধানীর আজিমপুরে ১৯৫০ সালের ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া ছেলেটি পরিবারের সঙ্গে কমলাপুরে চলে আসেন পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে। কমলাপুরের আলো-হাওয়ায় কৈশোর পেরোনো আজম খান গান শুরু করেন ষাটের দশকের গোড়ার দিকে। 

গান বলতে, রোজ সন্ধ্যায় গলির মোড়ে গিটার বাজিয়ে চায়ের কাপে কোরাস তোলা।

গানের সূত্র ধরে মহল্লার কিছু বন্ধুও জুটে যায় তার। গোটা দশেক চোখে-মুখে-বুকের স্বপ্ন, একদিন সংগীতের আকাশে নক্ষত্রের মতো জ্বলবেন তারা। কিন্তু নিজেরা নক্ষত্রের মতো জ্বলে উঠার আগেই দেশটাকে জ্বালিয়ে দিল পাকিস্তানি হানাদাররা। 

নিজের বাড়িতে ঢুকে পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি ২১ বছরের টগবগে যুবক আজম খান। গিটার ফেলে গানের বন্ধুদের নিয়ে হাতে তুলে নেন অস্ত্র। 

বাবাকে যখন বললেন- বাবা, যুদ্ধে যাব। বাবা কোনো দ্বিমত না করেই  বলেছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন না করে ঘরে ফিরবি না!’ যে আঙ্গুলে গিটারের টুং টাং শব্দ বাজত, সেই আঙ্গুলে এখন বন্দুকের ট্রিগার।  কুমিল্লা বর্ডার পেরিয়ে ত্রিপুরার আগরতলা হয়ে প্রশিক্ষণ নিতে গেলেন মেলাঘরে। 

সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের ২নং সেক্টরে মেজর এটিএম হায়দারের কাছে দুই মাস গেরিলার যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে কুমিল্লার সালদায় প্রথম সম্মুখ সমরে অংশ নেন আজম খান। গানে গানে মুক্তি সেনাদের সাহস যোগানো আজম খান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যমণি। 

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। বাংলাদেশ মুক্ত হলো। বাবাকে দেওয়া কথা রেখে দেশ স্বাধীন করে ঘরে ফিরলেন আজম খান। স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানের ধ্বংসস্তূপ, লাশ, গণকবর দাগ কাটে তার মনে। বুকভরা আফসোস নিয়ে কণ্ঠে তুলেছিলেন, ‘হায়রে হায় বাংলাদেশ’, ‘জীবনে কিছু পাব না রে’, ‘ওরে ও সালেকা ওরে ও মালেকা’, ‘সব মানুষই সাদা কালো’র মতো কালজয়ী গান। বাংলা গানের শ্রোতাদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী। হয়েছিলেন সবার গুরু। পপ গুরু আজম খান।

আজম খানের প্রকাশিত গানের অ্যালবামগুলোও ছিল শ্রোতাপ্রিয় সেই সঙ্গে বেশ ব্যবসাসফল। ১৭টিরও বেশি ব্যবসাসফল অ্যালবাম রয়েছে বাংলাদেশের এই রক আইকনের। এই রক লিজেন্ডের জনপ্রিয়তা শুধু  দেশেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তার মেধা, প্রজ্ঞা আর জনপ্রিয়তার রেস তাকে নিজের দেশের সীমানা ছাড়িয়ে উপমহাদেশের এক আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল। শুধু বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতই নয়, আজ যে কলকাতার ব্যান্ড শিল্পীরা রয়েছেন তাদের অনেকেরই অনুপ্রেরণার নাম আজম খান। 

একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক আজম খান বাংলাদেশের সংগীতে এক নতুন দিগন্তের শুধু সূচনা করেই থেমে যাননি বরং সংগীতের এই নতুন ধারাকে মানুষের মাঝে জনপ্রিয়ও করে গিয়েছেন তিনি। বাংলা গানে রকস্টাররা কিংবা যে সুপ্রতিষ্ঠিত রকগান তার ভিত রচনা হয়েছিল আজম খানের হাত ধরেই।  বাংলাদেশের প্রথম সফল রকস্টার আজম খান।

আজম খান শুধু গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তার পদচারণা ছিল নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপণেরও। ১৯৮৬ সালে বিটিভির ‘হীরামন’ নাটকে কালা বাউলা চরিত্রে অভিনয় করেন এই কিংবদন্তি। ২০০৩ সালে অভিনয় করেন ‘গড ফাদার’ নামের চলচ্চিত্রে। এ ছাড়াও গুরু আজম খানের ‘ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকস’ ‘বাংলালিংক’ ও ‘কোবরা ড্রিংকস’র বিজ্ঞাপনে মডেলিং দেশের বিজ্ঞাপন জগতে নতুন মাত্রা এনে দেয়। 

তারপরও একজীবনে আজম খানের ঝুলিতে যাওয়া পুরস্কারগুলোর মধ্যে বেস্ট পপ সিংগার অ্যাওয়ার্ড, টেলিভিশন দর্শক পুরস্কার, কোকাকোলা গোল্ড বটল পুরস্কার এবং মরণোত্তর একুশে পদক উল্লেখযোগ্য।

২০১১ সালের ৫ জুন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পরলোকে পাড়ি জমানো এ শিল্পী এখনো বাংলা গানের জগতে নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করছেন।

আজ ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি বাংলা সংগীতের গুরু আজম খানের জন্মদিন। শুভ জন্মদিন গুরু। ২০১১ সালের পর এই দিনটি এলেই তোমাকে বলতে ইচ্ছে করে  ‘অভিমানী তুমি কোথায় হারিয়ে গেছ’ । আজম খানের উল্লেখযোগ্য কিছু গান:- 

১. ওরে সালেকা ওরে মালেকা
২. পাপড়ি কেন বোঝে না
৩. অভিমানী
৪. আলাল ও দুলাল
৫. দিদিমা
৬. বাংলাদেশ
৭. বাংলাদেশ (দুই)
৮. হাইকোর্টের মাজারে
৯. অনামিকা
১০. এত সুন্দর দুনিয়ায়

 

 

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!