দেশের সংগীতাঙ্গনে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো প্রথম প্রযুক্তিনির্ভর কনসার্টের মাধ্যমে। অত্যাধুনিক লাইটিং, থ্রিডি ভিজ্যুয়াল ও এআই’র সমন্বয়ে ঢাকার একটি জমকালো ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ব্যতিক্রমী কনসার্ট। আর এই ঐতিহাসিক মঞ্চে দর্শকদের মোহিত করেছে জনপ্রিয় ব্যান্ড অর্থহীন। বিশ্ববিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান মার্সিডিজ-বেঞ্জের পরিবেশনায় দেশের প্রথম মিউজিক্যাল অনলাইন টিকেটিং প্ল্যাটফর্ম গেট সেট রক ও কমিউনিকেশন সংস্থা এ্যাসেনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয় ব্যতিক্রমী এ কনসার্ট।
শুরু থেকেই ব্যান্ডটির ভোকাল-গিটারিস্ট সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন ও অন্যান্য সদস্যদের অসাধারণ পারফরম্যান্সে দর্শকরা মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহারে মঞ্চজুড়ে তৈরি হয় এক অভূতপূর্ব দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ, যেখানে মিউজিকের সঙ্গে সমন্বিত ডিজিটাল ইফেক্টস নতুন মাত্রা যোগ করে। আর অ্যাকুয়েস্টিক ফরম্যাটেড আনপ্লাগড সেশনে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে শুনেন অর্থহীনের পারফরম্যান্স।
ব্যান্ডটির অসম্ভব জনপ্রিয় গান ‘আমার প্রতিচ্ছবি’ দিয়ে কনসার্ট শুরু হয়। এরপর একে একে তিনটি সেগমেন্টে প্রায় ২০টির মতো গান পরিবেশন করেন তারা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘কৃষ্ণচূড়া’, ‘এপিটাফ’, ‘বিজয়ের গান’, ‘গুটি’, ‘বিদ্রোহী’ প্রমুখ। এ ছাড়াও জন ডেনভারের জনপ্রিয় গান ‘এনিস সং’ কাভার করে তারা।
কনসার্টের এক আবেগঘন মুহূর্ত ছিল যখন বেজবাবা সুমন বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের গুরু রকসম্রাট আজম খানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শেষ সেগমেন্টে তাকে উৎসর্গ করে পরিবেশন করেন ‘অদ্ভুত সেই ছেলেটি’। কনসার্টের সেই অংশে হাজারও দর্শক নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান এই কিংবদন্তি গায়ককে।
সুমন বলেন, ‘আজম খান আমাদের রক্তে মিশে থাকা এক বিপ্লব। তার গান ছিল প্রতিরোধের ভাষা, ভালোবাসার ভাষা। আমরা আজও তার উত্তরসূরি হয়ে পথ চলছি।’
শ্রোতারা অর্থহীনের জনপ্রিয় গানগুলো গলা মিলিয়ে গেয়ে ওঠেন, আর ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে ব্যান্ডের দীর্ঘ সংগীতযাত্রার নানা মুহূর্ত। নতুন প্রযুক্তির সংযোজন এই কনসার্টের অভিজ্ঞতাকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে, যা দেশের সংগীত জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
কনসার্টের আয়োজক ও গেট সেট রক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিব রহমান সোহান জানান, প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভিডিও গেম ‘সাইবারপাঙ্ক ২০৭৭’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ভিন্নধর্মী এই একক কনসাটের আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যত-বান্ধব জনপ্রিয় এ সাইবার ভিডিও গেমসের থিমের আদলে ভিন্নধর্মী চার ঘণ্টার এই বিশেষ কনসার্টটি শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁওস্থ আলোকি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
সাইবার ভিডিও গেম থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া এ কনসার্টের শিরোনাম ছিল ‘অর্থহীন ২০৭৭: আ সাইবারপাঙ্ক অডিসি’। পৃষ্টপোষকতায় ছিল টুয়েলভ ক্লদিং, ইনফিনিক্স, রিভো, পোলার, নেসক্যাফে, পাঠাও, ক্যাটেরিং পামেরা, হ্যাভি মেটাল টি-শাট, আরএক্স এক্সপোজার, দ্য ম্যাড টিম, হিপ ক্রিয়েটর, কডিক্সেল। আর পিআর পার্টনার হিসেবে ছিল কুল এক্সপোজার কমিউনিকেশন। এ আয়োজনের সকল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় তৈরিকৃত ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট তৈরি করেছে ‘ভার্স ইমাজিন’।
আয়োজকদের মতে, এই কনসার্ট শুধু সংগীত পরিবেশনই নয়, বরং প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের সঙ্গে সংগীতের সংযোগ ঘটিয়ে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। একইসঙ্গে তারা একে খুবই ব্যবসাসফল কনসার্ট বলেও ঘোষণা দিয়েছে।
অর্থহীনের ম্যানেজার এহসানুল হক টিটো জানান, অর্থহীনের বেজবাবাখ্যাত জনপ্রিয় গায়ক সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন কনসার্টে তার জনপ্রিয় গানের পাশাপাশি নতুন অপ্রকাশিত গানও গেয়েছেন। এ ছাড়াও প্রিমিয়াম দর্শকরা অর্থহীনের সঙ্গে দেখা ও আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। বোনাস হিসেবে ছিল সুমনের অটোগ্রাফ ও ব্যান্ডের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ।
তার মতে, এই কনসার্ট লাইভ মিউজিক অভিজ্ঞতাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে সক্ষম হয়েছে এবং অর্থহীন এই পরিবর্তনের অগ্রভাগে।
প্রসঙ্গত, অর্থহীনের ফ্রন্টম্যান বেজবাবা সুমন দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। যদিও তিনি সুস্থ হয়েছেন, তবে তার স্বাস্থ্যের যাত্রা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপ, গাড়ি দুর্ঘটনায় সৃষ্ট স্পাইনাল ইনজুরি এবং চোখের সমস্যা তাকে দীর্ঘদিন মঞ্চ থেকে দূরে রেখেছিল। তার স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে অর্থহীন নিয়মিতভাবে কনসার্ট করতে পারেনি। তবে প্রায় এক বছরের বিরতির পর গত বছর তারা ‘লিজেন্ডস অব দ্য ডিকেড’ কনসার্টের মাধ্যমে আবারও মঞ্চে ফেরেন। এ ছাড়াও কনসার্টের পাশাপাশি অর্থহীন বর্তমানে তাদের আসন্ন আ্যালবাম ‘ফিনিক্সের ডায়েরি ২’ নিয়ে কাজ করছে।
