লাশ খুঁজে পাওয়ার ১০ দিন আগেই মারা গিয়েছিলেন অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে-তে নিজেদের বাড়ি থেকে জিন হ্যাকম্যান ও বেটসি আরাকাওয়ার মরদেহ এবং তাদের একটি কুকুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মার্কিন তদন্তকারীরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন কীভাবে অস্কারজয়ী অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান এবং তার স্ত্রী ক্লাসিক্যাল পিয়ানিস্ট বেটসি আরাকাওয়া মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যে তাদের বাড়ি থেকে দুজনের মরদেহ পাওয়ার পর এই তদন্ত শুরু হয়। খবর বিবিসি`র।
শুক্রবার কর্মকর্তারা জানান, প্রমাণ থেকে ধারণা করা হচ্ছে হ্যাকম্যান ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন, অর্থাৎ তাদের মরদেহ খুঁজে পাওয়ার ১০ দিন আগে।
কীভাবে এই মৃত্যুর ঘটনা সামনে এলো?
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে-তে নিজেদের বাড়ি থেকে জিন হ্যাকম্যান ও বেটসি আরাকাওয়ার মরদেহ এবং তাদের একটি কুকুরের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত এক কর্মী জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করলে এই ঘটনা সামনে আসে।
বিবিসির হাতে পাওয়া ৯১১ কলের রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, ওই ব্যক্তি কীভাবে দুইজনের মরদেহ দেখতে পেয়েছেন, তা ডিসপ্যাচারকে জানাচ্ছিলেন। ৯৫ বছর বয়সী জিন হ্যাকম্যানকে পাওয়া যায় রান্নাঘরের পাশে একটি ঘরে, আর ৬৫ বছর বয়সী বেটসি আরাকাওয়ার মরদেহ উদ্ধার হয় বাড়ির একটি বাথরুম থেকে। বাড়িটি হাইড পার্কের ওল্ড সানসেট ট্রেইল এলাকায় অবস্থিত।
দম্পতির `অনেক দিন আগেই` মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করেন শেরিফ আদান মেনডোজা।একজন গোয়েন্দা জানান, আরাকাওয়ার মরদেহে পচনের চিহ্ন দেখা গেছে। এমনকি তার হাত ও পায়ে মমির মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। হ্যাকম্যানের মরদেহেও স্পষ্ট মৃত্যু লক্ষণ দেখা গেছে, যা তার স্ত্রীর মৃত্যুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। দম্পতির পোষা জার্মান শেফার্ড জাতের কুকুরটিকেও মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, আরাকাওয়ার মরদেহের কাছাকাছি একটি বাথরুমের আলমারিতে। হ্যাকম্যান ও আরাকাওয়ার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কী জানা গেছে?
মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার পরপরই পুলিশ আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে কোনো কারণ জানায়নি কর্তৃপক্ষ জানায়, মরদেহে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তবে মৃত্যুকে "পর্যাপ্ত সন্দেহজনক" বিবেচনা করে তারা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না। শুক্রবার সান্তা ফে শেরিফের অফিস জানায়, কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার পরীক্ষা দুজনের ক্ষেত্রেই নেগেটিভ এসেছে।
আরাকাওয়ার মাথার কাছে একটি ছোট পোর্টেবল হিটার পাওয়া যায়। গোয়েন্দাদের ধারণা, তিনি হঠাৎ মাটিতে পড়ে গেলে সেটি উল্টে যেতে পারে। হ্যাকম্যান ও আরাকাওয়ার জন্য ময়নাতদন্ত ও টক্সিকোলজি পরীক্ষার অনুরোধ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফলাফল পেতে কয়েক মাস লাগতে পারে। স্থানীয় গ্যাস কোম্পানি এলাকায় কোনো গ্যাস লিকেজের প্রমাণ পায়নি। ফায়ার ডিপার্টমেন্টও কার্বন মনোক্সাইড নিঃসরণ বা বিষক্রিয়ার কোনো ইঙ্গিত পায়নি বলে অনুসন্ধান নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরাকাওয়ার মরদেহের কাছে বাথরুমের কাউন্টারের ওপর একটি ওষুধের বোতল ও কিছু ছড়িয়ে থাকা বড়ি পাওয়া যায়। অনুসন্ধান নথি অনুযায়ী, বাড়িতে পাওয়া ওষুধগুলো সাধারণত থাইরয়েড ও উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। হ্যাকম্যানকে পাওয়া যায় ধূসর ট্র্যাকস্যুটের প্যান্ট, নীল ফুলহাতা টি-শার্ট ও বাদামি স্লিপার পরিহিত অবস্থায়। তার মরদেহের পাশে সানগ্লাস ও একটি লাঠি পাওয়া যায়। গোয়েন্দাদের ধারণা, হ্যাকম্যান হঠাৎ পড়ে গিয়ে আহত হয়ে থাকতে পারেন।
কেন এই মৃত্যুকে সন্দেহজনক মনে করা হচ্ছে?
অনুসন্ধান নথিতে বলা হয়েছে, তাদের মৃত্যুর পরিস্থিতি এতটাই সন্দেহজনক যে এটি সম্পূর্ণ তদন্তের প্রয়োজন বলে মনে করা হয়েছে। জরুরি সেবা নম্বরে কল করা রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী বাড়ির সামনের দরজা খোলা অবস্থায় পান– যা সন্দেহের অন্যতম কারণ। তবে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বাড়িতে জোরপূর্বক প্রবেশের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। বাড়ির ভেতরেও কোনো কিছু এলোমেলো ছিল না।
শেরিফ আদান মেনডোজা বলেন, "সংঘর্ষের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। বাড়ি থেকে কিছু চুরি হয়েছে বা কোনো কিছু অস্বাভাবিকভাবে নষ্ট হয়েছে– এমন কোনো লক্ষণও দেখা যায়নি, যা থেকে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে মনে হতে পারে।" বাড়িতে দুটো সুস্থ কুকুর পাওয়া গেছে– একটি বাড়ির ভেতরে আর অন্যটি বাইরে ঘোরাফেরা করছিল।