উত্তম কুমার ফ্লপ মাস্টার থেকে হয়েছিলেন ব্লকবাস্টার

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ১০:০২ পিএম

উত্তম কুমার ফ্লপ মাস্টার থেকে হয়েছিলেন ব্লকবাস্টার

ছবি : সংগৃহীত।

নায়ক উত্তম কুমার ফ্লপ মাস্টার থেকে ব্লকব্লাস্টার হিট নায়ক হওয়ার পরে ক্রমশ শরীরচর্চায় মন দিয়েছিলেন। তিনি কিন্তু একদিনে উত্তম কুমার হননি। মহানায়ক উত্তম কুমার তিনি হয়ে উঠেছিলেন নিজেকে ঘষে মেজে, যার মধ্যে ছিলো তার শরীরচর্চাও। সবরকমের শরীরচর্চা তিনি করতেন। ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে ফাঁকে এ চর্চা তিনি করতেন।

কথায় আছে বাঙালি জাতির ‘ভুঁড়ি’ নিয়ে অপবাদ। কিন্তু উত্তম কুমার ছিলেন নির্মেদ। এক সময় উত্তমকে যোগ ব্যায়ামের প্রশিক্ষণ দিতে তার বাড়িতে নিয়মিত আসতেন ট্রেনার। এ ছাড়াও সাঁতার শিখেছিলেন উত্তম। রোজ ভোরবেলা যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের ফিটনেস ধরে রাখতেন উত্তম।

যখন উত্তম কুমার ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে থাকতেন তখন তিনি রোজ মিন্টো পার্কে হাঁটতে যেতেন। মাঝেমধ্যে সঙ্গে থাকতেন সুপ্রিয়া দেবী। মহানায়ক হাঁটলে তো লোক জমায়েত হয়ে যাবে। তাই রাত না থাকতেই রাত সাড়ে তিনটের থেকে হাঁটতেন উত্তম। একবার তো উত্তম কুমারকে দেখতে পেয়ে ভোরবেলাতেই ভিড় জমে যায়। শেষমেষ পুলিশ ভ্যানে করে উত্তমকে উদ্ধার করা হয়েছিল। সুপ্রিয়া দেবী ছুটেছিলেন পুলিশ ভ্যানের পিছন পিছন।

উত্তম কুমারের যোগ ব্যায়ামের আগ্রহ তৈরি হয় ভবানীপুরের এক দাদার শরীর চর্চা দেখে। তাঁর নাম ছিল কিরণময় চট্টোপাধ্যায়। এরপর প্রফেশানাল ট্রেনার রেখেও শরীরচর্চা করতেন উত্তম।

একবার উত্তম কুমার ঠিক করলেন, ভাই তরুণ কুমারকে শরীর চর্চা করাবেন, কারণ ভাই খুব মোটা হয়ে যাচ্ছেন। তার উপর তরুণ অভিনয় পেশাতেই আছেন, ফলে ওঁর শরীর চর্চার প্রয়োজন। কিন্তু বুড়ো ওরফে তরুণ তো ভীষণ আরামপ্রিয়, ঘুমকাতুরে।

দাদা উত্তম তাই গাড়ি করে ভবানীপুরের বাড়ি এসে আধো ঘুমন্ত বুড়োকে গাড়িতে তুলে মিন্টো পার্কে হাঁটতে নিয়ে যেতেন। আর বুড়ো যেতেন ফিরতি পথে ময়রা স্ট্রিটের বাড়িতে সুপ্রিয়া দেবীর হাতে বানানো ভালমন্দ ব্রেকফাস্ট খাবেন বলে।

যদিও তরুণকুমার বেশিরভাগ দিনই গাড়ির পিছনের সিটে ঘুমোতেন। তাই তিনি ক্রমশ মোটা হয়ে যান। পর্দায় তরুণ কুমার মানেই অবশ্য মোটাসোটা নাদুসনুদুস ব্যক্তিত্ব। সেটাই তাঁর ইউএসপি।

সেসময় উত্তম কুমার কী খাচ্ছেন, কী পরছেন- সব নিয়ে সিনে পত্রিকাগুলিতে খবর হত। উত্তম কুমারের বেশিরভাগ চরিত্র হত রোম্যান্টিক অভিনয়ের। সেসময় নায়ক সুদর্শন কিনা, বিচার হত সুন্দর মুখ দিয়ে। শরীর প্রদর্শনের পরিসর কম থাকত।

কিন্তু উত্তম কুমারের চেহারা দেখার প্রচণ্ড কৌতূহল ছিল ফ্যানদের। ছবিতে সুযোগ না থাকলেও কৌতূহল নিবারণ করলেন উত্তম নিজেই। সেই সময় উত্তম কুমারের প্রায় নগ্ন শরীরচর্চার ছবি প্রকাশিত হতেই তা হটকেকের মতো বিক্রি হয়, যা হয়ে ওঠে বাঙালির চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। উত্তম কুমার যে কতটা শরীর সচেতন তা সব বাঙালি জানতে পারেন। ফিটনেসের ব্যাপারে উত্তম হয়ে ওঠেন অনেক অভিনেতার অনুপ্রেরণা।

তবে শুধু নিজের শরীর চর্চার ব্যাপারেই নয়, তিনি যে মহানায়ক হয়েছিলেন তা অন্যকে সাহায্য করার ব্যাপারেও। কিছুদিন কুস্তি শিখেছিলেন মহানায়ক। যেতেন ইন্দিরা সিনেমাহলের পিছনে কুস্তির আখড়ায়। সেখানে বিখ্যাত ব্যায়ামবীর মনোতোষ রায় একটি ছেলেকে দেখিয়ে উত্তম কুমারকে বললেন, ‍‍`ছেলেটির প্রতিভা আছে। ভারোত্তলক। কিন্তু অর্থাভাবে বিদেশের প্রতিযোগিতার ময়দানে যেতে পারছে না।‍‍

উত্তম কুমার একবাক্যে সেই ছেলেটিকে টাকা দিয়ে দেন, কেবল শর্ত দেন দু‍‍`টি। যদি পুরস্কার জেতো তাহলেই আমার সঙ্গে দেখা কোরো, খালি হাতে এসো না। আর দুই, আমার দানের কথা ঘুর্ণাক্ষরেও কাউকে বলবে না। জয়যাত্রায় জয়ী হওয়ার আশীর্বাদ দেন উত্তম। ছেলেটি ট্রফি নিয়ে এসেই উত্তম কুমারের সঙ্গে দেখা করেছিল। পরের তরে এতটা উদারমনস্ক ছিলেন বলেই তিনি শুধু পর্দায় নয়, জনমানসেও মহানায়ক হতে পেরেছিলেন।

আরবি/জেডি

Link copied!