তরুণ গায়ক পারভেজ খান। শৈশবে বাবার কাছে তার গানের হাতেখড়ি। একটি গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েও মুখ ফিরিয়ে নেন তিনি। গান করতে গিয়ে হয়েছেন নানা তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি। তবুও হাল ছাড়েননি তিনি। এখনো গাইছেন পারভেজ।
সম্প্রতি তার গাওয়া ‘শুধু মানুষ হইলে হইতো না যদি মন না থাকে’ শিরোনামের গানটি অন্তর্জালে বেশ ভাইরাল। পেশাদার শিল্পী হিসেবে কোনো গানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে গাওয়ার সুযোগ না পেলেও নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত গান করছেন তরুণ এই গায়ক। আলোচিত গান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তুলে ধরেছেন- আরফান হোসাইন রাফি
পথচলা
খুব ছোট থেকেই গান করি এবং এটা করেই আমার পরিবার পরিচালনা করি। আমার বাবা হচ্ছেন সংগীত গুরু। আমি যখন ক্লাস টু-তে পড়ি, বয়স আনুমানিক ছয়-সাত; তখন থেকেই বাবার কাছ থেকে তালিম নিয়ে ছোটখাটো স্টেজ পারফর্ম করতাম। গান বাজনা করতে গিয়ে জীবনে অনেক কষ্ট করেছি এবং অনেক জায়গায় অনেক ভাবেই ছোট হয়েছি!
এমনও হয়েছে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার বাবা মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়েছেন। ক্যারিয়ারে একটা সময় ছিল, আমাকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেওয়া হতো! সেই ক্ষোভ বুকে ধারণ করেই আমি এখনো টিকে আছি। আশা করি, সামনেও টিকে থাকতে পারব। আমার ভেতরে সে জেদটা আছে এখনো।
রিয়েলিটি শোয়ের অভিজ্ঞতা
আমি চ্যানেল আই-এ সেরা কণ্ঠে একবার অংশগ্রহণ করেছিলাম। সেখানে আমি যে ধরনের গান করি, সে ধরনের গান গাইতে না দিয়ে বিচারকগণ গান নির্বাচিত করে দিয়েছিলেন। ফলে আমি গানটা না করেই চলে এসেছি। এ ছাড়া ইন্ডিয়ান জিটিভি সারেগামাপাতে নির্বাচিত হয়েছিলাম।
কিন্তু পাসপোর্টজনিত সমস্যার কারণে পারফর্ম করতে পারিনি। আমাকে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এ সময়ের মধ্যে আমি পাসপোর্ট তৈরি করতে পারিনি, তাই আর যাওয়া হয়নি। তবে আশা করছি সামনে জি বাংলা সারেগামাপাতে অংশগ্রহণ করব, এটা আমার স্বপ্ন।
হঠাৎ আলোচনায়
বর্তমানে আমার বেশকিছু গান জনপ্রিয় হয়েছে। ‘শুধু মানুষ হইলে হইতো না যদি মন না থাকে’, ‘জাতের মেয়ে কালা কইলেও ভালো’, ‘আমি একি করিলাম, না বুঝিয়া ভুল মানুষরে মন সপি দিলাম’ ইত্যাদি। এর মধ্যে প্রথম দুটি গান ছাড়িয়ে গেছে দেশ-বিদেশের সীমানা।
কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
‘শুধু মানুষ হইলে হইতো না যদি মন না থাকে’ গানটি এখনো অফিসিয়াল মুক্তি দেইনি। একস্ট্রিক একটা ভিডিও প্রকাশ করেছি। এরপর থেকেই শুভাকাক্সক্ষীদের অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি।
নিজের মৌলিক গান দেশ-বিদেশে এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করবে কখনোই ভাবিনি। গানটি প্রকাশ হওয়ার পর যখন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে শুরু করে, তখন ইন্ডিয়ার এক সিনেমাতে প্লে-ব্যাকের জন্য আমার এ গানটা চেয়েছিল এক পরিচালক।
কিন্তু একবারে কিনে নিতে চাওয়ায় আমার গুরুজনদের পরামর্শ অনুযায়ী আমি রাজি হয়নি। এ ছাড়া আমাদের চিত্রনায়িকা পরীমণি আপুরও বেশ প্রিয় এই গানটি। তিনি মাঝে মধ্যে ফেসবুকে শেয়ার করেন।
গানটির সৃষ্টি কীভাবে?
আড়াই মাস আগে গানটি লিখেছিলাম। সে সময় আমার স্ত্রীর সঙ্গে ছোট একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। তারপর সে আমার সঙ্গে অভিমান করে কথা বলেনি অনেকদিন। সেই সুবাদে বাসায় বসে বসে গানটি লেখা।
ব্যর্থতা থেকে গান
জনমুখে একটা কথা আছে যে, প্রেমে ব্যর্থ হলেই এমন গান সৃষ্টি হয়ে থাকে। কথাটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এসব গান আসলে ব্যর্থতা থেকেই আসে। কেননা মানুষের মনে আবেগ না থাকলে তো আর গল্প বের হয় না।
আমি জানি না বিষয়টা উল্লেখ করা ঠিক হবে কি-না। মানুষের জীবনে অনেক কিছুই হয়ে থাকে, প্রেমে ব্যর্থ হওয়া, ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলা! তবে যাকে হারিয়েছি তার চেয়ে ভালো মানুষ আমি পেয়েছি। তাই এখন অতীতকে মনে রাখিনি। কারণ, আমার এখন যে জীবন সঙ্গী আছে, সে তার চেয়ে ভালো।
পরিকল্পনা
গোটা জীবনটাই গানের সঙ্গে কাটিয়ে দিতে চাই। আমার বাবার স্বপ্ন ছিল আমি গায়ক হবো। সে স্বপ্নের সুতো ধরেই এগিয়ে চলছি। বিশ্বের কাছে নিজেকে এমনভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই যেন সবাই বলে, ‘বাংলাদেশের ছেলে পারভেজ খান, ভালো লেখক, সুরকার বা গায়ক’। এ ছাড়াও ভবিষ্যতে আমার বাংলা সিনেমায় প্লে-ব্যাক করার ইচ্ছা আছে।