ঢাকা সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়...

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৫, ১১:৪৫ এএম
কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ

সুরেলা কণ্ঠে তিনি গেয়েছিলেন ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, যে ছিল হৃদয়ের আঙিনায়, সে হারালো কোথায়, কোন দূর অজানায়’। আবার তার কণ্ঠে ভেসে এসেছে ‘হারানো দিনের মতো হারিয়ে গেছো তুমি’র মতো হৃদয় বিদীর্ণ করা গান। এসব গানের মতো তিনিও চলে গেছেন দৃষ্টিসীমার পরিধি ছাড়িয়ে।

বাংলা গানে কিংবদন্তিতুল্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ নিজের গাওয়া এই গানের মতোই চিরদিনের জন্য সবার দৃষ্টিসীমার অন্তরালে হারিয়ে গেলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের আজকের দিনে মারা যান। শারীরিকভাবে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও গুণী এই সংগীতশিল্পী আজীবন বেঁচে থাকবেন তার অনবদ্য সব কীর্তির মাঝে।

দেশাত্মবোধক গানে এ দেশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক কণ্ঠস্বর শাহনাজ রহমতুল্লাহ। তার গাওয়া কালজয়ী অজস্র জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান এখনো সর্বস্তরের বাঙালির প্রাণ স্পন্দিত করে। পরিচ্ছন্ন ও মায়াময় কণ্ঠস্বরের দিক থেকে বাংলা ভাষার শিল্পীদের মধ্যে শাহনাজ রহমতুল্লাহ নিজের স্বাতন্ত্রিক একটা পরিচয় তৈরি করেছিলেন।

দীর্ঘ ৫ দশকেরও অধিক সময়ের ক্যারিয়ারে তার মধুঝরা কণ্ঠে রয়েছে অসংখ্য কালজয়ী গান। দেশের গান এবং চলচ্চিত্রের গানে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়ে’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’, ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’র মতো প্রচুর জনপ্রিয় গান রয়েছে কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পীর গাওয়া।

তার গাওয়া দেশাত্মবোধক ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘আমায় যদি প্রশ্ন করে’ বাংলা গানের ভুবনে চিরস্থায়ী আসন পেয়েছে। দেশাত্মবোধক গানের জন্য সর্বসাধারণের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া চারটি গান স্থান পায়, যা আমাদের সংগীতকে করেছে অনন্য উজ্জ্বল ও শোভামণ্ডিত। 

বাবার অনুপ্রেরণা আর মায়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে একেবারে ছোটবেলায় শাহনাজের গানে হাতেখড়ি। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন। এরপর বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানে থাকার সুবাদে করাচি টিভিসহ উর্দু সিনেমাতেও গান করেছেন। সত্তরের দশকে অনেক উর্দু গীত ও গজল গেয়ে সংগীতপিপাসুদের মাতিয়েছেন শাহনাজ। সেসব গানে এখনো মানুষ মুগ্ধতায় ভাসেন।

গানের জগতে ৫০ বছরের অধিক সময়ের সংগীত জীবনে শাহনাজ রহমত উল্লাহর চারটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। অসংখ্য-অগণিত শ্রোতা-ভক্তদের অমোঘ ভালোবাসা ছাড়াও তার প্রাপ্ত পুরস্কার-সম্মাননার তালিকাটাও বেশ লম্বা। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯২ সালে রাষ্ট্র তাকে সম্মানিত করেছে একুশে পদকে। এর আগে ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাহনাজ রহমতুল্লাহ। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কিংবদন্তি এ সংগীতশিল্পী।