সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫

চিরসবুজ মহানায়িকা সুচিত্রা সেন চিরদিনের, চিরকালের

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২৫, ১১:১৫ এএম

চিরসবুজ মহানায়িকা সুচিত্রা সেন চিরদিনের, চিরকালের

মহানায়িকা সুচিত্রা সেন

বাংলা চলচ্চিত্রে চিরদিনের, চিরকালের অবিস্মরণীয় এক বিস্ময় মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। গত শতকের পঞ্চাশ আর ষাট দশকে বাংলা প্রেমের ছবিকে স্বর্ণযুগে পৌঁছে দিয়েছিল মহানায়ক উত্তম কুমারের সাথে তাঁর চিরসবুজ জুটি। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ তিন দশক লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে জন্ম দিয়েছেন রহস্যের মিথ। আজ মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৯১তম জন্মদিন।

সুচিত্রা সেনের জন্ম ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনায়, নানাবাড়িতে। তাঁর আসল নাম রমা দাশগুপ্ত। সুচিত্রা সেন পর্দা–নাম। পাবনা শহরের দিলালপুরের বাড়িতে কেটেছে তাঁর শৈশব–কৈশোর। ছিলেন পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ১৯৪৭–এ দেশবিভাগের আগেই পরিবারের সাথে কলকাতা চলে যান। এরপর থেকে কলকাতাতেই স্থায়ী হন। বিখ্যাত শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের একমাত্র কন্যা অভিনেত্রী মুনমুন সেন। 

সুচিত্রা সেনের চলচ্চিত্রে অভিষেক ১৯৫২ সালে। প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ মুক্তি পায় নি। মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবির নাম ‘সাত নম্বর কয়েদি’। তবে ১৯৫৪ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে সুচিত্রা সেনের জয়যাত্রা শুরু। তাঁর অভিনীত বাংলা ছবির সংখ্যা ৫০–এর অধিক। 

এছাড়া ৭টি হিন্দি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমার ছাড়াও সুচিত্রা বিকাশ রায়, বসন্ত চৌধুরী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক কুমার এবং হিন্দিতে দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, ধর্মেন্দ্র ও সঞ্জীব কুমারের সাথে অভিনয় করেছেন। 

সুচিত্রা–উত্তম জুটি ছিল সবচেয়ে রোমান্টিক ও জনপ্রিয়। এই জুটির একসাথে করা ছবির সংখ্যা ৩০। রূপালি পর্দার এই জুটির আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার সেই সময়ে সুচিত্রা সেন হয়ে উঠেছিলেন কোটি কোটি তরুণের স্বপ্নের মানুষ। আর নারীদের অনুসরণীয়। সুচিত্রা–উত্তম অভিনীত ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘শাপমোচন’, ‘শিল্পী’, ‘পথে হলো দেরী’, ‘হারানো সুর’, ‘গৃহদাহ’, ‘সাগরিকা’ ইত্যাদি।

সুচিত্রা সেন অভিনীত সবশেষ ছবি ‘প্রণয়পাশা’ মুক্তি পায় ১৯৭৮ সালে। এতে নায়ক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এরপর তিনি আর কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি। একসময় অভিনয় ছেড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে চলে যান অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। দীর্ঘ ৩৬ বছর তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন। 

বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের নিজস্ব ফ্ল্যাটে কন্যা মুনমুন, নাতনি রাইমা ও রিয়া এবং নিকটাত্মীয় ছাড়া আর কারোর দেখা করার অনুমতি ছিল না। আকর্ষণীয় সৌন্দর্য, কাহিনীর সাথে একাকার হয়ে যাবার অসাধারণ অভিনয় নৈপুণ্য, তাঁকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। তাঁর চালচলন, পোশাক ও সাজসজ্জা হয়ে উঠেছিল বাঙালি নারীর ফ্যাশন। 

তাই স্বেচ্ছা নির্বাসিত সুচিত্রা সকলের কাছে হয়ে উঠেছিলেন রহস্যের এক মিথ। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রয়াত হন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি এই নায়িকা। মৃত্যুর পরও তিনি হয়ে রইলেন চিরসবুজ, চিরতরুণ, বাঙালির চিরদিনের স্বপ্নের নায়িকা।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!