হঠাৎ করেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পরিদর্শনে আসেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই প্রথম তার এফডিসিতে আসা। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রুটিন কাজ অনুযায়ী এফডিসির খোঁজ-খবর সরেজমিনে নেওয়ার জন্যই এই পরিদর্শন।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনকে (বিএফডিসি) লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সরকার কাজ করছে।’ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিএফডিসি পরিদর্শন শেষে জহির রায়হান ভিআইপি প্রজেকশন হলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
বিএফডিসির সক্ষমতা বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুটিং, এডিটিংসহ চলচ্চিত্র নির্মাণসংক্রান্ত সব কাজ যেন বিএফডিসিতে সম্পন্ন হয়, সেই লক্ষ্যে সরকার সার্বিক সহযোগিতা করবে।’
বিএফডিসির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বিএফডিসির অবস্থান হওয়ায় এখানে চলচ্চিত্র নির্মাণসংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে।’ এসব সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
মাহফুজ আলম বলেন, ‘বিএফডিসিতে বেশকিছু সংকট রয়েছে। এসব সংকট সমাধানে সরকার কাজ করছে। আশা করছি, দ্রুত এর সমাধান সম্ভব হবে। সবার সহযোগিতায় সংকটগুলো আমার মেয়াদকালে সমাধানের চেষ্টা করব। এফডিসির প্রকল্প ও কবিরপুর ফিল্ম সিটির কাজ যাতে দ্রুত শেষ হয়, সেদিকে তাগিদ থাকবে।’
বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি বলেন, ‘আশা করি কেউ আর বৈষম্যের শিকার হবে না। এফডিসির প্রত্যেক কর্মচারী তথ্য উপদেষ্টা ও আমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি আগেই বলেছিলাম, ছয় মাসের মধ্যে এফডিসির পরিবর্তন করে দেখাব। দীর্ঘদিন ধরেই বেতন-বোনাস ঠিকমতো হচ্ছে না। এসব আমাদের বিব্রত করে। কথা দিয়েছিলাম, আমি সুযোগ পেলে সংকট সমাধানে কাজ করব। আশা করছি, কথার মান রাখতে পারব। সবার সহযোগিতায় এফডিসিকে ফের কর্মমুখী করব।’

এ সময় চিত্রনায়ক নাঈম বলেন, ‘আমাদের সমস্যাগুলো উপদেষ্টা আগে থেকেই অবগত। ফিল্ম সম্পর্কে তার জানাশোনা আছে। আশা করব, সংকটগুলো সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। আগের থেকে কাজের ভালো পরিবেশ তৈরি করবেন। আমাদের অনেক শিল্পীর অবস্থা ভালো না, চাইব সেদিকে তিনি সুনজর রাখবেন।’
আলাপকালে চলচ্চিত্র অভিনেতা শিবা শানু বলেন, ‘এফডিসিকে কর্মমুখী করতে নির্মাণ ব্যয় কমাতে হবে। ফ্লোরগুলো কাজের উপযোগী করতে হবে। সময়ের সঙ্গে সবকিছু আধুনিক হয়েছে, কিন্তু শুটিং ফ্লোরগুলো কাজের উপযোগী নেই। গরমের সময় ফ্লোরগুলোতে শুটিং করা কষ্ট। এসি ঠিক নেই, বৃষ্টির পানি পড়ে। এ রকম নানা সমস্যা রয়েছে। আশা করব তথ্য উপদেষ্টা সেদিকে নজর দেবেন।’
যোগ করে এই অভিনেতা বলেন, ‘শিল্পীদের পারিশ্রমিক বেশি না। আগেও যেমন ছিল, ঠিক তেমনই আছে। তেমন একটা পারিশ্রামিক বাড়েনি। দু-একজনের বেড়েছে। সেটা তার চাহিদা অনুযায়ী। সেটা দিয়ে সবার মান নির্ণয় করলে হবে না। এফডিসিকে কর্মমুখী করতে সবার আগে নির্মাণ ব্যয় কমাতে হবে। তাহলেই কাজে ব্যস্ত থাকবে এফডিসি।’
মতবিনিময় সভার আগে উপদেষ্টা বিএফডিসির নির্মাণাধীন কমপ্লেক্স, শুটিং ফ্লোর, এডিটিং শাখা, লাইট শাখা, কালার ল্যাব, সাউন্ড শাখা এবং পরিচালক ও শিল্পী সমিতির অফিস পরিদর্শন করেন। এ সময় বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি, কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা, চিত্রনায়ক নাঈম, অভিনেতা শিবা শানু, চলচ্চিত্র পরিচালক ও নির্বাহী সদস্য জাসাস কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সায়মন তারিক, শিল্পী সমিতির দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক জ্যাকি আলমগীর, কোষাধ্যক্ষ কমল, নির্বাহী সদস্য আলী রাজ, সুব্রত, রুমানা ইসলাম মুক্তি, সনি রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, শাহীন সুমন, কাবিরুল ইসলাম রানা, শাহীন কবির টুটুল, চিত্রনায়ক মেহেদেী’সহ সরকারি কর্মকর্তা ও চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :