পহেলা বৈশাখে বাঙালির প্রাণের উৎসব এবার যেন নতুন এক রূপ পেল। বাংলা নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রায় প্রথমবারের মতো অংশ নিলেন দেশের ব্যান্ডসংগীতশিল্পীরা। আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের তালে লোকসংগীতের সুরের মেলবন্ধনে তৈরি হলো এক ভিন্নধর্মী সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত এবারের শোভাযাত্রায় ব্যান্ড সংগীতশিল্পীদের উপস্থিতি নজর কেড়েছে সবার। ঐতিহ্যবাহী মুখোশ, রঙিন পটচিত্র ও বিশালাকৃতির প্রাণীর প্রতিকৃতির পাশাপাশি সরাসরি সংগীত পরিবেশনা শোভাযাত্রায় যোগ করে নতুন মাত্রা।
দেশের কিংবদন্তি ও নবীন ব্যান্ড যেমন ওয়ারফেইজ, সোলস, মেকানিক্স, আপেক্ষিক, বে অব বেঙ্গল, পাওয়ারসার্জ, ব্লাডসেল, নার্ভ, নাইন— প্রমুখ ব্যান্ডের সদস্যরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির (ডিইউবিএস) তরুণ সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে যুক্ত হয় আরও প্রাণচাঞ্চল্য।
শোভাযাত্রার ছন্দ তৈরি করে গিটার, স্নেয়ার ড্রাম ও মারাকাসহ বিভিন্ন বিদেশি এবং বাঁশি, বেহালা, খমকসহ লোকজ বাদ্যযন্ত্র। শিল্পীরা উদাত্ত কণ্ঠে গেয়ে শোনান বাংলা ব্যান্ডসংগীতের কালজয়ী গান—আজম খানের ‘বাংলাদেশ’, লাকী আখন্দের ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’, আইয়ুব বাচ্চুর ‘চল বদলে যাই’ ও মাইলসের ‘ফিরিয়ে দাও’। পাশাপাশি পরিবেশিত হয় ওয়ারফেইজের ‘পূর্ণতা’ ও অর্থহীনের ‘অদ্ভুত সেই ছেলেটি’। ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে ও নিপীড়িতদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গাওয়া হয় ‘ফ্রম রিভার টু দ্য সী’ শিরোনামের গানটিও।
সংগীতাঙ্গনের অনেকে মনে করছেন, এই অংশগ্রহণ ব্যান্ডসংগীতকে মূলধারার সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলাদেশে ব্যান্ডসংগীত চর্চা চললেও পাশ্চাত্য প্রভাবের কারণে অনেকেই ব্যান্ডসংগীতকে বিদেশি সংস্কৃতির অংশ বলে মনে করেন, যা দীর্ঘদিন ধরে এর স্বীকৃতি পাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি বিভিন্ন সময় এই ঘরানার সংগীতকে ‘অপসংস্কৃতি’ বলে চিহ্নিত করার নজিরও রয়েছে।
বাম্বার সহসভাপতি ও ওয়ারফেইজের ড্রামার শেখ মনিরুল আলম টিপু রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এবার আসলে অন্যরকম একটা পহেলা বৈশাখ আমরা উদযাপন করছি। খুব ভালো লাগছে। সার্বজনীন একটা উৎসব আমরা পালন করছি, যেটা অতীতে হয় ‘বাংলা ব্যান্ডসংগীতশিল্পী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী—সবার সঙ্গে মিলে আমরা একসঙ্গে আনন্দ করছি যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক আনন্দিত।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যান্ড সোসাইটির (ডিইউবিএস) সাধারণ সম্পাদক সালমান শাহরিয়ার আনন্দ প্রকাশ করে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আধুনিক যুগে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য ধারক ও বাহক হিসেবে প্রথমবারের মতো আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত। আশা করি, রক মিউজিকের সামাজিক, সাংস্কৃতিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও স্বীকৃতি অর্জনের পথে আজকের এই উদ্যোগ একটি নতুন অধ্যায় যোগ করবে।’
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে শোভাযাত্রায় আরও নতুন শিল্পমাধ্যম যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস, ঐতিহ্য আর নবীন ধারার এই সম্মিলন আগামী দিনগুলোতে সংস্কৃতিচর্চাকে করবে আরও বহুমাত্রিক ও বর্ণিল।
আপনার মতামত লিখুন :