ইনফিনিটি সাগার শেষে যেন পথ হারিয়েছে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’ ছবির পর দর্শকের প্রত্যাশা ছিল আরও কিছু বিস্ময়কর মুহূর্তের। কিন্তু একের পর এক দুর্বল গল্প, অতিরিক্ত চরিত্র আর আবেগহীন চিত্রনাট্য দর্শকদের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। ঠিক সেই সময় নতুন ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকাকে নিয়ে নির্মিত ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ নিয়ে কিছুটা আশাবাদী ছিলেন অনেকে।
কিন্তু বক্স অফিসে ছবিটির পারফরম্যান্স হতাশাজনক। যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তির নবম সপ্তাহে গিয়ে এটি ১৩০০-এর বেশি প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। ‘পিংকভিলা’ জানায়, ‘বক্স অফিসে বারবার পতনের মুখ দেখার পর ছবিটি বহুদিন ২০০ মিলিয়ন ডলারের গণ্ডি ছুঁতে পারেনি।’ পরে ‘কোইমই’ জানায়, ‘৬২ দিন পর ছবিটি অবশেষে এই লক্ষ্যে পৌঁছায়, যা মার্ভেলের অন্যান্য ছবির তুলনায় অনেক ধীরগতি।’
অভিনেতা অ্যান্তনি ম্যাকি ‘আইএমডিবি নিউজ’ মাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই চরিত্রটা নিয়ে আমি শুরু থেকেই ভয় পেয়েছিলাম। স্টিভ রজার্সের ছায়া এতটাই বড় যে তার বাইরে বের হওয়া কঠিন ছিল। দর্শকেরা যেন আমাকে ঠিকভাবে গ্রহণই করেনি।’
পরিচালক জুলিয়াস ওনাহ ‘ভ্যারাইটি’ মাধ্যমে জানান, ‘আমি চেয়েছিলাম এক মানবিক, দ্বিধাগ্রস্ত ও রাজনৈতিকভাবে সচেতন ক্যাপ্টেন অ্যামেরিকার গল্প বলতে। কিন্তু সম্ভবত সেই রূপটা সবার কাছে পৌঁছায়নি।’
প্রযোজক নেট মুর ‘ডেডলাইন’ মাধ্যমে মন্তব্য প্রকাশ করেন, ‘আমরা বুঝি যে ছবির টোন অনেকেই গ্রহণ করতে পারেননি। কিছু দৃশ্য ছিল পরীক্ষামূলক, যা দর্শকের একাংশ ধরতেই পারেনি।’
বর্তমানে ছবিটি ডিজিটাল রিলিজের অপেক্ষায় রয়েছে। ১৩ মে থেকে এটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ব্লু-রে আকারে পাওয়া যাবে। ডিজনি প্লাসে স্ট্রিমিং শুরু হলে সেখানে নতুন করে কিছু দর্শক টানতে পারে, এমনটাই আশা মার্ভেলের।
একই সময়ে মুক্তি পাওয়া ‘মাইনক্রাফট’ আশাতীত সাফল্য পায় এবং দ্বিতীয় সপ্তাহেই ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’র আয় ছাড়িয়ে যায়। ‘মুভিওয়েব’ জানায়, ‘এটি ২০২৫ সালের অন্যতম শীর্ষ আয়কারী ছবিতে পরিণত হয়েছে, যা মার্ভেলের জন্য একধরনের মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা।’
একই সময়ে মুক্তি পাওয়া গেম অবলম্বনে তৈরি অ্যানিমেটেড ছবি ‘মাইনক্রাফট’ পেছনে ফেলে দেয় ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’–কে। একটি জনপ্রিয় গেম অবলম্বনে তৈরি ‘মাইনক্রাফট’ ছবিটি অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অ্যানিমেটেড ঘরানার হওয়া সত্ত্বেও এটি বাচ্চা-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ প্রজন্মের দর্শকের মন জয় করে নেয়।
মুক্তির পর প্রথম সপ্তাহেই এটি দারুণ ব্যবসা করে এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গিয়ে ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’র আয়কে ছাড়িয়ে যায়। ‘মুভিওয়েব’ জানায়, ছবিটি বক্স অফিসে এতটাই ভালো করে যে এটিই হয়ে ওঠে ২০২৫ সালের অন্যতম শীর্ষ আয়কারী ছবি। এটি এক প্রকার মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা মার্ভেলের জন্য, কারণ এমন ব্র্যান্ড ভ্যালু থাকা সত্ত্বেও নতুন প্রজন্মের অ্যানিমেটেড গেম–ভিত্তিক ছবি মার্ভেলকে হারিয়ে দিচ্ছে।
তবু প্রশ্ন থেকেই যায়—ইনফিনিটি সাগার যুগের পর মার্ভেল কি আর কখনও তার পুরোনো গৌরব ফিরে পাবে, নাকি ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’ই হয়ে থাকবে তার আরেকটি ব্যর্থ প্রয়াস?