ঢাকা বোট ক্লাব ঘিরে আলোচিত পরীমণি ঘটনার পেছনে কারা দায়ী—এই প্রশ্নে মুখ খুললেন ক্লাবটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাসির মাহমুদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্লাবের রিভারভিউ লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নাসির দাবি করেন, ‘পরীমণি-কাণ্ডের পরে আমি তিন বছর বোট ক্লাবে আসতে পারিনি।’ তার কথায়, ‘আমি যেভাবে হেনস্তা হয়েছি, সেভাবে হেনস্তা হওয়ার কথা ছিল না।’
নাসির বলেন, ‘পরীমণি এই ক্লাবের সদস্য নন। তিনি কারো গেস্ট হয়ে ক্লাবে এসেছিলেন। অথচ ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী, অতিথি আনতে হলে সদস্যকে অনুমতি নিতে হয়। তার কোনো অনুমতি ছিল না। আমি তখন প্রতিবাদ করেছিলাম, আর সেটাই আমার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। তার উচ্ছৃঙ্খলতা আমি মানতে পারিনি।’
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রেসিডেন্ট বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তোলেন নাসির মাহমুদ। তার ভাষায়, ‘উনি আমাকে তিন বছর ক্লাবে আসতেই দেননি। আমি এলে আমাকে আয়নাঘরে বসিয়ে রাখা হতো। তার আশপাশে বাহিনী ছিল, যাদের দিয়ে অনেক কিছু করানো সম্ভব ছিল। আমি তখন ভয় পেতাম, কারণ আমি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী, আর তিনি ছিলেন রাষ্ট্রক্ষমতার একেবারে চূড়ায়। তবে আমি হাল ছাড়িনি। আইনি লড়াই করে গেছি। তার নামে তিনবার লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি।’
বোট ক্লাব সভাপতি অভিযোগ করেন, ‘এই ক্লাবের সদস্য পূর্ণাঙ্গ জাস্টিস, মন্ত্রী, সচিব, সামরিক-বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দেশের বড় বড় ব্যবসায়ী। এমন একটি ক্লাবের সভাপতি হতে হলে প্রভাবশালী সামাজিক অবস্থান থাকা দরকার। অথচ বেনজীর আহমেদ এখানে বিনা ভোটে সভাপতি হন। শুধুই সামাজিক সম্মানের জন্য—এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেওয়া তার ডক্টরেট ডিগ্রিও বিশ্ববিদ্যালয় বাতিল করেছে। সেই ডিগ্রি কেনার পেছনেও উদ্দেশ্য ছিল সম্মান অর্জন।’
আরও বলেন, ‘আমরা বর্তমানে একটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেনজীর ও সাবেক সেক্রেটারি তাহসিন আমিনের আর্থিক অনিয়ম তদন্ত করছি। প্রায় ৩২ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। হয়তো কিছুটা কমবেশি হতে পারে, তবে সেটা ২–৪ কোটির বেশি নয়।’
নাসির মাহমুদ জানান, ‘তখনকার আইনজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, আমার আইনি অবস্থান সঠিক। কোর্টে গেলে তাকে সভাপতি পদ ছাড়তে হবে। সেটা আঁচ করেই তিনি একসময় মিটিংয়ে বসতে চেয়েছিলেন। অথচ ক্লাবের এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে আমাকে বাদ দেওয়ার কোনো এখতিয়ার তার ছিল না। আমি তাকে ভয় পেতাম, এখন আর ভয় পাই না।’
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘বিভিন্ন চাপে আমরা তাকে প্রেসিডেন্ট পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলাম। এরপর তিনি ক্লাবের নিয়ম মানেননি, নির্বাচন দেননি, কোনো ডকুমেন্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সাবমিট করেননি। এতে ক্লাবের অস্তিত্বই হুমকিতে পড়ে যায়। আমরা নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়ে এখন নিয়মমাফিক সব কাজ করছি। তবে বাস্তবতা হলো—তিনি পালিয়ে যাওয়ার পরে নয়, তখনো ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচনের তারিখ দিতে বাধ্য হন। আমি ২৪ জুন তাকে আইনি নোটিশ দিয়ে বলেছিলাম, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।’
অবশেষে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত কমিটির সিদ্ধান্তে সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক সেক্রেটারি তাহসিন আমিনের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ক্লাবের নির্বাহী কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো. নকিব সরকার অপু, মো. জেসমুল হুদা মেহেদী অপু, আসমা আজিজ, এ কে এম আইয়াজ আলী (খোকন), আলীম আল কাজী (তুহিন), খালেদা আক্তার জাহান, মির্জা অনিক ইসলাম, আজাদ এম এ রহমান, মো. জাকির হোসাইন এবং খন্দকার হাসান কবির।