ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

৬০ কোটি টাকা দাবি করেন মডেল মেঘনা আলম

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৯:৫০ পিএম
একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মেঘনা আলম। ছবিঃ সংগৃহীত

মেঘনা আলম, ২০২০ সালের মিস আর্থ বাংলাদেশ বিজয়ী এবং মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন, সম্প্রতি একটি চাঞ্চল্যকর মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিদেশি কূটনীতিকদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।

২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল রাতে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে মেঘনা আলমকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেফতারের আগে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন, পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক তার বাসার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। লাইভটি ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চললেও, গ্রেফতারের পর তা মুছে ফেলা হয়।

১৫ এপ্রিল, ধানমন্ডি মডেল থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল আলীম বাদী হয়ে মেঘনা আলম, দেওয়ান সমির এবং আরও ২-৩ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, তারা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য, যারা সুন্দরী নারীদের ব্যবহার করে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতেন। বিশেষভাবে, ২৯ মার্চ ধানমন্ডির একটি জাপানি রেস্তোরাঁয় এক কূটনীতিকের কাছ থেকে ৫০ লাখ ডলার দাবি করার অভিযোগ রয়েছে যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ কোটি ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা।

দেওয়ান সমির, কাওয়াই গ্রুপের সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি ম্যানপাওয়ার প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি পূর্বে মিরাই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি তার প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় ও স্মার্ট নারীদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতেন এবং পরে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতেন।

১০ এপ্রিল, আদালত মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এই আদেশের ফলে মানবাধিকার সংগঠন ও সমাজের বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকে অভিযোগ করেন, এই আইন প্রয়োগ করে মেঘনাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে।

আদালতে মেঘনা আলম দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা এবং তিনি ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, তার সঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলানের সম্পর্ক ছিল এবং তারা বিবাহিত ছিলেন। তিনি আরও দাবি করেন, রাষ্ট্রদূত তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন এবং তিনি এই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

মেঘনা আলমের গ্রেফতার ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে তার পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক সহানুভূতি প্রকাশ করছেন, আবার অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, এই সহানুভূতির পেছনে কি কোনো অতীত লেনদেন বা সম্পর্ক রয়েছে? মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মেঘনার মুক্তির দাবি জানিয়েছে।

মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও তার গ্রেফতার বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে উঠেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে সত্য উদঘাটিত হয় এবং কোনো নির্দোষ ব্যক্তি অন্যায়ভাবে শাস্তি না পান।