চলচ্চিত্রের ১৩০ বছর, চীনা সিনেমার ১২০ বছর আর বেইজিং ফেস্টিভালের ১৫ বছর—এই তিন যুগপৎ মাইলফলককে ঘিরে এবার বেইজিং যেন পরিণত হয়েছে এক বিশাল পর্দাঘেরা স্বপ্নরাজ্যে। ১৮ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে ১৫তম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (বিজেআইএফএফ), যেখানে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর আধুনিকতার এক অনুপম মেলবন্ধন দেখা যাচ্ছে।
এই বছরের উৎসবটা আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে বিশেষ তিনটি কারণে। প্রথমত, ‘তিয়ানতান অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য মনোনীত ছবিগুলোর বেশিরভাগই চীনা নির্মাতাদের; দ্বিতীয়ত, পুরো আয়োজন জুড়ে রয়েছে নবীন চলচ্চিত্রকারদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ ‘রিলফোকাস ফ্রেশ ব্লাড’; আর তৃতীয়ত, বাণিজ্যিক দিক থেকে ‘বেইজিং ফিল্ম মার্কেট’ এশিয়ার অন্যতম সক্রিয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।

চলতি আসরের মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে রয়েছে তিনটি আলোচিত চীনা ছবি। নবাগত সাগারার থ্রিলার ‘ট্র্যাপড’ ছবিতে দেখা যাবে সীমান্ত শহরে এক পুলিশ অফিসার আর এক অপরাধীর মধ্যে ধরা-ছোঁয়ার উত্তেজনাকর খেলায় গড়ানো কাহিনি।
‘বেটার মি, বেটার ইউ’ ছবিতে হাও মিং ও লি পেইরানের সংবেদনশীল নির্মাণে উঠে এসেছে গৃহনির্যাতনের শিকার এক নারীর সংগ্রাম আর বন্ধুত্বের গল্প। আর ‘ডিপ ইন দ্য মাউন্টেনস’ ছবিতে লি ইয়োংইয়ের পরিচালনায় দেখা যাবে এক পুলিশ কর্মকর্তার তদন্তের আড়ালে থাকা হাস্যরসের ছোঁয়া।
শুধু সিনেমা নয়, এই উৎসব বেইজিং শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ‘বেইজিং ফিল্ম অ্যান্ড লাইফ ফেস্টিভ্যাল’-এর মধ্য দিয়ে। যেখানে সিনেমার পাশাপাশি থাকছে ফুড ফেস্ট, আর্ট মার্কেট, আর নগরের ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে সিনেমা সংস্কৃতির নানা আয়োজন। যেন পুরো শহরই হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত চলচ্চিত্রমঞ্চ।
এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ‘বেইজিং ফিল্ম মার্কেট’, যা ১৯ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। শৌচুয়াং·লাংইউয়ান স্টেশনে আয়োজিত এই মার্কেট এবারও বজায় রেখেছে ‘লেনদেন-নির্ভর, প্রদর্শনী-নেতৃত্বাধীন’ মডেল। এখানে চলচ্চিত্র কপিরাইট লেনদেন, প্রজেক্ট পিচিং এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নানা কার্যক্রম চলছে একসঙ্গে। আগ্রহীরা বিজেআইএফএফ এর অফিসিয়াল সাইটে গিয়ে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারছেন।
এবারের আসরে বিশেষ সম্মানিত দেশ সুইজারল্যান্ড। চীন-সুইস কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর উপলক্ষে এই বিশেষ সম্মান, যা এই বছরের ‘সিনো-সুইস কালচারাল অ্যান্ড ট্যুরিজম ইয়ার’-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
উৎসবজুড়ে দেশ-বিদেশের নির্মাতা, সাংবাদিক আর সিনেমাপ্রেমীদের একটাই প্রশ্ন—‘তোমার প্রিয় সিনেমা কোনটি?’—কেউ বলছেন ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’, কেউবা ‘নে ঝা ২’। এই প্রশ্নের উত্তরেই যেন খুঁজে পাওয়া যায় সিনেমার আসল সৌন্দর্য—একটি গল্প, যা ভাষা-ভাষান্তর ছাড়াই পৌঁছে যায় মন ছুঁয়ে।
বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫ প্রমাণ করল, সিনেমা শুধু পর্দায় দেখা নয়—এটা এক অনুভব, এক সংলাপ, এক উত্সব.. যা গোটা শহরকেই গল্পে পরিণত করে।