ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।
এরই মধ্যে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ১০৯টিরও বেশি নাটক। হিমি অভিনীত ১০৯টি নাটক প্রতিটি ১ কোটি ভিউজ স্পর্শ করেছে। এ সাফল্যে সহশিল্পী থেকে শুরু করে ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন সময়ের জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী। কাজ ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
কোটিপতি
কথাটি শুনতেই বেশ ভালো লাগছে। তবে হিসেব করে কাজ করা হয় না যে, কোনটির কত ভিউজ হয়েছে। কাজটিই মন দিয়ে করে যাচ্ছি। যখন জানতে পারি সব নাটক কোটি ভিউজ অতিক্রম করেছে, শুনে ভীষণ ভালো লেগেছে।
নিঃসন্দেহে এটি একজন শিল্পীর জন্য ভীষণ ভালো লাগার। সেই সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা বাড়ায়। ভালো কাজের ক্ষুধা বাড়ায়। সহকর্মী থেকে শুরু করে ভক্তরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, বেশ উপভোগ করছি।
সবাই বিষয়টি নিয়ে বেশ আনন্দিত। সহকর্মীরা ফেসবুকে পোস্ট করছে, এটি দেখে আরও ভালো লাগছে। সবার ভালোবাসায় দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সামনে আরও ভালো ভালো কাজ উপহার দিতে চেষ্টা করব।
চ্যালেঞ্জ
কখনো চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করা হয়নি। আমার জায়গা থেকে সব সময় সর্বোচ্চ ভালো করার চেষ্টা করি। দর্শক পছন্দ করেছেন বলেই সব নাটক কোটি ভিউজ অতিক্রম করেছে।
তবে কাজ করার আগে কখনো ভিউজের কথা মাথায় রেখে কাজ করিনি। ভিউজ আমাদের হাতে থাকে না। সবসময় সেরাটা দিয়ে কাজ করার চেষ্টা থাকে। ভিউজ থাকে দর্শকদের হাতে। তাদের ভালো লাগলেই কোটি ভিউজ হয়। সবকিছু তাদের কাছে। নিজের জায়গা থেকে কাজটি মন দিয়ে করি।
তর্ক-বিতর্ক
এটি ঠিক নাটকের ভিউজ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক আছে। অস্বীকার করা যাবে না। আমার কিছু কাজের ভিউজ বেশি হয়েছে। আবার কিছু কাজের ভিউজ কম হয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটিই হয়।
তবে এটি একটি মানদণ্ডে বিচার করা যাবে না। এখানে অনেক বিষয় থাকে। কাজ ভালো হয়েছে কিংবা খারাপ হয়েছে, সব ধরনের প্রতিক্রিয়া পাই। কিছু কাজের চরিত্র চ্যালেঞ্জিং থাকে। সেই জায়গা থেকে বর্তমানে ভিউজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা অর্থ লগ্নি করে ভিউজ বেশি হলে তাদের অর্থ উঠে আসে। অর্থ উঠে আসলে তখন প্রযোজকরা নতুন করে লগ্নি করতে আগ্রহী হয়। সবকিছু বিবেচনায় ভিউজ মুখ্য।
ব্যস্ততা
কোরবানির ঈদের কাজ নিয়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে। দুই ঈদের মধ্যে সময় কম পাওয়া যায়। সেই জায়গা থেকে এখন কাজের চাপ একটু বেশিই। যে কারণে মধ্যে রাত পর্যন্তও শুটিং করতে হচ্ছে।
গতানুগতিক কাজ থেকে ঈদের কাজগুলো ব্যতিক্রম করার সবারই চেষ্টা থাকে। সেখান থেকে আমার কষ্ট বেশি হয়ে যাচ্ছে। ঈদের নাটকের জন্য নতুন একটি জায়গায় শুটিং করেছি। যেখানে এর আগে শুটিং হয়নি। দর্শকদের কথা মাথায় রেখে লোকেশনে পরিবর্তন আনার জন্যই নতুন জায়গা বেছে নেওয়া। চাঁদরাত পর্যন্ত কাজ করব। আগের কিছু কাজ করা আছে সেগুলোও ঈদ আয়োজনে প্রচার হবে।
পিঞ্জর
প্রথমবার আদিব হাসানের পরিচালনা কাজ করেছি। ‘পিঞ্জর’ নামের এ নাটকে আমার সহশিল্পী নিলয় আলমগীর ভাই। বড় পরিসরে কাজটি হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা মিলিয়ে তিন দিন নাটকটির শুটিং করেছি।
বড় প্রজেক্ট যে, কারণে বেশ যত্ন নিয়ে কাজটি হয়েছে। সবসময় যে কাজ করি এটি তা থেকে একেবারে আলাদা। লোকেশনে একেবারে ভিন্নতা আছে। ফিল্মি ধাঁচে নাটকটি নির্মিত হয়েছে।
চরিত্র
বড়লোক বাবার আদরের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এখানে নিলয় ভাই লাশবাহী গাড়ি চালায়। গল্পের শুরুটা ট্র্যাজেডি দিয়ে। আমার দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বড়দা মিঠু ও শিবা শানু ভাই। ফিল্মি স্টাইলে কাজটি হয়েছে। আশা করছি, নাটকটি প্রচারে এলে দর্শক পছন্দ করবে।
লেট নাইট শুটিং
লেট নাইট শুটিং করায় আমার সেভাবে অসুবিধা হচ্ছে না। নিজে সবকিছু একা হাতে করতে হলে হয়তো কষ্ট হতো। আমার সবকিছু মা করে দেয়। সে জায়গা থেকে সহযোগিতা হয়।
টিম থেকেও সহযোগিতা পাই। বাবা শুটিংয়ে দিয়ে যায়। যে কারণে আমার সেভাবে অসুবিধা হচ্ছে না। আমার জন্য বাবা-মায়ের কষ্ট হয়। তা ছাড়া ক্রিয়েটিভ কাজ গৎবাঁধা সময়ে সম্ভব না। ৯টা ৫টা চাকরি হলে সময় মেইনটেইন করা যেত। কিন্তু সেটা তো এখানে সম্ভব না।
ক্রিয়েটিভ কাজে অনেক বিষয় জড়িত থাকে। অনেক সময় দেখা যায় কাজ করতে গিয়ে ভালো করার জন্য টিম বসে আলাপ করে গল্পে পরিবর্তন আনা হয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সেটে কাজ করা হয়।
যে কারণে না চাইলেও লেট নাইট হয়ে যায়। নাটকের বাজেট বাড়লে আর অসুবিধা হবে না। যদিও এখন আগের তুলনায় বাজেট বেড়েছে। অনেক কাজেই আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো বাজেট পাই। আর একটু যদি বাজেট বাড়ে তাহলে হয়ত আরও ভালো করা যাবে। তবে বাজেট বাড়লে তখন আরও ভালো করার তাড়না থাকবে। ৪০ মিনিটে একটা গল্প বলা কঠিন।
বড় পর্দা
এখন বড় পর্দা নিয়ে ভাবছি না। আর সেরকম সিনেমার প্রস্তাব আমার কাছে আসে না। ভালো সিনেমা দেখলে মনে হয় এখানে যদি আমি থাকতাম। তখন খুব আফসোস হয়।
যখন ভালো সিনেমার প্রস্তাব আসবে, তখন ভেবে দেখব। আপাতত নাটকেই খুশি। কারণ, এখানে অনেক অনেক চরিত্র করা যায়। খুব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়।
পছন্দের চরিত্র
সব সময় প্রিয়ডিক্যাল গল্প পছন্দ। ছোটবেলায় ‘হঠাৎ দেখা’ নামের একটি সিনেমা করেছিলাম। এটি দিয়ে শখ অনেকটা পূরণ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হঠাৎ দেখা কবিতা অবলম্বনে এটি নির্মিত হয়েছিল।
সামনে এমন কাজ পেলে ভালো লাগবে। আমি মূলত এরকম কাজই করতে চাই। আশি-নব্বই দশকের চরিত্র আমাকে খুব টানে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন নতুন চরিত্রে মেলে ধরতে চাই।
নাটক কেমন হচ্ছে
আমাদের নাটক এখন খুবই ভালো হচ্ছে। দর্শক নিজে থেকেই নাটক দেখছে। সামনে আরও ভালো হবে। আমরাও ব্যতিক্রম কাজ দেওয়ার চেষ্টা করছি। গল্প থেকে শুরু করে চরিত্র, লোকেশন সবকিছুতে এখন নতুনত্ব থাকছে। সীমাবদ্ধতার মধ্যে ভালো কিছু করার চেষ্টা থাকে। সবকিছু মিলিয়ে আমাদের নাটক ভালো হচ্ছে। আগের চেয়ে বাংলা সিনেমাও ভালো হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :