চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্য মামুনের বিরুদ্ধে পারিশ্রমিক না দেয়া ও অপেশাদারের অভিযোগ এনেছেন অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী। নির্মাতার সঙ্গে এ পর্যন্ত ‘কসাই’, ‘রেডিও’ ও ‘দরদ’ নামের তিনটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তার মধ্যে দুটি সিনেমা অনেক আগেই মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও আজও বুঝে পাননি ন্যায্য পারিশ্রমিক, এমনটাই দাবি অভিনেত্রীর।
এ প্রসঙ্গে এলিনা শাম্মী দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ-কে বলেন, ‘মহামারিকালে (২০২১ সালে) তার ‘কসাই’ সিনেমায় কাজ করি। তিন দিনে ২৪ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিল কিন্তু সেই টাকার এখনো ১৪ হাজার পাওনা। সেসময় আমি যে পারিশ্রমিক নিতাম মামুনের অনুরোধে দু-হাজার কম নিয়েছি। কিন্তু পুরো টাকা আজও পাইনি। ২০২৩ সালের মার্চে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রেডিও’ সিনেমা থেকে এক পয়সা আজও পাইনি। তখন আমার পারিশ্রামিক আরও বেশি ছিল।’
এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘দরদ সিনেমায় ভারতে ১৯ দিন শুটিং করেছি। মামুন আমাকে মাত্র ১৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। বড় বাজেটের সিনেমা কম করে দিলেও ২০ হাজার করে পারিশ্রামিক দিবে সে আশায় কাজটি করি। হিসেব অনুযায়ী ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাওনা। সেখানে মাত্র ১৬ হাজার টাকা পেয়েছি। বাকি টাকা চাইলেই ক্রাইসিসের কথা জানান।’
শুটিংয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে এলিনা বলেন, ‘আমি টাকা নিয়ে কথা বলার মানুষ না। তার ব্যবহারের জন্য এখন বলতে হচ্ছে। শুটিংয়ে প্রতিটি শটের আগে কুকুর বিড়ালের মতো ব্যবহার করেছে। বিদেশী শিল্পীদের সামনে অনেক দূর ব্যবহার করত। আমি পরীক্ষিত শিল্পী বলেই কাজটিতে নিয়েছে। এত খারাপ ব্যবহার করেছে বলে বোঝানো যাবে না। ভিনদেশ বলে চোখ মুখ বন্ধ করে কাজটি করে চলে আসি। ডাবিং নিয়ে অনেক নয় ছয় হয়েছে। এরকম নানান ভাবে সে আমাকে অপদস্ত করেছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে অনন্য মামুন বলেন, ‘তার কি চুক্তিনামা আছে? চুক্তি ছাড়া কথা বলা তো ঠিক হবে না। আমি যদি তাকে পূর্বের সিনেমায় ঠিকমতো পারিশ্রামিক না দেই তাহলে শেষ কাজটি করল কেন? তাকে সব টাকা দেয়া হয়েছে। যদি না দেয়া হত এতদিন চুপ ছিল কেন। অভিযোগ জানাতে হলে লিখিত থাকতে হবে। উদ্দেশ্য প্রণীত ভাবে এগুলো করছে। সে যদি আমার কাছে টাকা পেয়ে থাকে তাহলে এতদিন জানায়নি কেন?’
দূর ব্যবহার প্রসঙ্গে এই পরিচালক বলেন, ‘অভিনয় না করতে পারলে অবশ্যই একশতবার দমক দেব। তিনি ‘দরদ’ সিনেমায় মাত্র চারদিন কাজ করেছে। শুটিংয়ের আগে গিয়ে যদি সে অতিরিক্ত সময় থাকে সেটা তো আমার বিষয় না। তাছাড়া কোনো দিন আমাদের টাকা নিয়ে কথা হয়নি। চার দিনের ১৬ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়েছি। সে আমার কাছে টাকা পাবে না। যদি পেয়ে থাকে প্রমাণ সহ কথা বলুক।’
প্রথমে ফেসবুকে নাম প্রকাশ না করে একজন নির্মাতা উল্লেখ করে অভিযোগ নিয়ে আসেন এলিনা শাম্মী। তিনি লেখেন, ‘যে নির্মাতা সাবেক সরকারের আমলে দালালি, চাটুকারিতা, তোষামোদি করে টিকে থেকেছে, শিল্পীদের দিয়ে কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক দেয়নি, তার মুখে নীতিবাক্য মানায় না। কথার ফুলঝুরি ছড়িয়েছে সবসময়, চাপাবাজিতে সে বদ্ধপরিকর।’ নির্মাতাকে ‘চাটুকার’, ‘দালাল’ বলে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অভিনেত্রী।
এলিনা শাম্মীর এমন পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে সেই পরিচালকের নাম জানতে চান অনেকে। ওই রাতেই অনন্য মামুন লেখেন, ‘একজন অদক্ষ অভিনেতা আমার সিনেমায় কাজ না করতে পেরে এখন গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। টিজারে নিজের মুখটা না দেখতে পারাই কি কষ্ট?’
এরপরেই অনেকে ধারণা করেন অনন্য মামুনের বিরুদ্ধেই এমন পোস্ট দিয়েছেন এলিনা। কারণ মুক্তির অপেক্ষায় আছে তার ‘দরদ’ সিনেমা। পরবর্তীতে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি স্বীকার করেন এলিনা।
আপনার মতামত লিখুন :