শেষবারের মতো এফডিসিতে পৌঁছালেন অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। শনিবার সকাল ১১ টা ১৬ মিনিটে লাশবাহী গাড়ি এফডিসিতে পৌঁছে।
সনি রহমান জানিয়েছেন, বাদ জোহর এফডিসিতে প্রথম জানাজা শেষে অভিনেত্রীকে নিয়ে যাওয়া হবে তেজগাঁও চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজে শেষে বনানী কবরস্থান দাফন করা হবে।
অঞ্জনাকে শেষবারের শ্রদ্ধা জানাতে এফডিসিতে এসেছেন নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, অঞ্জনা আপার অসুস্থতার খবর আগে থেকে জানতে পারলে আমরা হয়ত তাকে আর একটু বেশি সময় দিতে পারতাম। তার মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। তার মিষ্টি হাসি আর কাজ অঞ্জনা আপাকে সবার মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে।
অভিনেত্রী রিয়ানা পারভিন পলি, রুমানা ইসলাম মুক্তি, সনি রহমান, জয় চৌধুরী, নৃত্য পরিচালক ইউসুফ খান, শ্রাবণ সাহা, পরিচালক ছটকু আহমেদ সহ এফডিসিতে জড়ো হচ্ছেন চলচ্চিত্রের মানুষরা।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
অঞ্জনাকে বুধবার রাত থেকে হাসপাতালে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। শুক্রবার রাত ১টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য ও অভিনেতা সনি রহমান।
রক্তের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া, ফুসফুসে পানি আসা, ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যাওয়া, এর মধ্যেই স্ট্রোক হওয়াসহ নানা জটিলতা তৈরি হয় অভিনেত্রীর। এক পর্যয়ে তাকে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়।
ঢাকায় এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে অঞ্জনার জন্ম। ছোটবেলা থেকে নাচের প্রতি তার আগ্রহের কারণে বাবা-মা তাকে নাচ শিখতে ভারতে পাঠান। সেখানে তিনি ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের কাছে নাচের তালিম নেন, শেখেন কত্থক।
সিনেমায় আসার আগেই অঞ্জনা পরিচিতি পান নৃত্যশিল্পী হিসেবে। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি ঢাকাই সিনেমায় কাজ শুরু করলেও তার মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র ছিল শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’।
নায়ক সোহেল রানার বিপরীতে ওই সিনেমার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি অঞ্জনাকে। নিজের সেরা সময়ে ঢাকাই সিনেমার প্রথম সারির প্রায় সব নায়কের বিপরীতেই অভিনয় করেছেন তিনি।
নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে ৩০টি সিনেমায়, যার মধ্যে রয়েছে ‘অশিক্ষিত’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘আশার আলো’, ‘জিঞ্জির’, ‘আনারকলি’, ‘বিধাতা’, ‘বৌরানী’, ‘সোনার হরিণ’, ‘মানা’, ‘রামরহিমজন’, ‘সানাই’, ‘সোহাগ’, ‘মাটির পুতুল’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ও ‘অভিযান’এর মত দর্শকনন্দিত চলচ্চিত্র।
এছাড়া ভারতের সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী; পাকিস্তানের অভিনেতা ফয়সাল, নাদীম, জাভেদ শেখ, ইসমাইল শাহ; নেপালের শীবশ্রেষ্ঠ ও ভুবন কেসির সঙ্গেও অভিনয় করেছেন এই নায়িকা।
চার দশকের ক্যারিয়ারে শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। ‘গাংচিল’সিনেমার জন্য ১৯৮২ সালে এবং ‘পরিণীতা’সিনেমার জন্য ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পাশাপাশি তিনবার বাচসাস এবং নৃত্যে দুবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৯৯২ সালের পর থেকে সিনেমায় অনিয়মিত হয়ে যান অঞ্জনা। ২০০৮ সালে মুক্তি পায় তার সর্বশেষ সিনেমা ‘ভুল’।
অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে গেলেও তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান `অঞ্জনা ফিল্মস` থেকে ‘প্রাণ সজনি’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’, ‘চালু সরদার’সহ অনেকগুলো সিনেমা মুক্তি পায়। পর্দায় সক্রিয় না হলেও চলচ্চিত্র অঙ্গনে নিয়মিতই যাতায়াত ছিল তার।
আপনার মতামত লিখুন :