মুক্তি পেয়েছে তেলুগু ভাষার সিনেমা ‘দেভারা’র প্রথম পর্ব। মুক্তির প্রথম দিনেই বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ আয় করে ফেলেছে সিনেমাটি। এই সিনেমার হাত ধরে দক্ষিণী ফিল্মজগতে প্রথম পা রাখেন শ্রীদেবীর কন্যা জাহ্নবী কাপুর। জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে জুটি বেঁধে সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন নায়কের চেয়ে ১৪ বছরের ছোট জাহ্নবী। ‘দেভারা’ সিনেমাতে সব থেকে বেশি প্রশ্ন উঠেছে জাহ্নবী কাপুরের ভূমিকা নিয়ে। উল্লেখযোগ্য একটি নাচের দৃশ্য ছাড়া গল্পে তার অবদান প্রায় নেই বললেই চলে। গত বছর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছিল বরুণ ধাওয়ান ও জাহ্নবী কাপুর জুটির প্রথম সিনেমা ‘বাওয়াল’।
এটি রোম্যান্টিক ফিল্ম হলেও সিনেমাতে ছিল এক গভীর মনস্তাত্বিক টানাপোড়েনের গল্প। আর পাঁচটা ফিল্মের থেকে বাওয়াল একদম ভিন্ন ঘরানার সিনেমা ছিল।‘বাওয়াল’-এ প্রথমবার বরুণ এবং জাহ্নবীকে জুটি হিসেবে পেয়েছিলেন দর্শকরা। জাহ্নবী বলিউডের উঠতি অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়। অল্প সময়ের মধ্যেই ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের অভিনয়ের ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হিন্দি সিনেমাতে মেয়ের অভিষেক দেখে যেতে পারেননি অভিনেত্রীর মা শ্রীদেবী।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে ‘ধড়ক’ সিনেমার মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন জাহ্নবী। কিন্তু তার আগেই মারা যান শ্রীদেবী। ওই বছরেই ফেব্রুয়ারি মাসে পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দুবাই গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই মৃত্যু হয় জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর। তার মতে, মাকে হারানো তার জীবনের সব থেকে বড় যুদ্ধ হারার সমান। অভিনেত্রী বলেন, আমার জীবনের সব থেকে বড় যুদ্ধ ছিল মা। ‘ধড়ক’র শুটিং এবং মায়ের চলে যাওয়ার সঙ্গে লড়াই করা সহজ ছিল না।
এই সময়কেই তার জীবনের সব থেকে কঠিন সময় হিসেবে উল্লেখ করেন জাহ্নবী কাপুর। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত জীবনের ওই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করার মনোবল তৈরি করাটাই সব থেকে কঠিন ছিল। সমাধান খুঁজে বের করাটাই আমার জীবনের সব থেকে বড় যুদ্ধ ছিল। শ্রীদেবীর মৃত্যুবার্ষিকীতে সামাজিক মাধ্যমে মায়ের সঙ্গে নিজের শৈশবে তোলা একটি ছবি পোস্ট করে সঙ্গে লেখেন, এখনও তোমাকে খুঁজে বেড়াই মা। নতুন সিনেমা ‘উলঝ’-এ মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহ্নবী কাপুর। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মাহি’ সিনেমাতে জাহ্নবীর ছিলেন একজন ডাক্তার।
এর আগে জাহ্নবী ‘ধড়ক’, ‘গুঞ্জন সাক্সেনা: দ্য কারগিল গার্ল’, ‘মিলি’, ‘রুহি’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ক্যারিয়ারে খুব বেশি হিট দিতে পারেননি। তবে ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে অভিনয় করে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু বক্স অফিসে সেভাবে কোনও সিনেমাই সফল হয়নি। ক্যারিয়ারের গোড়াতে গুঞ্জন সাক্সেনার চরিত্রে অভিনয় করে সিনে সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস মাহি’ সিনেমায় মহিলা ক্রিকেটারের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জাহ্নবী টানা দু’বছর ক্রিকেটের ট্রেনিং নিয়েছেন। আর তখনই দুই কাঁধের লিগামেন্ট ছিঁড়ে মারাত্মক পরিণতি হয় তার। ওই সিনেমাতে ট্রেলারে উঠতি ক্রিকেটারের চরিত্রে জাহ্নবীর অভিনয় দর্শকের মন জয় করে নিয়েছে।
অভিনেত্রী অকপটে জানান, খেলাধুলা নিয়ে বিশেষ কোনও জ্ঞান নেই। কোনও দিন খেলাধুলা করার অভ্যেসও ছিল না। শ্রীদেবী ও বনি কাপুরের মেয়ে বলে কথা! পারিবারিক কৌলিন্য কি কম! পরিচালক বাবা বনি কাপুর এবং কিংবদন্তি অভিনেত্রী মা শ্রীদেবী হওয়ায় বলিউডে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে খুব একটা পরিশ্রম করতে হয়নি। তবে নেপোটিজমের বিতর্ক পিছু ছাড়েনি জাহ্নবীর। শ্রীদেবীর মেয়ে হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই মিডিয়ার নজরে তিনি।
তবে এবার ছোটবেলার ভয়ংকর ঘটনা সামনে এনেছেন অভিনেত্রী। এমন এক পরিবারের মেয়ে হয়েও ‘নীল ছবির সাইটে’ ফাঁস হয়ে যায় জাহ্নবীর ছবি। সেই সময় বয়স ছিস মাত্র ১২। দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি কিশোরী জাহ্নবী। হয়তবা তারকা-কন্যা হওয়ার খেসারতই দিতে হয় তখন তাকে। শ্রীদেবী-কন্যা তিনি। ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরার সামনে বেড়ে ওঠা। সারাক্ষণই আলোকচিত্রীদের ক্যামেরার সামনে থাকতেন। এত বড় কিংবদন্তি অভিনেত্রীর মেয়ে হওয়ার সুবাদে বিশেষ কিছু করার আগেই চলে আসেন প্রচারের আলোয়। তখন প্রতিদিনই ছবি উঠছে তার। মাত্র ১২ বছর বয়সে ওঠা তার একটি ছবি ফাঁস করে দেওয়া হয় জনপ্রিয় একটি প্রাপ্তবয়স্কদের ছবির সাইটে। কিশোরী জাহ্নবীর ছবিতে কারসাজির জন্য স্কুলেও হেনস্থা হতে হয়েছে তাকে। সে সময় তাকে কিংবা তার বোন খুশি কাপুরকে দেখলেই নাকি ছুটে আসতেন ছবি শিকারিরা।
জাহ্নবী জানিয়েছেন যে কীভাবে অন্যরা তাকে দেখেন। কিন্তু নিজের ইচ্ছেমতো পোশাক পরার অধিকার সবার আছে। লোকে কী ভাবছে সেটা ভেবে নিজের ইচ্ছার বিসর্জন দেয়া সাজে না। নারীবাদী হিসাবে এটা তার মূল্যবোধের বিপরীতে। জাহ্নবী জানিয়েছেন, একটা সময় অবধি শরীরের গঠন নিয়ে অস্বস্তি ছিল তার। তবে ধীরে ধীরে সে অস্বস্তি কাটিয়ে ওঠেন তিনি। ক্রমে নিজেকে লাস্যময়ী নায়িকা হিসাবে গড়ে তুলেছেন শ্রীদেবী-কন্যা। এখন যেন তিনি অনেক বেশি সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী।
কয়েকদিন আগে সিনেমার প্রচারে মহাত্মা গান্ধী ও বি আর আম্বেদকরকে নিয়ে মন্তব্য করে জোর সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন জাহ্নবী কাপুর। এরপর যৌনতা নিয়ে কথা বলে ফের নেটপাড়ার হাসির খোরাক হয়েছেন শ্রীদেবী কন্যা। সম্প্রতি একটা ভিডিওতে তাকে স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান-এর ভূমিকায় দেখা যায়। সেই অনুষ্ঠানেই মজা করে ডেটিং ও ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা নিয়ে নানান কথা বলেন। প্রেমের প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে ঘনিষ্ঠতার কথা। তখনই জাহ্নবী বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে রেড ফ্ল্যাগ নয়, রেড ক্রসের কথা মাথায় রাখুন।
প্রেম থাকুক তবে ক্লিনিক্যাল বিষয়টিও যেন মাথায় থাকে। কারণে শারীরিক ঘনিষ্ঠতার সময় ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শে হিউম্যান প্লয়াপিলোমা ভাইরাস ছড়াতে পারে। হ্যান্ডসেক বা চুমুতে সমস্যা নেই। যৌনাঙ্গের সংস্পর্শেই কিন্তু সমস্যা হয়। অর্থাৎ জাহ্নবী নিজের কথার মাধ্যমে ‘নিয়ন্ত্রিত যৌনতা’-র কথাই বলেছেন। ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা নাকি এমন জায়গায় পৌঁছত যে জাহ্নবী তার সম্পর্ক ভাঙতেও উদ্যত হয়েছেন একাধিকবার। প্রায় প্রতি মাসেই যখন যন্ত্রণা অসহ্য হয়ে উঠত, তার প্রভাব গিয়ে পড়ত সম্পর্কের উপর।
শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়তেন তিনি। কিন্তু যখনই বাড়িতে অবসর সময় কাটাতাম, যন্ত্রণায় আমার শরীর অবশ হয়ে যেত। প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের সময় আমার নিতম্বে যন্ত্রণা করত। আগে পিঠে ব্যথা করত। একটা সময় নাক দিয়েও রক্ত পড়ত। এই প্রসঙ্গে অভিনেত্রী বললেন, প্রত্যেক মাসে যখন ঋতুস্রাব শুরু হত, এই মানুষটার সঙ্গে আমি সম্পর্ক ভাঙতে চাইতাম। সম্পর্কে আসার প্রথম তিন-চার মাসে, এই দেখে ও হকচকিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছুদিন একসঙ্গে থাকার পরও বুঝতে পেরেছিল বিষয়টা। অভিনেত্রী আরও বলেন, সম্পর্ক ভাঙার দু’দিন পরে আবার আমিই কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে ক্ষমা চাইতাম। আমি বুঝতে পারতাম না, আমার মানসিক অবস্থা এমন কেন হত! সাংঘাতিক পর্যায় পৌঁছে যেত।
আপনার মতামত লিখুন :