নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন বাংলার নাট্যভুবনে এক অনন্য উজ্জ্বল নাম। সত্তর-আশির দশকের উত্তাল এই শিল্পমানব বাংলার নাট্যাকাশে অনবদ্য এক পথরেখার সূচনা করেন। গণমানুষের বলা-না’বলা জীবন কথা, তাদের আনন্দ-বেদনা, বিরহ-যন্ত্রণা সবই শৈল্পীক মহিমায় ধরা দিয়েছে সেলিম আল দীনের নাট্য প্রয়াসে।
প্রজ্ঞা, মেধা, মনন ও দক্ষতায় যে ক’জন নিরলস সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব আমাদের সহজিয়া লোকজ বাংলার উর্বর সংস্কৃতিকে বহুমাত্রায় বহুদূর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে গেছেন নাট্যকার সেলিম আল দীন ছিলেন তাদের ভেতর অন্যতম। বাংলার হাজার বছরের পুরোন লোকজ উপাদানকে ব্যবহার করে জলজ এই ব-দ্বীপের পোঁড় খাওয়া, চির সংগ্রামী, সরল, স্বাধীনচেতা, আত্বনির্ভর, নির্ভিক, সাহসী মানুষদের জীবনকাব্যের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি অত্যন্ত সাবলীলভাবে সেলিম আল দীন তার প্রতিটি নাটকের প্রতিটি দৃশ্যে ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। চরিত্রের এই যুক্তিসংগত গ্রহণযোগ্যতার কারণেই নাটক তখন শুধুই নিছক মঞ্চের ভাষা হয়ে থাকেনি, তার নাটকের প্রতিটি সংলাপ জীবন্ত হয়ে মিশে গিয়েছিল আমাদের সাধারণ জীবনের আনন্দ-বেদনার কাব্যে।
আজ ১৮ আগস্ট অমিত প্রতিভাবান, রবীন্দ্রোত্তর বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ নাট্যকার সেলিম আল দীনের জন্মদিন। ১৯৪৯ সালের এই দিনে ফেনী জেলার সোনাগাজী থানার সেনেরখিল গ্রামে তিনি জন্ম লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময়েই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সেলিম আল দীন। মধ্যযুগের বাংলা নাট্যরীতি নিয়ে গবেষণা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশে একমাত্র বাংলা নাট্যকোষেরও তিনি প্রণেতা। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনাচরণকেন্দ্রিক এথনিক থিয়েটারেরও তিনি উদ্ভাবনকারী। ঢাকা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম আল দীন ১৯৮১-৮২ সালে নাট্য নির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফকে সাথী করে গড়ে তোলেন গ্রাম থিয়েটার।
তিনি শুধু নাটক রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, বাংলা ভাষার একমাত্র নাট্যবিষয়ক কোষগ্রন্থ ‘বাংলা নাট্যকোষ’ সংগ্রহ সংকলন, প্রণয়ন ও সম্পাদনা করেছেন। তার রচিত ‘হরগজ’ নাটকটি সুয়েডীয় ভাষায় অনূদিত হয় এবং এ নাটকটি ভারতের রঙ্গকর্মী নাট্যদল হিন্দি ভাষায় মঞ্চায়ন করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :