একটা সময়ে শাহরুখ খান-কাজল দেবগন জুটির সিনেমা মানেই ছিল বক্স অফিসে তোলপাড়। এই জুটি বলিউডে বহু ব্যবসা সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। প্রেমের সিনেমাতে তাদের রসায়ন জমে উঠত। নব্বই দশকের দর্শকদের কাছে এই জুটি মানে আবেগ। তাদের অভিনীত বহু সিনেমা আজও দর্শকদের হৃদয়পটে রয়েছে। তবে ক্যারিয়ারের এক দীর্ঘ সময় তারা একসঙ্গে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফিরিয়ে ছিলেন বহু সিনেমার প্রস্তাব। তবে কি সম্পর্কের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় পরকীয়ার গুঞ্জন?
একেবারেই নয়, বরং দর্শকদের উচ্ছ্বাসে ক্লান্ত হয়ে পড়েন অজয় দেবগন। বলিউডে কান পাতলে শোনা যায়, একটা সময় নাকি তিনিই চাননি এই জুটি পর্দায় একসঙ্গে কাজ করুক। দীর্ঘদিন বিরতির পর শাহরুখ খান ও কাজল একবার একটি সিনেমার প্রস্তাব গ্রহণের কথা ভাবছিলেন। সেই কারণেই অজয় দেবগনের অনুমতি চাইতে গিয়েছিলেন শাহরুখ। কিন্তু অজয় খালি হাতেই ফিরিয়ে ছিলেন কিং খানকে।
অজয় জানিয়ে ছিলেন, দর্শকরা শাহরুখ ও কাজলকে একসঙ্গে দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু সেটি কোথাও গিয়ে মানতে পারছিলেন না অজয়। তিনি ই-মেইল খুলে দেখিয়েছিলেন, কত ভক্তের অনুরোধ তারা যেন বিয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। এই বিতর্ক থেকে সেই মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চাইছিলেন অজয় দেবগন। দর্শকদের কাছে এই জুটিকে নিয়ে আলাদা আবেগ তৈরি হয়েছিল। যেটি কিনা অজয় ও কাজলের সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই অজয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, শাহরুখ ও কাজল একসঙ্গে কাজ করবেন না। তবে সেই সিদ্ধান্ত খুব বেশিদিন ধরে রাখেননি বলিউডের সিংঘম অজয়। ফলে অপেক্ষা দীর্ঘ হলেও তারা একসঙ্গে পর্দায় ফেরেন।
এ বিষয়ে শাহরুখ খান জানান, সাধারণ মানুষ অনেক সময় অনেক কিছু বলেন, কিন্তু সেটি কখনওই পেশাগত জীবনে প্রভাব ফেলতে দেওয়া যাবে না। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। ফলে শাহরুখ ও অজয়ের মধ্যে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল, সেটি ধীরে ধীরে মিটে যায়। কাজল দুজনের সঙ্গে কাজ করতে থাকেন। তৈরি হয় দিলওয়ালে। যে সিনেমা দর্শক মনে ঝড় তুলেছিল। শাহরুখ-কাজলের রোম্যান্স থেকে শুরু করে অ্যাকশন, তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন।
২০০১ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘কভি খুশি কভি গম’। এই সিনেমাতে নজর কেড়েছিলেন কারিনা কাপুর। সম্প্রতি কারিনা চলচ্চিত্র জগতে ২৫ বছর পূর্ণ করেছেন। সেই উদযাপনের জন্য একটি চলচ্চিত্র উৎসবে ফের এই সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। সঞ্জনা সিং নামে এক ভক্ত প্রেক্ষাগৃহে বসে সিনেমাটি দেখেছিলেন। আবার হলে বসে এই সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তা তিনি ইনস্টাগ্রামে ভাগ করেছেন। দর্শকরা সকলে মিলে একসঙ্গে সিনেমার একটি সংলাপ পুনরাবৃত্তি করার মজার একটি ভিডিও তিনি শেয়ার করেছেন। সেই সময় সিনেমাটি ব্যাপকভাবে হিট হয়েছিল। সিনেমার বেশিরভাগ সংলাপই ভক্তদের পছন্দের।
শাহরুখ-কাজল জুটির দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙে, বাজিগর, করন অর্জুন, দিলওয়ালা, কুচ কুচ হোতা হ্যায়, কাভি খুশি কাভি গাম, মাই নেম ইজ খান, কাল হো না হো সিনেমাগুলোতে এই তুমুল জনপ্রিয় পর্দা জুটির রসায়ন দর্শক প্রাণ ভরে উপভোগ করেছেন যেমনভাবে, ঠিক তেমনিভাবে সবাই, হৃদয়ের গভীরে ঠাঁই দিয়েছেন তাদের দু’জনকে। তাদের অভিনীত বিভিন্ন সিনেমার দৃশ্যের কথা মনে রেখেছেন। নানা আড্ডায়, আলোচনায় স্মৃতি চারণে শাহরুখ-কাজল জুটির রোমান্টিক অভিনয়, খুনসুটি, আবেগময় অনুভূতির প্রকাশ ইত্যাদি নিয়ে মুখর হয়ে ওঠেন ভক্ত-দর্শক। এখন তাদের দু’জনের বয়স বেড়েছে। আগের মতো রোমান্টিক যুবক-যুবতী সেজে পর্দায় আসার মতো অবস্থা নেই। কিন্তু তারপরও দর্শক তাদের দুজনকে একসঙ্গে পর্দায় দেখতে উদগ্রীব। তারা তাদের বর্তমান বয়সের উপযোগী চরিত্রে পর্দায় এলেও দর্শক খুশি।
হলিউডে অনেক জনপ্রিয় তারকা জুটিকে ম্যাচিওরড রোলে পর্দায় উপস্থিত হয়ে বাজিমাত করতে দেখা যায়। শাহরুখ-কাজল কি পারেন না তেমন রোলে পরস্পরের বিপরীতে পর্দায় আসতে? অনেকবার তাদের একসঙ্গে অভিনয় নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যায়। কিন্তু সেগুলো ওই গুঞ্জনের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তব রূপ লাভ করতে দেখা যায় না।
আজকাল শাহরুখ খান, দীপিকা পাড়ুকোন, অনুষ্কা শর্মা, দক্ষিণী নায়িকা নয়নতারাদের বেছে নিচ্ছেন বিভিন্ন সিনেমার বিপরীতে। কাজলের সঙ্গে শাহরুখ খানের ব্যক্তিগত সম্পর্কে তেমন ঝামেলা না থাকলেও কাজলের অভিনেতা স্বামী অজয় দেবগনের সঙ্গে শাহরুখের মাঝে মধ্যে ঝামেলার কথা শোনা গেছে। এটাই তাদের একসঙ্গে পর্দায় না আসার পেছনে একটা বড় কারণ। তাহলে কি পর্দায় আর দেখা যাবে না জনপ্রিয় শাহরুখ-কাজল জুটিকে?
আপনার মতামত লিখুন :