ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

আ.লীগ থেকে বিএনপির ছায়াতলে ডিপজল

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪, ১১:৪৯ এএম

আ.লীগ থেকে বিএনপির ছায়াতলে ডিপজল

অভিনেতা ডিপজল। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাই সিনেমার দাপুটে অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অসংখ্য সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই অভিনেতা। সিনেমার পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে তার নাম। একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন ডিপজল। গত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের হয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরব উপস্থিতি ছিল তার। এমনকি দলটির হয়ে জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নিতে চেয়েছিলেন।

তবে আওয়ামী লীগের পতনের পর ডিপজলও ভোল পাল্টালেন। আবারও আশ্রয় নিলেন পুরনো ঘর বিএনপির ছায়াতলে। বিজয় দিবস উপলক্ষে ফেসবুকে পোস্টার শেয়ার করে শুভেচ্ছা জানান ডিপজল। তাতে ব্যবহার করেছেন জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি।

ক্যাপশনে ডিপজল লিখেছেন, ‘১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। যাদের মহান আত্মত্যাগে আমাদের এই স্বাধীনতা, সেই সব বীর শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। লাখো শহীদের রক্তে লেখা, বিজয়ের এই ইতিহাস, মুক্তির বার্তা নিয়ে বারবার ফিরে আসুক ডিসেম্বর মাস।’

পোস্টারে বিএনপির নেতাদের ছবি ব্যবহার করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন ডিপজল। কারণ, বিগত সরকারের সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঢাকা-১৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কেনেন ডিপজল। ২০২১ সালেও ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। গত আগস্টে সরকার পতনের পর তার নামে হয়েছে একাধিক মামলা। অনেকে বলছেন, মামলা থেকে রেহাই পেতেই ভোল পাল্টেছেন ডিপজল।

ডিপজলের দল পাল্টানোর নীতি নতুন কিছু নয়। এর আগে ১৯৯৪ সালে বিএনপির সমর্থন নিয়ে ঢাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে নিজেকে আওয়ামী লীগের কর্মী বলে দাবি করেন তিনি।

বলে রাখা ভালো, চলচ্চিত্রের মুভিলর্ড খ্যাত মনোয়ার হোসেন ডিপজল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে ছিলেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে যোগ দিতে তার দুই ছেলে শাদমান মনোয়ার অমি ও সামির মনোয়ারকে পাঠিয়েছিলেন।

সে সময় এই অভিনেতা বলেছিলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ন্যায্য ছিল। তাদের আন্দোলন দমাতে যখন হামলা ও নির্বিচারে গুলি করা হয় এবং আমার সন্তানের মতো শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়, তখন ঠিক থাকতে পারিনি। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিশু থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও যখন গুলি খেয়ে নিহত হয় এবং শত শত মানুষ আহত হয়, এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারিনি। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষেও সহ্য করা সম্ভব নয়। আমার দুই ছেলেকেও আটকে রাখতে পারিনি। ওদের বলেছি, তোমরাও শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াও। তাদের সহযোগিতা করো। তারা গিয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছে, তাদের বাবা-মায়েরাও আন্দোলনে যোগ দিয়েছে, এ দৃশ্য দেখার পর আমি আমার দুই ছেলেকে বলেছি তোমরাও যাও। আমারও ইচ্ছা ছিল, তাদের সাথে যোগ দেয়ার। কিন্তু চোখের সমস্যা ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আমার দুই ছেলেকে পাঠিয়েছি। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করেছি। তারা বিজয়ী হয়েছে। ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ এনে দিয়েছে।

ডিপজল বলেন, শিক্ষার্থীদের বিজয়ের পর যখন হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর স্বার্থান্বেষী মহল আক্রমণ করে, তখন আমার এলাকার হিন্দুদের মন্দিরসহ তাদের নিরাপত্তার জন্য আমার লোকজন দিয়ে দিনরাত পাহারার ব্যবস্থা করি। আমি সবসময়ই হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে ছিলাম আছি, থাকব। আমার ফুলবাড়িয়া বাড়ির পাশের বাড়িই হিন্দু বাড়ি। আশপাশে আরও অনেক হিন্দু বাড়ি ও মন্দির রয়েছে। তাদের উৎসব-পার্বনে সবসময়ই পাশে দাঁড়িয়েছি। আমি এ বিশ্বাস করি, আমরা সব ধর্মের মানুষই বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে থেকে পাশাপাশি বসবাস করব। এটা আমাদের হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস। এই সম্প্রীতি রক্ষা করে চলা আমাদের সবারই দায়িত্ব।

রূপালী বাংলাদেশ/রুআ

Link copied!