দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী রুনা খান। বছর দুয়েক আগে ওজন কমিয়ে গ্ল্যামার লুকে হাজির হয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন সবাইকে। সবসময় নতুন নতুন চরিত্রের জন্য নিরন্তর ছুটে চলেন এই অভিনেত্রী। ব্যতিক্রমী গল্প তাকে টানে সবসময়। বর্তমানে কাজ কম করছেন রুনা। ছোট পর্দার পাশাপাশি মাঝে মাঝেই তাকে বড় পর্দায়ও দেখা যায়। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে রুনা খান অভিনীত একাধিক সিনেমা। আজ এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। বিশেষ দিন ও সমসাময়িক কাজ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে।
শুভ জন্মদিন
ধন্যবাদ। জীবনের বিশেষ দিনটি পরিবারের সঙ্গেই কাটবে। একেবারে পারিবারিক সময় বাসাতেই জন্মদিন উদযাপন হবে। তবে বিশেষ দিন আলাদা করে উদযাপন করা হয় না। যারা ব্যক্তিগত মানুষ তাদের সঙ্গে ভালো সময় কাটে সেটিই সবসময় আনন্দময় উদযাপন।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি
আমার কোনো অপ্রাপ্তি নেই। যা আছে পুরোটাই প্রাপ্তি। এই জীবনে যা যা পেয়েছি—ব্যক্তিজীবনে, পরিবার ও কর্মজীবনে পুরোটাই প্রাপ্তি। নাটক, সিনেমা, ওটিটিতে বেশ কিছু বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করেছি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আমার অপ্রাপ্তি নেই, যা আছে, সবই প্রাপ্তি। সবাই আমায় যে ভালোবাসা দিয়েছেন, তাদের ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার নেই। আমি খুবই কৃতজ্ঞচিত্ত এবং মনে করি যা পেয়েছি তা আশীর্বাদপুষ্ট।
নীলপদ্ম
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সিনেমাটির শুটিং করেছিলাম। দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের সঙ্গে মিশে চরিত্রটি ধারণ করতে হয়েছে। সেখানকার মেয়েদের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা সারাজীবন মনে থাকবে। তৌফিক এলাহী সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন। এটি তার প্রথম চলচ্চিত্র। তিনি ফিল্ম মিডিয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। এখন তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। তিনি সিনেমাটি নির্মাণের আগে অনেক গবেষণা করে কাজটি করেছেন। পরিচালক যেভাবে পর্দায় চরিত্র দেখার উচ্ছ্বাস দেখিয়েছেন আমরা সেটাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য চরিত্রের সঙ্গে মিশে যেতে নিজের সেরাটি দিয়ে কাজটি করেছি। যাতে দর্শকদের মনে হয় নীলা মেয়েটি আমিই। চরিত্রটা যাতে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
মুক্তি
২৩তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ‘বাংলাদেশ প্যানারোমা বিভাগ’ বিভাগে ‘নীলপদ্ম’ ১৫ জানুয়ারি দেখানো হবে। প্রথমবার এটি প্রদর্শিত হচ্ছে। এরপর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নেওয়ার পর দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। কাজটি করতে পেরে ভীষণ ভালো একটি অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা হয়েছে। সিনেমার নামভূমিকায় একজন শিল্পীকে ভাবা যে কোনো অভিনয়শিল্পীর জন্য বিশেষ সম্মামানের ও ভালোবাসার। এই চরিত্রে আমাকে ভাবার ব্যাপারে আমাদের অভিনেতা সজল ভাই পরিচালককে বলেছিলেন। কারণ পরিচালকের সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না। তারপর কাজটিতে যুক্ত হওয়া। সিনেমাটির ক্যামেরায় কাজ করেছেন নাহিয়ান বেলাল। তরুণ সিনেমাটোগ্রাফার। দারুণ করেছেন। কিছু কৌশলগত শট ছিল যেটা তার কারণে সম্ভব হয়েছে। তিনি কাজে অনেক দক্ষ। পরিচালক নীলার জীবনের গল্প বলতে চেয়েছেন। আমরাও চেষ্টা করেছি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে। আমরা কতটুকু পেরেছি তা দর্শক বলতে পারবেন। দৌলতদিয়ার যৌনকর্মীদের জীবন, সামাজিক পরিচয় ও অধিকারের গল্প নিয়ে এই সিনেমা। বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্র। আশা করছি, দর্শকদের ভালো লাগবে।
ব্যস্ততা
তিনটি সিনেমার শুটিং শেষ করেছি। কৌশিক শংকর দাস পরিচালিত ‘দাফন’, মাসুদ পথিকের ‘বক’ ও জাহিদ হোসেনের ‘লীলামন্থন’। শাহরিয়ার নাজিম জয় পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘পাপ কাহিনী’ ও অমিতাভ রেজা চৌধুরীর ‘বোধ’। কাজগুলো মুক্তির জন্য প্রস্তুত আছে। আরও দুটি সিনেমা নিয়ে কথা চলছে। চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানাতে পারব।
অনীহা
আমার কখনোই নাটকে অনীহ ছিল না। আমার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর। বিয়ের পরের বছর সন্তান নেই। তখন অভিনয়ে তিন বছর বিরতি ছিল। তারপর কাজ শুরু করে প্রথম এক বছর অনেক কাজ করেছি। মাসে ২০ দিন শুটিং করতাম। তারপর থেকে একটু কমিয়ে কাজ কাজ করছি। কাজের পাশাপাশি পরিবারকে সময় দিতে হবে। এভারেজ করলে ১৫ বছরে মাসে ৫ দিনের বেশি কাজ করিনি। সিনেমাও বিরতি নিয়ে করছি। আমি কখনোই সংখ্যা বাড়াতে চাইনি। কম কাজ করব কিন্তু মানসম্মত কাজ করতে চেয়েছি। বড় জোড় মাসে ৫ দিন শুটিং করেছি। এভাবেই আমি কাজ করি। বিশেষ দিবসের একক নাটক ও টেলিফিল্ম কাজ করছি। সবকিছু ব্যাটে বলে মিললেই কাজ করি। যতদিন বেঁচে থাকব এভাবেই করব। দুই বছরে একটি কাজ করব কিন্তু আমার গল্প ও চরিত্র পছন্দ হতে হবে। একই কথা মডেলিংয়ের ক্ষেত্রেও। অভিনয় ও মডেলিং আমার কাজের ক্ষেত্র। এই লাইনের মধ্যেই থাকব যতদিন বেঁচে থাকব।
সমালোচনা
প্রায় সময়ই বিভিন্ন কারণে সমালোচনায় পড়তে হয়। আমি পেশাদর শিল্পী। আমার যে চরিত্রে পছন্দ হবে সেই চরিত্রেই কাজ করব। আমি কাজটা ভালোবেসে করি। আমার কাজ সবার যে পছন্দ হবে তা কিন্তু নয়। নেতিবাচক সমালোচনা ইতিবাচক ভাবেই নেই।
আপনার মতামত লিখুন :