ঢাকাই সিনেমার এ প্রজন্মের নায়ক জয় চৌধুরী। এরই মধ্যে তার অভিনীত বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় আরও বেশ কয়েকটি সিনেমা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আগেও বিভিন্ন মেয়াদে সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এ অভিনেতা। কাজ ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে।
ব্যস্ততা
ইন্ডাস্ট্রি বসে গেছে। সত্যি কথা বলতে এখন কারই ব্যস্ততা নেই। দীর্ঘদিন ধরে শুটিং বন্ধ। নতুন সিনেমার শুটিং শুরু হচ্ছে না। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে প্রযোজকরা লগ্নি করছে না। প্রশাসন এখন পর্যন্ত পরিপূর্ণভাবে আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। শুটিং শুরু হলে তার নিরাপত্তা কে দিবে? মেহজাবীন চৌধুরী একটি শো রুম উদ্বোধন করতে গিয়ে ফিরে আসতে হয়। মামলা-হামলা মিলিয়ে বেশ খারাপ সময় যাচ্ছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। এই সময়ে কোনো প্রযোজক লগ্নি করবে বলে মনে করছি না। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ কাজ করে। ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমেই সবার রুটি রুজি। চার মাস ধরে কাজ বন্ধ থাকায় অনেকেরই নাজুক অবস্থা। সবরই এখন মুমূর্ষু অবস্থা। করোনার পর ইন্ডাস্ট্রি যখন ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে ঠিক তখনই বড় একটা ধাক্কায় সবকিছু থমকে গেছে। এ থেকে উত্তরণ পেতে বেশ বেগ পেতে হবে। ততদিনে অনেকেই ভিন্ন পেশা বেছে নেবে।
শুটিং
চলতি মাসে এবং আগামী ডিসেম্বরে নতুন দুটি সিনেমার কাজ শুরুর কথা ছিল কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে আদৌ সিনেমা দুটি হবে কিনা আমি জানি না। বড় বাজেটে নির্মিতব্য ‘অপারেশন জ্যাকপট’ সিনেমার শুটিংয়ের জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল অনেক আগেই। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এই কাজটিও থমকে আছে। আমাদের স্থবির সময় যাচ্ছে। সবাই দ্বিধা দ্বন্দ্বে দিন পার করছে। কবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে আমরা জানি না। আমরা যারা এই পেশায় নিয়োজিত ক্রমেই তাদের খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পথে বসে যাবো।
রাজনীতি পরিচয়
প্রতিটি মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। কখনো সে প্রকাশ করতে পারে আবার কখনো পারে না। বিগত সরকারের আমলে বিএনপির কর্মী বলে আমি খবরের শিরোনাম হয়েছিলাম। সে সময় আমি প্রতিবাদ করিনি। নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি একজন শিল্পী। এর চেয়ে বড় পরিচয় হতে পারে না। এই পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। শিল্পী পরিচয়ে বাকিটা পথ চলতে চাই।
বন্যার্তদের তহবিল
আমরা বন্যার্ত ও আহত শিক্ষার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছিলাম। অনেকই আগেই শিক্ষার্থীদের অর্থ তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। তবে টাকা তোলার পরপরই বন্যার্ত দুর্যোগ এলাকার পানি নেমে যায়। যার ফলে সেই টাকাগুলো শিল্পী সমিতির ফান্ডে রয়েছে। সামনেই শীত। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে সেই অর্থ দিয়ে শীত বস্থ বিতরণ করার।
আত্মগোপনে শিল্পীরা
শিল্পীরা আমাদের পরিবার। কখনো কাম্য না একজন শিল্পী কাজ না করে পালিয়ে থাকবে। ব্যক্তিগতভাবে কেউ অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হবে। শিল্পী সমিতি সব সময় শিল্পীদের পাশে ছিল, আছে ও থাকবে। শিল্পীদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ থাকবে। শিল্পী কাজ করে সংসার চালায়। তার অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে না। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে শিল্পীরা অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমার মনে হয় বর্তমান সরকার শিল্পীদের বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। হয়রানিমূলক কোনো কর্মকাণ্ডে শিল্পীদের না জড়ানোই ভালো। আমরা শিল্পীরাই শিল্পীদের ছোট করছি। এটা কারো কাছে কাম্য নয়। একজন নতুন প্রযোজক আনার ক্ষেত্রে পরিচালকের পরে শিল্পীরা সহযোগিতা করে। চলচ্চিত্র শিল্প আমাদের সম্পদ। ক্ষমতায় যেই আসুক শিল্পীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। সংস্কৃতি রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।
নিপুণ আক্তার
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার জন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কার্যনির্বাহী কমিটি। কিন্তু তার সাড়া পাওয়া যায়নি। আমাদের এত বেশি কাজ জমে আছে যে তাকে নিয়ে ভাবারই সময় নেই।
আপনার মতামত লিখুন :