সম্প্রতি ব্র্যাকের উদ্যোগে কমিউনিটি ভিত্তিক ট্যুরিজম সেবা প্রদানকারী প্ল্যাটফর্ম ‘অতিথি’ প্রকাশ্যে এসেছে। যার সঙ্গে কনসালটেন্ট বা পরামর্শদাতা হিসেবে যুক্ত আছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস। প্রায় বছরখানেক ধরে তিনি এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছেন। গেল ৩ নভেম্বর সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যচিত্রে দেখা মিলেছে তার।
আলাপের শুরুতেই নতুন কাজ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া। মৌটুসী জানালেন, আমার শুরু ‘অ্যাডভেঞ্চার বাংলাদেশ’ দিয়ে। তার দশ বছর বাদে আরেকটি ভ্রমণ বিষয়ক শো করি। সে অভিজ্ঞতার আলােকে বিশ্বাস ছিল এ প্রজেক্টে কাজ করে ভালো লাগবে। ব্র্যাক নারীদের কাজের স্বাধীনতা দেয়। ওরা যা বলে কর্মক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটে। সে জন্য কর্মদক্ষতা বেড়েছে। টিমের সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। ‘অতিথি’ যাত্রা শুরু করল রাজশাহীকে দিয়ে। আমরা রাজশাহীতে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টারে ছিলাম।
মৌটুসী যোগ করলেন, এখানে বিভিন্ন টিম একসঙ্গে কাজ করেছে। আমি নিজেকে আলাদা করে দেখিনি। আমি একজন কনসালটেন্ট হয়েও পরিবারের বাইরে চিন্তা করিনি। প্রচণ্ড ভালোবেসে আন্তরিকভাবে কাজ করেছি। অতিথির জন্য বহুদিন বাদে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। শঙ্কিত ছিলাম। কী হবে না হবে। কাজগুলো আপলোড হবার পর যে প্রশংসা পেয়েছি তা আশা করিনি।
‘আগুন পাখি’ ধারাবাহিকে কাজ করার সময় মৌটুসী নওগাঁ গিয়েছিলেন। রেস্ট হাউজে থাকতেন। শুটিং শেষে ঢাকা ফিরে যেতেন। তিনি মনে করেন রাজশাহী ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে অবহেলিত। তিনি বললেন, আমাদের দেশে ভ্রমণের খনি আছে জানতাম না। বাংলাদেশজুড়ে রয়েছে ইতিহাস ও সংস্কৃতির খনি। অসাধারণ সময় কেটেছে। যারা এসেছে তারা দারুণ স্মৃতি নিয়ে ফিরেছে। আমরা সাঁওতাল গ্রামের আল্পনা নিয়ে এসেছি। ঘুম থেকে উঠেই যেন পর্যটকের মন ভালো হয়ে যায় সে ব্যবস্থা করেছি। ট্যুরিস্ট ফ্রেন্ডলি করে শুটিং করা হয়েছে। দেশের মধ্যে এমন অভিজ্ঞতা হবে কেউ ভাবেনি। কাজের সময় গর্ব হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন দেশের জন্য কাজ করছি। কাজটি করার সময় দেশপ্রেম খুব জাগত।
বছরের শুরুতে বাবা প্রফেসর ডক্টর সৌরেন বিশ্বাসকে হারান মৌটুসী। যার প্রভাব পড়েছে তার যাপিত জীবনে। তিনি বললেন, গেল এক বছর রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা যাতায়াত করেছি। খুলনায় বাড়িতে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত আছি। বাবা না থাকার অসহায়ত্বের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছি। ছয় মাস ভুলে যেতাম বাবা নেই। তার অবর্তমানে সন্তানের দায়িত্ব পালন করার সময় হয়েছে।
মৌটুসী জানালেন তার কাছে নিয়মিত সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসে। গল্প পছন্দ না হওয়ায় বিনয়ের সঙ্গে ফিরিয়ে দিতে হয়। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। সে কথা জানালেন মৌটুসী, একটি সিনেমার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে আপাতত পিছিয়েছে। এদিকে ওটিটিতে যে স্ক্রিপ্ট চাই তা আসে না। আবার যা চাই না তা আসে।
সবশেষে মৌটুসীর কাছে জানতে চাওয়া জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে শিল্পীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে। তিনি অকপটে বললেন, বহুদিন ধরে শিল্প থেকে শিল্প ব্যবসার চর্চা বেশি হয়ে গেছে। যার মুখে দেশপ্রেম কিন্তু মনে অর্থপ্রেম-সেই শিল্পীকে দিয়ে লাভবান হতে পারবেন না। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার লোভের কারণে কাজের মান কমেছে। এসব অনেক বছর ধরে হয়ে আসছে। আমাদের খারাপ স্বভাব থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগবে। আমরা সবাই বিচারক। অথচ নিজের বিচার করছি না। যেসকল শিল্পীর মনে দেশপ্রেম ও সততা আছে তারা চুপচাপ কাজ করছে। আমি ভুল করলে ভুল থেকে শিখবো। কিন্তু শিল্প নিয়ে বাণিজ্য করব না।
আপনার মতামত লিখুন :