ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী। বর্তমানে তিনি চলচ্চিত্রে নিয়মিত না হলেও এ অঙ্গনের বিভিন্ন আয়োজনে তাকে পাওয়া যায়। সর্বশেষ এই অভিনেতাকে ‘কিলহিম’ সিনেমায় দেখা যায়। নতুন বাংলাদেশে প্রথমবার আনন্দ আড্ডার মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন মনের না বলা অনেক কথা। প্রায় ৩৪ বছর ওমর সানীর চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার। বিগত ১৬ বছরে অনেক অনৈতিক কাজ দেখেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন রেখে ‘চাঁদের আলো’ সিনেমার এই নায়ক বলেন, ‘বিগত দিনে যারা একুশে পদক পেয়েছেন তার মধ্যে অর্ধেক ঠিক থাকলেও বাকিরা ঠিক ছিল না। উপমহাদেশের অন্যতম মহাতারকা শবনম। তিনি বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছেন। এখানকার শিল্পী তিনি। স্টার হিসেবে পাকিস্তানে গিয়েছেন। সেখানে মেগাস্টার ছিলেন। কিন্তু মাটির টানে দেশে চলে আসেন। তাকে সহ শাবানা আপু একুশে পদক পাননি। শবনম ও শাবানা যদি না পায় তাহলে আমার মৃত্যুর ৫০ বছর পর পাওয়া উচিত। ববিতাও আপাও পাননি। কেন পাননি তারা, তাদের অপরাধ কী? কারো একটি পছন্দ থাকতেই পারে তাই বলে সে তার প্রাপ্ত্য সম্মান পাবে না? তাদের মেধা ও চলচ্চিত্রের বয়স মিলিয়ে মূল্যায়ন করা উচিত। জীবদ্দশায় অনেক যোগ্য শিল্পীদের একুশে পদক দেয়া হচ্ছে না। শবনম, শাবানা, ববিতা ম্যাডামদের মতো কিংবদন্তি যারা আছেন তাদের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। তারা এক জীবনে পুরোটা এই অঙ্গনে দিয়ে গেছেন। রাষ্ট্রের উচিত তাদের একুশে পদক পুরষ্কার দিয়ে সম্মান জানানো।’
সাবেক তথ্যমন্ত্রীর সময়ে একবার অনুদানের জন্য ওমর সানী ও মৌসুমী একটি গল্প জমা দিয়েছিলেন। তখন গল্প পড়ে তাদের জানানো হয়েছিল গল্পটি দুই থেকে তিনে অবস্থান করবে। সে সময় দশটি সিনেমা অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের গল্পটি অনুদান পায়নি। তবে অনুদানটি পাওয়া উচিত বলে মনে করেন ‘আমার প্রাণের স্বামী’ সিনেমার এই নায়ক। বললেন, ‘মৌসুমী আমার স্ত্রী বলে বলছি না, তার পাওয়া উচিত ছিল। মৌসুমীই কিন্তু জাতীয় কবি কাজী নজরুলকে নিয়ে ‘মেহের নেগার’ বানিয়েছিলেন।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের সঙ্গে নায়িকা মৌসুমীর একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুবাদে একসঙ্গে ছবি রয়েছে। সেই ছবিটিই পরবর্তীতে মৌসুমীর জন্যে অনেকটা কাল হয়ে দাঁড়ায়। এমনটাই জানালেন চিত্রনায়ক ও মৌসুমীর স্বামী ওমর সানী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে ওই ছবির কারণে মৌসুমীকে একাধিকবার রোষানলে পড়তে হয়েছে বলেও জানান এই অভিনেতা।
এক প্রশ্নের জবাবে ওমর সানী বলেন, ‘ওই ছবিতে এক পাশে ববিতা আপা ছিলেন, এক পাশে মান্না ভাইও ছিলেন। সেখানে তারেক সাহেব ও তার স্ত্রী কবুতর উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। মৌসুমীও সেখানে ছিলেন। বেনজির তখন র্যাবের প্রধান ছিলেন। নারায়ণগঞ্জে দেখা হলে একদিন তিনি বলেছিলেন, তাদের কাছে নির্দেশ আছে, ছবিটি নাকি বিতর্কিত। আমরা বাজে অবস্থার মধ্যে পড়ে যাবো। তখন আমি সত্যি আমার পরিবার নিয়ে ভীত হয়ে পড়ি। তারপর থেকে আমার পরিবার ও ব্যবসায় উপর অস্বাভাবিকভাবে তারা ক্ষতি করতে মেতে ছিলেন। শুধু আমি একা নই, আমার কাছের মানুষগুলোও জানে কতটা ব্যথিত হয়েছিলাম।’
রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে শিল্পীদের ছবি থাকা প্রসঙ্গে ওমর সানী বলেন, ‘পরিস্কার করে বলতে চাই, রাষ্ট্র যেখানে অবস্থান করিবে, প্রজারা সেখানে অবস্থান করিতে বাধ্য থাকিবে। শিল্পীদের সঙ্গে যে কারো ছবি থাকতে পারে। একজন চোরের সঙ্গে বা ব্রোথেল গার্ডের সঙ্গেও ছবি থাকতে পারে। তবে হ্যাঁ এটা সত্য মৌসুমী নমিনেশন (সংরক্ষিত মহিলা আসন, ২০১৮ সালের নির্বাচন) চেয়েছিল। কেন চেয়েছিল সেটা জাহির করতে আসিনি। এটা উপর ওয়ালা ভালো জানেন। মৌসুমী রাজনীতিতে জড়াবে না বলে একটা সময় আমেরিকা চলে যায়।’
এফডিসির শিল্পী সমিতি গুটিকয়েক নেতাদের কুলাঙ্গার উল্লেখ করে ওমর সানী বলেন, ‘সেই কুলাঙ্গারদের কারণে প্রথমবার নির্বাচন করতে এসে দেখি তারা শাকিবের সঙ্গে কী করেছিল। শাকিব কেইস করেছিল। এই কুলাঙ্গারদের কারণে শাকিব সেই মামলা আগাতে পারে নাই। যারা এসবে প্রভাব খাটিয়েছিল অনেকে কারাবন্দি। মৌসুমী যখন সমিতির নির্বাচন করে তারা অনেকে এখন আছে যারা তার পিছনে ক্ষতি করেছিল।’
যোগ করে ‘মহৎ’ সিনেমার এই নায়ক বলেন, ‘মানুষের ভালো চাওয়াই আমার মূখ্য চাওয়া। শিল্পী সমিতির সদস্য থাকতে চাইনি। বন্ধু মিশাকে (মিশা সওদাগর) জানিয়েছিলাম। ও বলল রাগটা নিজের মধ্যেই রাখতে। দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম সে কারণে আমাকে ডিবি অফিসে যেতে হয়েছিল। কিন্তু আমার স্ট্যাটাস ডিলেট করিনি। আমি অনেক সাহসী মানুষ।’
ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত আছেন জানিয়ে ওমর সানী বলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রের ভালো চাই। সিনেমা বানালেই হবে না। টাকা উঠে আসতে হবে। এখন সিনেমা হল নেই। দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এবং জেলায় জেলায় আরও সিনেমা হল নির্মাণ করতে হবে। যোগ্য মানুষ দেখে অনুদানের সিনেমা দিতে হবে। আগের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। অনেক দিন পর পর এফডিসিতে আসলেও মনটা চলচ্চিত্রেই পড়ে থাকে।’
নবগঠিত সেন্সর বোর্ডের অনেক সদস্যকে চিনেন না ওমর সানী। তা উল্লেখ করে এই অভিনেতা বলেন, ‘দেখুন, সেন্সর বোর্ডের মেম্বার হওয়ার জন্য অনেক অভিজ্ঞতা দরকার। কিন্তু সেন্সর বোর্ডের বর্তমান কমিটির অনেককে আমি চিনিই না। এটা আমার ব্যর্থতাও হতে পারে। কেন চিনব সেটাও আমার এক ধরণের প্রশ্ন। আমরা সিনেমার মানুষেরাই যদি না চিনি। সেই আগের মতোই যদি হয়ে যায়, তাহলে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হয়ে লাভটা কি? আমি স্বপ্ন দেখি, আগামীর চলচ্চিত্র অনেক ভালো হবে। শুধু যে সেন্সর সার্টিফিকেশনটাই হবে সেগুলোর পাশাপাশি সিনেমাহলগুলোও বাড়ানো দরকার।’
আপনার মতামত লিখুন :