মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজে নাম লেখান উত্তর চব্বিশ পরগনার মেয়ে রাতাশ্রী দত্ত। স্কুলে পড়াকালীন নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও স্বপ্নচারিণী রাতাশ্রী হয়েছেন অভিনেত্রী। এ জন্য ভীষণ আক্ষেপ রয়েছে তার। নতুন করে নৃত্য নিয়ে ভাবছেন বলে কলকাতা থেকে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন। নতুন বছর নতুন ভাবে নৃত্যশিল্পী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরবেন তিনি। তবে অভিনয়কেও রাতাশ্রী শ্রদ্ধার আসনে রেখেছেন, আর তৃপ্তিও খুঁজে পেয়েছেন অভিনয়েই।
বছরের শেষের দিকে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে রাতাশ্রী অভিনীত এক সম্পর্কের গল্প নিয়ে তৈরি পরিচালক-অভিনেত্রী রূপসা গুহের প্রথম সিনেমা ‘হাউ আর ইউ ফিরোজ’। এতে নামভূমিকায় পার্সি যুবক আরিয়ান ভৌমিক অভিনয় করছেন। বিপরীতে রাতাশ্রী দত্ত।
বড় পর্দায় তাকে ‘শর্মিলা ঠাকুর’ হিসেবে চেনে। রাতাশ্রী অতনু বসুর ‘অচেনা উত্তম’-এ শর্মিলা ঠাকুরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। মাঝে সিনেমা থেকে বিরতি। অভিনেত্রী এবার পার্সি মেয়ের চরিত্রে। অভিনেত্রী থেকে সদ্য পরিচালনায় হাতেখড়ি রূপসার। তার প্রথম সিনেমাতে রাতাশ্রী ‘সমীরা’। ইতোমধ্যেই সিনেমাটি বার্লিন, মস্কোসহ সাতটি চলচ্চিত্র উৎসব ঘুরে এসেছে।
অভিনেত্রীর কথায়, ‘কয়েকটি ভাষায় সিনেমাটি মুক্তি পাবে। চলতি বছরই মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কয়েকটি উৎসবে সিনেমাটি অংশ নিচ্ছে। বাঙালি হয়ে অবাঙালির চরিত্র করাই একটি চ্যালেঞ্জ। তবে চ্যালেঞ্জ যখন আসে তখন নতুন কিছু শেখা হয়। চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। তখন ভালো কিছু হয়। ৭০ সালের পার্সির মেয়েদের জীবন-যাপন পুরোপুরিভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সহজ না। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। চরিত্রটি করতে গিয়ে সেই সময়কালীন অনেক কিছু শিখেছি। তবে চরিত্রে প্রবেশে সমস্যা হয়নি। প্রাণবন্ত একটি চরিত্র। কাজটি ভালো হয়েছে। আশা রাখি, দর্শকরাও পছন্দ করবে।’
তার মতে, ‘সমীরা’ রাতাশ্রীর মতোই। ছটফটে, চনমনে, কথা বলতে ভালোবাসে। একই সঙ্গে তিনি পার্সি ভাষা, সেই সমাজের আদবকায়দা জানতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে সিনেমাতে কাজ করতে গিয়ে তিনি আদতে ঋদ্ধই হয়েছেন।
রাতাশ্রী বলেন, ‘এখন যেসব কাজ হচ্ছে তার বেশিরভাগই থ্রিলার। সেই জায়গা থেকে প্রেমের গল্পগুলো একটা সময় হারিয়ে যায়। তবে আমাদের সিনেমাটা সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের জীবনের গল্প নিয়ে সিনেমাটি। অনেকের জীবনের সঙ্গে মিলে যাবে। আমাদের জুটির প্রেমের গল্পটি সবার ভালো লাগবে।’
অভিনয়ে বিরতি থাকার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে কাজ থেকে লম্বা সময় দূরে থাকতে হয়েছিল। তারপর করোনা মহামারি চলে আসে। সবকিছু নতুন করে শুরু হয়। আমি নিজেও নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি। কাজে ফিরেই বেশকিছু সিরিজে কাজ করি। তবে কাজের গতি কম ছিল।’
যোগ করে রাতাশ্রী বলেন, ‘যেখানে ভয় নেই, শর্ত নেই; সেখানেই আমি কাজ করি। সেই জায়গা থেকে ভয় ও শর্তহীন কাজ করতে গেলে সংখ্যা কমে যায়। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব আসা শুরু করে। তবে সব সময় এসব এড়িয়ে চলেছি বলেই কাজের গতি কিছুটা কম বলা যায়। আবার সব রকমের কাজ করাও যায় না। দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই কাজ করতে হয়। আর এখন ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ভালো সেটাও বলা যাবে না। কাজের প্রতিযোগিতা অনেক কিন্তু সংখ্যা কম। সেই ক্ষেত্রে এসবের কারণেই কাজে কম দেখা।’
কাদের কাছ থেকে বেশি প্রস্তাব আসত জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘প্রযোজক ও পরিচালকরা হচ্ছেন গার্জিয়ান। তারা দুজন ঠিক থাকলে পুরো ইন্ডাস্ট্রি ঠিক থাকে। বেশিরভাগ সময় তাদের তারাই এ ধরনের প্রস্তাব বেশি আসে। তাই বলে সবাই খারাপ না। তবে এখন মানুষ সোচ্চার। প্রতিবাদ করতে শিখেছে। যার ফলে ভবিষ্যতে এসব কাজ আরও কমে আসবে।’
কলকাতার ফিল্মি বাজার পাড়ি দিয়ে রাতাশ্রী কাজ করেছেন ঢালিউডও। ঢাকার নির্মাতা মিজানুর রহমান লাবুর ‘তুখোড়’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক হয় তার। এরপর আর ঢাকাই সিনেমায় তাকে পাওয়া যায়নি। হাস্যোজ্জ্বল এই অভিনেত্রী বললেন, ‘নায়িকা হিসেবে আমার জীবনের প্রথম কাজ বাংলাদেশে। এ দেশের মানুষের সঙ্গে মানসিকভাবে আমি ভীষণ জড়িত। সেই জায়গা থেকে দুটি ইন্ডাস্ট্রির একটি জায়গায় কোথাও গিয়ে উন্নতি দেখতে পাচ্ছি। সামনে সিনেমার সুদিন আসছে।’
ঢাকায় কাজের জন্য মুখিয়ে আছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি ভীষণভাবে ঢাকার কাজের জন্য মুখিয়ে আছি। বর্তমান সিনেমা ও সিরিজ মিলিয়ে অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে। নতুন পরিচালকরা দারুণ নির্মাণ করছেন। প্রায়ই ঢাকার কাজ দেখা হয়। ঢাকার তরুণ নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তারা আমাকে দায়িত্ব দিলে মান রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করতে চাই।’
এ পর্যন্ত যত জনের সঙ্গে কাজ করেছি তারা সবাই আমাকে নিজের বাড়ির মেয়ের মতোই আগলে রেখেছে। কখনো বাজে কিছু আমার সঙ্গে হয়নি। আমিও বুঝেশুনে কাজ যুক্ত হতাম। কখনো স্রোতে গা ভাসাইনি, বললেন রাতাশ্রী।
গল্পের প্রয়োজনে সব ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চান রাতাশ্রী। তিনি বলেন, ‘গল্পে দরকার হলে কোনো রকমের ছুৎমার্গ নেই। শিল্পী সব সময় চরিত্র ফুটিয়ে তুলে। চরিত্রের প্রয়োজনে সবকিছু করতে রাজি। তবে এটা একেকজনের চোখে একেক রকম। শিল্পী হিসেবে পরিচালকের ভাবনাটা করার শতভাগ চেষ্টা করি। শিল্পীদের কাজ হচ্ছে মানুষকে মনোরঞ্জন করা। সেটাই করছি।’
উড়িষ্যা, কলকাতা এবং বাংলাদেশ-তিন জায়গাতেই রাতাশ্রীর কাজ করা হয়েছে। তিন জায়গায় কাজের আলাদা পার্থক্য তার চোখে পড়েনি। তার ভাষায়, ‘সব জায়গাই ভালো। তবে সবচেয়ে বেশি স্মৃতি বাংলাদেশের কাজে। তার কারণ সেখান থেকে প্রথম নায়িকা হওয়া। কাজটি করতে গিয়ে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি এবং শিখেছি। বাংলাদেশ থেকেই আমার হাতেখড়ি। যার ফরে এখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি, যা আমার গোটা জীবনে কাজে দিবে। এক কথায় আমার সবকিছুর শুরু বাংলাদেশ থেকে। যে কারণে দেশটার সব স্মৃতি মনের একটি কোনায় রাখা। এ কারণে বারবার এখানে ফিরে আসি।’
আপনার মতামত লিখুন :