গ্রামবাংলার সাদাসিধা মানুষের জীবনের কথা ও হৃদয়ের সুরকে অন্তরে ধারণ করে যুগ যুগ ধরে লোকগানে অনন্য অবদান রেখে চলছে দেওয়ান পরিবার। আলেপ চান শাহের হাত ধরে এই পরিবারে গানের ঐতিহ্যের সূচনা হয়। এরপর তার দুই ছেলে খালেক দেওয়ান ও মালেক দেওয়ানের ‘সওয়াল-জওয়াব’-এর মতো নাটকীয় ভঙ্গিমায় আধ্যাত্মিক গান পরিবেশন। বর্তমানে যার রেশ ধরে রেখেছেন চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রজন্মের মেধাবী প্রভিভারা। যার মধ্যে অন্যতম উদীয়মান প্রতিভা সাগর দেওয়ান। তবে লোকগানের পাশাপাশি তাকে দেখা যায় আধুনিক গানেও। সেসব গান-গল্প জানাতে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সাক্ষাৎকারে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
নতুন গান
হ্যাঁ, ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে আমাদের চমৎকার একটি গান আসছে। গানটি লিখেছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জিসান খান শুভ। তিনি গানটিতে বাংলার লোকজ ঐতিহ্যকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লোকজ ভাষায় বলা যায় এটা বিচ্ছেদ অঙ্গনের গান। এই জেনারেশনের হয়েও তিনি ব্যাপারটা খুব ভালো ভাবেই মিটিয়েছেন। গানটির কম্পোজিশন করেছেন ড্রামার আমজাদ ভাই। খুব চমৎকারভাবে তিনি তার কাজকে সম্পন্ন করেছেন। আর আমরাও খুব চেষ্টা করেছি এটার একটা সুন্দর প্রেজেন্টেশন যেন শ্রোতাদের মাঝে আনা যায়।
অভিজ্ঞতা
কোক স্টুডিও’র সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা বরাবরের মতোই ভালো। সুন্দর একটি কাজ করতে পেরেছি এটাই অনেক বড় পাওয়া।
মা লো মা
দেওয়ান পরিবারের ৬৪ বছর আগলে রাখা গান ‘মা লো মা’ কোক স্টুডিওতে প্রকাশ পাবার পর শ্রোতারা সাদরে গ্রহণ করেছে। মানুষের সমস্ত কর্মই ভালোর জন্য করা উচিত। কিন্তু সবসময় সেটা ভালো হয়ে ওঠে না, যদি সবার ভালো মনে না হয়! নিজেকে যে ভালো বলে সে কখনো ভালো না, দশে যাকে ভালো বলে সে ভালো। আমরা যে কাজটা করেছি মানুষ এত ভালোবাসা দিয়েছে এটার প্রমাণ তারা নিজেরাই।
পরিকল্পনা
মূলত সৌখিনতার খাতিরে ছোটবেলা থেকেই আধুনিক গান করে আসছি। এটি আমার পছন্দের। ভবিষ্যতে যদি আধুনিক গান করণীয় হয় কেন করব না! অবশ্যই করব।
মা লো মা গান নিয়ে বিতর্ক
এ বিষয়ে আসলে আমার নতুন কোনো মন্তব্য নেই। এগুলো নিয়ে অনেকবার, অনেকভাবে কথাবার্তা হয়েছে। তাই এ বিষয় নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।
উৎস
এই গান আমার দাদা খালেক দেওয়ানের লেখা। গানটির উৎস হচ্ছে দেহ। যেহেতু গানটি দেহতাত্ত্বিক গান, দেহের সঙ্গে প্রকৃতির একটা মেলবন্ধন বলা যায়।
মূল্যায়ন
বাংলাদেশে মেধার কদর হচ্ছে না এ কথাটি এক দিক দিয়ে ঠিক আবার আরেক দিক দিয়ে বেঠিক। যেমন: যদি আমি ঠিকটা বলি আমাদের অনেক মেধাবী গায়ক আছে, ভালো গায়। কিন্তু তারা হুট করেই ইন্ডাস্ট্রিতে এসে সুযোগ পায় না। আবার যদি বেঠিকটা বলি, তাহলে কদর পাচ্ছে ঠিক তা না। নিজের মধ্যে এমন মনোভাব রাখতে হবে যে, আমাকে ভালো কিছু করতেই হবে। এটি ফার্স্ট টার্গেট রাখা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট কোম্পানির কাজ করতে হবে! ভাইরাল হতে হবে এসব ভাবনা থেকে বেড়িয়ে নিজের ভালো কাজকে প্রাধান্য দিলে মেধার মূল্যায়ন নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে।
পরামর্শ
নতুনদের প্রতি আমার পরামর্শ এটাই থাকবে যে মিউজিক অনেক বড় একটা ওয়ার্ল্ড। এটার শুরু আছে কিন্তু শেষ নাই। তো এর স্বাদ যত আস্বাদন করা যায় ততই ভালো। সংগীত জানার, শেখার ও ভালোবাসার জায়গা। সংগীত একটা ইবাদত, তো এটাকে ঐভাবে লালন-পালন করার জন্য নতুনদের আহ্বান জানাই।
আপনার মতামত লিখুন :