ঢাকা রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

প্রকৃতি আমার দুঃখ-বেদনা ভুলিয়ে দেয়: সুচন্দা

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম

প্রকৃতি আমার দুঃখ-বেদনা ভুলিয়ে দেয়: সুচন্দা

অভিনেত্রী সুচন্দা। ছবি: সংগৃহীত

ঢালিউডের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচন্দা। ডাগর ডাগর চোখের লাস্যময়ী এ নায়িকা সিনেমায় ক্যারিয়ার শুরু করেন যাটের দশকে। সোনালি দিনের মিষ্টি মুখের অভিনেত্রী সুচন্দার পুরো নাম কোহিনূর আক্তার সুচন্দা। ১৯৬৬ সালে পরিচালক সুভাষ দত্তের হাত ধরে ‘কাগজের নৌকা’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তার ঢালিউডে অভিষেক ঘটে। এরপর শুধু এগিয়ে যাওয়া। অভিনয়ের পাশাপাশি করেছেন পরিচালনাও। দীর্ঘ সময় ধরে অভিনয় থেকে দূরে রয়েছেন এই অভিনেত্রী। তবে কালেভদ্রে দেখা মেলে তার। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ডাকে সাড়া দিয়ে বন্যার্তদের জন্য সহযোগিতা করতে এফডিসিতে আসেন। এ সময় কথা বলেন বিভিন্ন বিষয়ে।

প্রাণের এফডিসিতে

এফডিসিতে ভালো কিছু হলেই থাকার চেষ্টা করি। সর্বশেষ নির্বাচনে ভোট দিতে আসি। এখন এলাম বন্যার্তের পাশে দাঁড়াতে। শিল্পী সমিতি বন্যাকবলিত মানুষ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের জন্য তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করেছে। খবুই ভালো একটি উদ্যোগ। এই আয়োজনে সামর্থ্যবান সব শিল্পীদের এগিয়ে আসা দরকার। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। এই দেশটা আপনার, আমার; সবার। আমাদেরই এগিয়ে নিতে হবে। নিঃস্বার্থভাবে দেশের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। আমি একজন চলচ্চিত্রের শিল্পী। সেই ষাটের দশক থেকে আজও পর্যন্ত এই চলচ্চিত্রের সঙ্গেই আছি। বিভিন্ন সময় দেশে ক্রাইসেস হয়। যেমন, আমরা যখন নিয়মিত কাজ করতাম তখনো বন্যার সময় শিল্পী সমিতি নীরব থাকেনি। সেই সময়েও সবাই আমরা সহযোগিতা করেছি। তখন সমিতির ফান্ড ছিল না। ফান্ড তৈরির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফুটবল খেলেছি। সেই টাকা দিয়ে ফান্ড করে বন্যাকবিলত এলাকায় গিয়ে সাহায্য করেছি। অনেক কিছু বদলে গেছে কিন্তু আমাদের মন পরিবর্তন হয়নি। শিল্পীদের মন সেই আগের মতোই আছে। শিল্পীরা মানুষের পাশে সবসময়ই থেকেছে। এখন যেমন করছি এরকম আগামীতেও আমরা সামাজিক কাজ করব। আমাদের আগামীর প্রজন্মও করবে বলে বিশ্বাস করি।

নতুন প্রজন্ম
নতুন প্রজন্ম যেভাবে দেশের বিপদে এগিয়ে আসছে তা দেখলে চোখের পানি চলে আসে। এদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এই মুহূর্তে দুটি নাম না বললেই নয়। আবু সাঈদ ও মীর মুগ্ধ। এদের আত্মত্যাগ আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে গেছে। এরাই কিন্তু আমাদের সাহস জুগিয়েছে। এদের ত্যাগ এদেশের মানুষ, দেশ ও জাতি কখনোই ভুলবে না। এরা সত্যিই অনেক বড় কাজ করেছেন। আমাদের পথ দেখিয়েছে। আগামীর দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পদ দেখিয়েছে।

প্রাপ্তি
সারাজীবন সবার জন্য অভিনয় করেছি কিন্তু নিজের জন্য কিছু করিনি। জীবনের শেষ বেলাতে এসে মনে হয়েছিল একান্ত নিজের জন্য কিছু করা দরকার। সে জন্য পবিত্র হজ্জ পালন করেছি। বহুবার ওমরাহ করেছি। এখন ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়েছি। ইতিমধ্যে আমি একটি বই লিখিছি। আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা নিয়ে বইটি। নাম: আজও ভুলিনি।

বই সম্পর্কে
ষাটের দশকে আমি চলচ্চিত্রে এসেছি এবং আজ অব্দি আছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলচ্চিত্রের সঙ্গেই থাকব। সেটা যেভাবেই হোক জড়িত থাকব। সে কারণে মনে হয়েছে ক্যারিয়ারের পথচলা তুলে ধরা দরকার। যেসব মানুষগুলোর সঙ্গে কাজ করেছি তারা অনেক গুণী ছিল। তখন অসম্ভব ছায়াছবি তৈরি হয়েছে। এখন চলচ্চিত্র পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেরকম ছায়াছবি তৈরি হয় না। সেই অনুভূতি থেকে মনের তাগিদে বইটি লেখা। চলচ্চিত্র সম্পর্কে বইটিতে অনেক কিছু জানার রয়েছে। এরই মধ্যে যারা বইটি দেখেছেন তারা চলচ্চিত্র সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। সবাইকে বইটি পড়ার অনুরোধ থাকবে।

অবসর সময়
আমি শিল্পী হলেও অনেক ঘরোয়া। ঘরে থাকতেই পছন্দ করি। কাজ করতে পছন্দ করি। বাসায় নিজেই রান্না করি। মানুষদের আপ্যায়ন করতে ভালোবাসি। এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এভাবেই আমার সময় চলে যায়। একসময় অভিনয় নিয়ে ভীষণ রকমের ব্যস্ত ছিলাম। আর এখন পরিবারের সঙ্গেই পার করছি। পরিবারের সবাই অনেক বড় হয়ে গেছে। পরিবার নিয়েই সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকি। সবার বড় আমি। সবকিছু আমাকেই দেখভাল করতে হয়। এভাবেই আমার সময় কাটে। অবসর সময়ে এখনো আমি লিখি।

প্রকৃতি প্রেম
আমার বাবা খুব গাছ প্রিয় ছিলেন। সেটা আমি পেয়েছি। আমিও ভীষণ গাছ পছন্দ করি। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রধান কাজ হচ্ছে সব গাছগুলোর পরিচর্যা করা। প্রতি বছর বৃক্ষমেলায় যাই। সেখান থেকে গাছ সংগ্রহ করি। বলতে পারেন আমি গাছ পাগল। প্রকৃতিকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। এই ভালোবাসা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। প্রকৃতির কাছে আমি হারিয়ে যেতে চাই। ভালো না লাগলে প্রকৃতির কাছে ছুটে যাই। প্রকৃতি আমার দুঃখ-বেদনা সবকিছু ভুলিয়ে দেয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!