ঢালিউডের কুইন খ্যাত নায়িকা অপু বিশ্বাস। তিনিই বিশ্বের একমাত্র অভিনেত্রী, যিনি কোনো নায়কের সঙ্গে জুটি বেঁধে ৭০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দেড় যুগের দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ার অপুর। কাজ করেছেন শতাধিক সিনেমায়। যার সিংহভাগই ব্যবসাসফল। ফলে ইন্ডাস্ট্রিতে তার জায়গাও বেশ পাকাপোক্ত। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন স্টেজ শো এবং বিজ্ঞাপনেও কাজ করছেন অপু। তিনি দায়িত্বে আছেন বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হিসাবেও। ব্যস্ততা ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
ব্যস্ততা
সামনেই পূজা তাই ফটোশুট ঘিরে এখনকার ব্যস্ততা। তবে উৎসবটি ঘিরে এবার সেভাবে পরিকল্পনা নেই। কারণ, কিছুদিন আগে আমরা বড় একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। যা এখনো আমরা সেভাবে কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আমি নিজেও বন্যার্তদের পাশে সাধ্য অনুযায়ী দাঁড়িয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানুষ এখনো স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরতে পারেনি। উৎসব যে ধর্মেরই হোক না কেন আনন্দ সকলের। যেহেতু এখনো বন্যায় সম্বল হারা মানুষগুলো এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি তাই এবার পূজা নিয়ে বাড়তি পরিকল্পনা নেই।
ফটোশুট
আমি অনেক ভাগ্যবান কারণ, যে কোনো উৎসবে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান আমাকেই চেয়ে থাকেন। উৎসব মানেই অপু বিশ্বাস। এরই মধ্যে কয়েকটি ব্যান্ডের ফটোশুটে অংশ নিয়েছি। যখন স্পেশাল ভাবে আমাকে চাওয়া হয় তখন সে অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়। আমাদের পরিচয় চরিত্রের মধ্যে দিয়ে। বড় বড় উৎসবে চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে হয় সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী। সুন্দর কাজকে সবাইকে সাপোর্ট করতে হবে। ভুল ত্রুটি হলে অবশ্যই জানাবেন। গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। তবে খারাপ ব্যাখ্যার মাধ্যমে নয়।
সহযোগিতা
মানুষকে উপকার করতে হলে নিজের মন থেকে করতে হবে। মনের ভাষা কেউ জানে না। তবে কিছু সময় দেখিয়ে সহযোগিতা করতে হয়। দুর্যোগের সময় অন্য মানুষদের আগ্রহী করতে সবাইকে জানাতে হয়। এটা যখন ভুল ব্যাখ্যা হয়ে মানুষের কাছে আসে সেটা দুঃখজনক। যে চিন্তা নিয়ে করি তখন অন্য মানুষেরা দেখে যুক্ত হয় তখন সেই সহায়তা আরও বড় পরিসরে হয়। সাধ্য অনুযায়ী সবারই সহায়তা করা উচিত।
রহস্যময় স্ট্যাটাস
আমি কোনো স্ট্যাটাস দিলে রহস্য হিসেবে কাউন্ট করা হয়। কেন করে সেটা আমার নিজেরও জানা নেই। স্ট্যাটাস অন্য ভাবে নেওয়ার কিছু নেই। ফেসবুক মনের ভাব প্রকাশ করে। ২০১৬ পর্যন্ত কৃষ্টি কালচার বলে যে অধ্যায় থাকে এটা প্রতিটি মানুষের কাছে বিদ্যমান ছিল। এরপর থেকে কৃষ্টি কালচার সমালোচনায় তৈরি হয়েছে। যেটা আমাদের বিনোদন অঙ্গনের জন্য অনেক ভয়াবহ ব্যাপার। ১৬ সাল পর্যন্ত আমাদের শিল্পীদের মধ্যে সুন্দর একটি প্রতিযোগিতা হতো। কাজের মধ্যে দিয়ে এই সুন্দর প্রতিযোগিতা হতো এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু এরপর দিনদিন পরিবর্তন হচ্ছে। ব্যক্তি আক্রোশ এবং ব্যক্তিকে উপস্থাপন করা। ভালো কিছুকে কালো করা। সেই কালোকে বাড়িয়ে দেওয়া। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা যেহেতু সংস্কৃতির মানুষ। একটি সংস্কৃতি দেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ করে। সেটা যদি একটু ভিন্ন হয় সেটা সকলের মধ্যে প্রভাব পড়ে।
এফডিসি
আমরা যারা অভিনয় করি, সবার জন্য এফডিসি হচ্ছে একটি পবিত্র স্থান। বিশেষ করে এ জায়গা থেকেই আমার জন্ম; কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে জায়গাটি আর আগের মতো নেই। এখন এটি হয়ে গেছে ব্যক্তি রেষারেষির জায়গা। তাই ২০১৬ সালের পর থেকে সেভাবে আর যাওয়া হয় না। এর কারণ সেখানে আমার ব্যক্তিজীবন নিয়ে আলোচনা করে, আমার জীবন বিষাদময় করে তোলে, যা নিয়ে আমি খুবই ব্যথিত হই। এরপর আর সেখানে যেতে ইচ্ছা করেনি। আমাকে নিয়ে যে আলোচনা, তা এখনো চলমান। তাই দেশের সিনেমার এ আঁতুরঘরের এমন পরিণতি আমাকে সবসময়ই ব্যথিত করে। কারণ এখান থেকেই আমার অভিনয় জীবনের শুরু। আমি এ জায়গাটির প্রতিটি কোনা চিনি। কিন্তু সেই জায়গায় এখন সিনেমার চেয়ে মানুষের ব্যক্তিজীবন নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। তাই আগের মতো আর সেখানে যাওয়া হয় না। এটি একটি শিল্পচর্চার স্থান। এখান থেকে দেশের অভিনয়ের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়। তাই এ জায়গাটি সুন্দর হওয়া জরুরি।
ট্রল
কোরবানির সময় বলেছিলাম নতুন কিছু সিনেমা নিয়ে আসব। সেটা নিয়েও দেখছি মানুষ ট্রল করছে। সর্বোপরি ২০১৬ সালের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে কেমন যেন বিশৃঙ্খলা মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে। দেশ নতুন ভাবে সবকিছু শুরু হয়েছে। পূর্বে যে সিনেমাগুলো নিয়ে কথা হয়েছিল সেগুলো সেপ্টেম্বরে শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আপাতত পিছিয়ে গেছে। সবকিছু স্বাভাবিক হলে শুরু হবে। এরই মধ্যে ব্যান্ডের ফটোশুট শুরু করেছি।
বার্তা
ট্রল কখনো আমি ব্যক্তিগত ভাবে নেই না। এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই না। সমালোচনাকে সাধুবাদ জানাই। যখন এটি বিকৃত করে সেটা দুঃখজনক। যারা করছেন তারা ব্যক্তিগত ভাবে আমাকে চিনে না। কেন করছে জানি না। তাদের সঙ্গে আমার তো রেষারেষি নেই। তাদের ভালো লাগা মন্দ লাগা থাকবে তবে সেটি যদি নোংরামি পর্যায়ে চলে যায় সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কখনো ট্রল দেখিও না। যারা ট্রল করেন তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
আপনার মতামত লিখুন :