টেলিভিশন ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মের প্রযোজক সারওয়ার জাহান স্ত্রী রুকাইয়া তাহসিনার প্রতারণার শিকার হয়ে আসছেন গত কয়েক বছর থেকে। দুই বছর আগেই বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে এর প্রতিকার ও বিচার প্রার্থনা করে আসছেন বাদী। এই প্রযোজকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রতারক রুকাইয়া এবং আনোয়ারুল কবিরের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছিল।
সে সময় সারওয়ার জাহান জানান, খুবই অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে তার সঙ্গে। স্ত্রীর অভিনব প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি। রুকাইয়া তাহসিনা ওরফে অন্তরা মেহজাবিনের সঙ্গে ২০১২ সালে সারওয়ারের বিয়ে হয়। তাদের দুই সন্তান আছে। কিন্তু সারোয়ারের সঙ্গে থাকা অবস্থায় সে আনোয়ারুল কবির ওরফে শাকিল নামে একজনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। গত ৬ বছর ধরে সে আনোয়ারুল কবিরের সঙ্গে এই অবৈধ সম্পর্ক চালিয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে ২০২৩ এর ১১ জানুয়ারি থেকে সারোয়ার আলাদা হয়ে যান।
এদিকে, গত প্রায় দুই বছর ধরে মামলাটি চলমান। এরই মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ স্ত্রীকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠিয়েছেন। এরপর থেকেই নানাভাবে তাকে হেনস্তা ও বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সারোয়ার। তিনি বলেন, সে আমার বড় সন্তান আহিল সারওয়ারের নাম জালিয়াতির চেষ্টা করেছিল শুরুতে। এমনকি বাবার নামের জায়গায় আমার নাম বাদ দিয়ে কবিরের নাম যুক্ত করে পাসপোর্ট পরিবর্তন করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি নিয়ে অবশেষে আইনের আশ্রয় নেই।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আল মামুন রাসেল বলেন, বাদীর পিটিশন মামলা বিজ্ঞ আদালতে দুজন আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করেন দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ও ৪১৯ ধারায়। এ মামলাটি এখনো জজকোর্টে চলমান। ১নং আসামি বাদীর স্ত্রী এবং ২নং আসামি তার স্ত্রীর কথিত স্বামী। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বাদীর সন্তানকে দেশের বাইরে নিতে ভুয়া ও জালিয়াতি করে একটি জন্মসনদ এবং পাসপোর্ট তৈরি করে। যেখানে বাদীর বাচ্চার নাম ও বাবার নামের পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
তিনি আরও বলেন, বাদীর সঙ্গে বিবাহ চলমান অবস্থায় নিজের বর্তমান পাসপোর্টে স্বামীর নামের জায়গায় ২নং আসামির নাম বদল করে ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করে। যা আমাদের দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ভয়ংকর অপরাধ। জালিয়াতির সঙ্গে একটি শিশু পাচার চেষ্টার অপরাধও বটে।
এদিকে, ঘটনার কথা বলতে গিয়ে সারোয়ার জাহান সম্প্রতি বলেন, ‘বিয়ের পর বিভিন্নভাবে আমি রুকাইয়ার দ্বারা প্রতারিত হয়েছি। বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্তা করা হয়েছে। তার একাধিক স্বামী ও সম্পর্কের বাইরেও সে আমার সন্তানকেও ব্যবহার করতে চেয়েছে। বিভিন্নভাবে মামলা দিয়েও সে আমাকে মানসিকভাবে ভাঙতে চেয়েছে। ইতিমধ্যে সে আমার বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলাও করে, তবে পিবিআই তদন্তে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সব মিলিয়ে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর আমি রুকাইয়ার স্থায়ী ঠিকানা, ঢাকার ঠিকানা, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বরাবর তালাকের নোটিশ পাঠাই। নোটিশে উল্লেখ কারণ হিসেবে-বিবাহের সময় প্রতারণা করে পূর্বের বিবাহ গোপন রাখা, একইসঙ্গে ৩ স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক বলবৎ রাখা, স্বামীকে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি এবং সামাজিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা, অনবরত মিথ্যাচার ও স্বামীর অবাধ্য হওয়া, সন্তানদের পিতৃপরিচয় পরিবর্তন করা প্রভৃতি উল্লেখ করা হয়। পাশাপাশি রুকাইয়ার আত্মীয় স্বজনদেরও তালাকের বিষয়টি অবহিত করি। এছাড়াও রুকাইয়াকে তার দেনমোহরের ২০০০০১ টাকা গ্রহণ করার জন্য ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে আইনি নোটিশ পাঠাই।’
সারোয়ার জানান, তালাকের নোটিশ পাওয়ার পর পরই গত ২৪ ডিসেম্বর রুকাইয়া আরেকটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে। আমি আমার ক্যান্সার রোগী ছেলের জন্য আল মানার হাসপাতালে বিল দিতে যাই। আমি আমার ছেলে আহিল সারোয়ারের কেমোথেরাপির জন্য গত ৩ নভেম্ব দুপুর ১টায় হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রুকাইয়া উল্লেখ করেন যে রাত ৮টায় আমি হাসপাতালে তাকে হুমকি দিয়েছি যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ আমি তার প্রতারণার কারণে তার সাথে চিকিৎসা ছাড়া কথাই বলি না।
মূলত, ১৫/১২/২০২৪ তারিখে রুকাইয়াকে তালাক প্রদান করায় রুকাইয়া আমাকে আরো হেনস্তা করার জন্য এই সব মিথ্যা মামলা দায়ের করে যাচ্ছে এবং উল্টো আমার বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ করে যাচ্ছে, যেখানে তার নিজেরই তিন স্বামী রয়েছে, যা ইতিমধ্যে পিবিআই তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এই মামলায় রুকাইয়া এখন জামিনে আছেন। আমি পারিবারিক জিনিসগুলি কোর্টেই সমাধান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সারোয়ার আরও বলেন, ৮ জানুয়ারি ২০২৫ কোর্ট থেকে ফিরে দেখি, আমাকে কে বা কারা একটি রাজনৈতিক মামলা ঈজ৭৬৭/২৪, ধারা: ১৪৩, ১৪৪, ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ১৫০, ৩০২, ৩৪, ১০৯, ১১৪ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। যেখানে আমি কখনও রাজনৈতিকভাবে জড়িত না, এমনকি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলেছি। আমি একজন চাকরিজীবী এবং পাশাপাশি প্রয়োজনা প্রতিষ্ঠানে জড়িত আছি। জানি না কে কোন উদ্দেশ্যে এই ধরনের হেনস্তা করে যাচ্ছে, এবং এসব মিথ্যা হয়রানি করে আমাকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার এজেন্ডা কী?
উল্লেখ্য, প্রযোজক সারওয়ার জাহান এ পর্যন্ত বেশকিছু ওটিটি কন্টেন্ট ও নাটক প্রযোজনা করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :