ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
আবার আশায় বুক বেঁধেছেন পরিচালক

১১ বছর পর ফের সেন্সরে যাচ্ছে ‘রানা প্লাজা’

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম

১১ বছর পর ফের সেন্সরে যাচ্ছে ‘রানা প্লাজা’

সাইমন ও পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর হলেও আজো মুক্তি পায়নি আলোচিত রানা প্লাজা ধসের ঘটনা নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রানা প্লাজা’। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে ধসে পড়েছিল ৯ তলা ভবনটি। এটি ছিল দেশের পোশাকশিল্পে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। রানা প্লাজা ধসের ১৭ দিন পর ধ্বংসস্তূপ থেকে পোশাককর্মী রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয় সিনেমা। নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত সিনেমাটিতে রেশমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি এবং তার বিপরীতে টিটু চরিত্রে চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক।

অনেকেই সিনেমাটির কথা ভুলতে বসেছে। সিনেমাটির আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর আবার আশায় বুক বেঁধেছেন পরিচালক নজরুল ইসলাম খান। আশা করছেন, এবার সিনেমাটি সেন্সর ছাড়পত্র পাবে। আগামী সপ্তাহে এই পরিচালক ফের সেন্সরে জমা দেবেন সিনেমাটি।

দীর্ঘ প্রায় আট মাস সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকার পর হাইকোর্টের রায় নিয়ে ২০১৫ সালের ১১ জুলাই ‘রানা প্লাজা’ সিনেমাটি মুক্তির অনুমতি পায়। এরপর সিনেমার মুক্তির দিনক্ষণ ঠিক হয় একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর। তবে গার্মেন্টস মালিকের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে এই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী ও সম্প্রচারে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে উচ্চ আদালত।

এরপর ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনী ও সম্প্রচারে উচ্চ আদালতের দেওয়া ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। পরে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় সিনেমাটি একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মুক্তি দেয়ার প্রস্তুতি নেয় সিনেমাটির প্রযোজক ও পরিচালক। কিন্তু মুক্তির একদিন আগে ১০ সেপ্টেম্বর আবারো নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে সিনেমাটি।

২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ‘রানা প্লাজা’ প্রদর্শনের ওপর আবার নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ সরকার। সরকারের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়—সেন্সর আপিল কমিটি কর্তৃক জনসম্মুখে প্রদর্শনের উপযোগী নয় বলে বিবেচিত হওয়ায় চলচ্চিত্রটি সেন্সর সনদবিহীন ঘোষণা করা হয়েছে।

রানা প্লাজা সিনেমার পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

অনিশ্চয়তা থাকা সিনেমাটি প্রসঙ্গে পরিচালক নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘রানা প্লাজা’ আমার অনেক সাধনার একটি সিনেমা। অথচ আজও সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারলাম না। এই দুঃখ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। সিনেমাটি একটি ডিজাস্টারকে কেন্দ্র করে নির্মিত। কিন্তু সিনেমাটি এখন আমার জীবন ডিজাস্টার করে দিয়েছে। এরপর আরও দুটি সিনেমা নির্মাণ শুরু করলেও কাজ শেষ পর্যন্ত করা হয়নি। কারণ স্বপ্ন ভেঙে গেলে কাজে মন বসানো কঠিন।

পরিচালক নজরুল ইসলাম এই সিনেমায় অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। আবেগাপ্লুত হয়ে বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এই সিনেমার পার্টনার। আমার সারা জীবনের ইনকাম এই সিনেমায় খরচ করেছি। এখন পর্যন্ত তিন কোটি টাকা ইনভেস্ট করা হয়েছে। এই টাকা কোনোদিন ফিরে আসবে কিনা জানি না। আমি নিজেই ডিজাস্টার হয়ে গেছি! এর বিচার কার কাছে দেব?

সিনেমাটির পরিচালকের দাবি, সিনেমাটিতে নেতিবাচক কিছু নেই। বরং সিনেমাটির মধ্যে গার্মেন্টস মালিক-শ্রমিক আরও সচেতন হওয়ার সুযোগ খুঁজে পাবেন বলে তিনি মনে করেন। বাংলাদেশের সিনেমা জগতে রানা প্লাজাই প্রথম চলচ্চিত্র যা মুক্তি পাওয়ার আগের দিন ছয় মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে। ছয়মাস পেরিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পার হতে চললেও সিনেমাটি আজও মুক্তি পায়নি।

এ প্রসঙ্গে পরীমণি বলেছিলেন, এই সিনেমায় ঝুঁকিপূর্ণ এমন অনেক দৃশ্য ছিল, যে সব দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরেছে। অনেক কষ্ট করে সিনেমাটিন শুটিং করেছি। এত কষ্ট করে আর পরিশ্রম এখন অবধি কোনো সিনেমায় করিনি। এখানে আমার চোখের পানি, শরীরের রক্ত সবই ছিল অকৃত্রিম।

সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, প্রয়াত অভিনেতা সাদেক বাচ্চু, কাবিলা, রেহানা জলি, শিরিন আলম, হাবিব খান প্রমুখ। পরিচালক নজরুল ইসলাম খানের কাহিনি ও চিত্রনাট্য নিয়ে নির্মিত এ সিনেমার সংলাপ লিখেছেন মুজতবা সউদ।

রূপালী বাংলাদেশ/রুআ

Link copied!