মডেল-অভিনেত্রী রোমানা স্বর্ণা। ছোট ও বড় পর্দা দুই মাধ্যমে দু’টি পরিচয়েই সমানভাবে পরিচিত তিনি। মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজে নাম লেখান এই অভিনেত্রী। কাজ করেছেন নাটক-সিনেমায়। মূলত টিভি পর্দায় অভিনয়ের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন স্বর্ণা। ক্যারিয়ারে যখন সুসময় তখন বিয়ে করেন কামরুল হাসান জুয়েলকে। সময়টা ২০১৯। তবে বিয়ের পরপরই বেরিয়ে আসে স্বামীর আসল রূপ। তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব এক পর্যায়ে গড়ায় মামলা মোকদ্দমায়।
২০২১ সালের মার্চে স্বামীর করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রোমানা স্বর্ণা। দেড় মাস কারাভোগ করার পর সৌদি প্রবাসী জুয়েলের (বাদী) জিম্মায় জামিন বেরিয়ে আসেন মে মাসে। এরপর না চাইলেও নতুন করে সংসার শুরু করেন। তবে এখন দুজনার দুটি পথ দুটি দিকে গেছে বেঁকে। যদিও এখনো তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি। আসল ঘটনা সবাইকে জানিয়ে ডির্ভোস দিতে চান তিনি। বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে রোমানা স্বর্ণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। সেখান থেকে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ-কে বলেছেন নেপথ্যের গল্প।
জেল জীবন শেষে পেরিয়ে গেছে তিন বছরেরও বেশি সময়। এতদিন এ নিয়ে চুপ থাকলেও সরকার পতনের পর মুখ খুললেন রোমানা স্বর্ণা। বললেন, ‘আমাকে মিথ্যা বলে জুয়েল বিয়ে করেছে। তিনি এর আগেও বিয়ে করেছেন। আগের বউয়ের সঙ্গে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও আমার কাছে গোপন করে। যা পরবর্তীতে জানতে পারি। এরপর থেকে বৈবাহিক জীবনে নেমে আসে অশান্তি। শুরু হয় আমার ওপর বিভিন্ন রকমের নির্যাতন। কখনো যদি তার ফোন ধরতে এক মিনিট দেরি করতাম তাহলে অমানবিক হয়ে যেত। একটা পর্যায়ে তার সঙ্গে ঘর না করার সিদ্ধান্ত নেই। তাকে বিয়ে করে ভুল করেছি। যার মাসুলও দিতে হচ্ছে। নির্যাতনের জন্য কয়েক বার সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ, তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। বিয়ের আগে বলেছিল কাজ করলে অসুবিধা নেই। কিন্তু বিয়ের পর দেখি তার উল্টো চিত্র। আমাকে কাজ করতে দেয়নি। একবার আমার প্রথম ঘরের সন্তানকে কিডন্যাপ করায় শুটিং থেকে। আওয়ামী লীগ নেতাদের মাধ্যমে অবৈধ টাকা করেছে। তাদের দিয়ে বিভিন্ন সময় হুমকি দিতো।’
জুয়েলের সঙ্গে পরিচয় কিভাবে জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয়। অনেক দিন আমার পেছনে ঘুরে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে বলে আমি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারব না। আর কাজ করতে পারব না। নানা ভাবে নির্যাতন শুরু করে। বিয়ের পর মায়ের বাসাতেই থাকতে হয়। ওর বাসায় তুলেনি। এক পর্যায়ে জানতে পারি প্রথম স্ত্রী তার সঙ্গে থাকে। দিন দিন নির্যাতনের পরিমাণ বাড়তে থাকায় দুই বার তাকে ডির্ভোস দেই। শেষ পর্যন্ত আমাকে ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে হয়রানি করে। ডির্ভোস তুলে নিলে মামলা তুলে নেবে এমন শর্তও দেওয়া হয়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে অপকর্ম করতে সহযোগিতা করত। একটা পর্যায়ে সমঝোতা করি। মামলা তুলে নেয়। প্রথম ডিভোর্সের পর কিছুদিন ভালো গেলেও দ্বিতীয়বার ডির্ভোস দিলে আমাকে আটকানোর জন্য এই মিথ্যা মামলা দিয়ে মান-সম্মান সব শেষ করে দেয়। ওর কথা ছিল আমাকে এমন ভাবে পচানো হবে যাতে ভবিষ্যতে আর কাজ করতে না পারি। কাউকে মুখ দেখাতে না পারি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ডিবি হারুনকে দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করায়। ওর থেকে হারুন ভালো টাকা নিয়েছে। দেড় মাস জেলে থাকার পর ডির্ভোস দিতে পারব না সেই শর্তে জামিন করায়। পরিবারের কথা চিন্তা করে এই শর্তে রাজি হই।’
জুয়েলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে রোমানা স্বর্ণা বলেন, ‘আমাদের ডিভোর্স চলাকালীন বাসায় এসে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে জড়ায়। যা এককথায় ধর্ষণ। দেড় বছর গৃহবন্দি করে রাখে। সারাক্ষণ সন্তান পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দিতো। পরিবারের কথা ভেবে সবকিছু মুখ বুঝে এতদিন সহ্য করেছি। জামিনে বেরিয়ে আসার পর জুয়েল সৌদি যায়। আমি তখনো গৃহবন্দি। দেড় বছরের মতো এভাবে ছিলাম। তখন তার প্রথম স্ত্রীও ওখানে যায়। তখন আমাদের যোগাযোগ একটু কম হতো। সেই সুযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদন করে আমি সেখানে চলে আসি। তার আগে পড়াশোনার জন্য ছেলেকে পাঠাই। সেখানে গিয়ে তাকে জানাই আমি দেশে নেই। এরপর থেকে আমাদের দূরত্ব।’
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন তাকে সহযোগিতা করত? উত্তরে রোমানা বলেন, ‘সে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলত। সেই টাকা জুয়েলের মাধ্যমে সৌদি পাচার করত। এসব কথা আমাকে বলেছিল যখন সম্পর্ক ভালো ছিল। তার কাছে অনেক মেয়ে পাঠাত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবৈধ কাজে সহযোগিতা করত। বিনিময় পেত মোটা অংকের টাকা। জুয়েল হুন্ডির ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।’
স্বর্ণা জানিয়েছেন প্রথম বিয়ের পর জুয়েলকে বিয়ে করেন। তবে তার নামে মামলা সহ ২৮টি বিয়ে করার কথাও রটানো হয়েছে। যা ভিত্তিহীন। তাকে সম্মানহানি করার জন্যই করেছেন বলে তার দাবি। স্বামীর নির্যাতনের কথা অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবগত করলেও সাড়া পাননি বলে জানান এই অভিনেত্রী।
দ্বিতীয় স্বামীর বিরুদ্ধে এই অভিনেত্রীর পাহাড় সমান অভিযোগ থাকলেও এখনো তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি। যার জন্য আজ তিনি ভিনদেশে। সবাইকে জানিয়ে অচিরেই ডির্ভোস লেটার পাঠাবেন বলে জানান। তবে কবে নাগাদ ডির্ভোস লেটার পাঠাবেন এবং আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে আগাম জানাতে চাননি তিনি। এই অভিযোগ নিয়ে তার স্বামীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিদেশের মাটিতে থাকলেও স্বর্ণার মন পড়ে আছে দেশে। মিস করেন লাইট, ক্যামেরা ও অ্যাকশন। আর কাঁদতে চান না তিনি। সবকিছু ভুলে নতুন শুরুর অপেক্ষায় রোমানা স্বর্ণা। ভালো গল্প ও চরিত্রে পেলে ফিরতে চান কাজে।
রোমানা স্বর্ণা অভিনীত সর্বশেষে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘পদ্ম পাতার জল’ ও‘রান আউট। ২০১৫ সালে সিনেমা দুটি মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করে দর্শকের নজরও কেড়ে ছিলেন এই অভিনেত্রী। তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘আউট অব দ্য বক্স’।
আপনার মতামত লিখুন :