ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সালমান শাহ: চার বছরে সাতাশ সিনেমার নায়ক

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৪, ০১:০৪ পিএম

সালমান শাহ: চার বছরে সাতাশ সিনেমার নায়ক

সালমান শাহ। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সালমান শাহ। তার কথা ইতিহাসে লিখতে হলে এক কথায় লিখতে হবে আসলেন এবং জয় করলেন। তার জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ই সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায়। সালমান শাহ পড়াশোনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন।

১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) থেকে বি.কম. পাস করেন।

১৯৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় ‘কথার কথা’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচার হতো। এর কোনও একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফ সংকেতের কণ্ঠে গাওয়া এই মিউজিক ভিডিওতে মডেল হওয়ার মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম সবার নজর কাড়েন।

তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। প্রয়াত নাট্যজন আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় ‘পাথর সময়’ ধারাবাহিক নাটকে একটি ছোট চরিত্র এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন। গায়ক হিসেবেও সালমানের পরিচিতি ছিল। ছোটবেলা থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল তার। বন্ধু মহলে সবাই তাকে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চিনতেন। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লী গীতিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট সাবেক ক্রিকেটার শফিকুল হক হিরার কন্যা সামিরার সঙ্গে বিয়ে হয় সালমানের।

রুপালি পর্দায় সালমান সাম্রাজ্যের সূচনা হয় নব্বই দশকের শুরুর দিকে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে। মাত্র চার বছরে ২৭টি সিনেমা করেন তিনি।

সব শ্রেণির দর্শক-সমালোচকদের মন জয় করে তারকা হওয়ার জন্য সময়টা যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে প্রায় দশটি অসমাপ্ত সিনেমা। প্রথম সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন সোহানুর রহমান সোহান। এটি আমির খান-জুহি চাওলা জুটির সুপারহিট হিন্দি চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’র অফিসিয়াল পুনঃনির্মাণ। এটি মৌসুমী ও সালমান শাহ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র।

সালমান শাহর মতো এতটা জায়গা নায়করাজ রাজ্জাক পরবর্তী সময়ে কেউ নিতে পারেননি। হয়ত অল্প সময়ের জন্য এসেছিলেন বলেই এত দ্যুতি ছড়াতে পেরেছিলেন, কেটে গেছেন দাগ। যে দাগটা তার প্রস্থানের টানা ২৮ বছর পরেও এতটা জ্বলজ্বলে। তার অনুপস্থিতি আর অকাল প্রস্থান আজও পোড়াচ্ছে অগুনতি মানুষের মন।

বাংলা চলচ্চিত্রের নক্ষত্র সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের আজকের দিনে (৬ সেপ্টেম্বর) পৃথিবী ছেড়ে চলে যান এই জনপ্রিয় নায়ক। রেখে যান অগণিত ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী। মাত্র ২৫ বছরের জীবন। ক্ষণজন্মা অথচ কী বিস্তৃত প্রভাব। তখনও যেমন ততোধিক উজ্জ্বল এখনও। সালমান শাহ-পরবর্তী সময়ে যারা চলচ্চিত্রে নায়ক হওয়ার জন্য এসেছেন তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, এখনও সালমান শাহ-ই তাদের অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস। সালমানকে দেখেই তারা নায়ক হতে এসেছেন।

মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে জনপ্রিয়তার শীর্ষস্থান দখল করেছিলেন তিনি। রহস্যজনক মৃত্যুর এত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো জানা সম্ভব হয়নি এর আসল কারণ। তার মৃত্যু আজও ভক্তদের মনে বিষাদ ছড়ায়, আজও তারা জানতে চান, নায়কের সেই প্রস্থান কি আসলেই ছিল আত্মহত্যা? নাকি পরিকল্পিত খুন?

রূপালী বাংলাদেশ/রুআ

Link copied!